তিন মাসের বকেয়া বেতন দিয়ে কর্মীকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে কেড়ে নিয়েছেন বেসরকারি সংস্থা ইলেকট্রন টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের আলীনগর রেলবস্তি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন ইলেকট্রন টেকনোলজিস লিমিটেডের সুপারভাইজার শাহরিয়ার ইমন সোহেল (২৪)। তিনি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার নিমদীঘি গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই দিন রাতেই তাকে আধুনিক সদর হাসপাতালে নেন স্থানীয়রা। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন চিকিৎসক। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. শরিফুল ইসলাম বলেন, বাম হাতের কনুই ও কবজির মাঝামাঝি স্থানে ভেঙে গেছে। মাথায় একাধিক স্থানে গুরুতর ক্ষত রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তির পরই তাকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে, এই ঘটনায় গত মঙ্গলবার (০৭ ডিসেম্বর) চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন আহত সোহেলের ভাই ফেরদৌস সিদ্দিকী। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ইলেকট্রন টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার জুম্মাহাট রাজবল্লভ এলাকার হামিদুর রহমানকে (২৫)।
অন্য আসামিরা হলেন- ইলেকট্রেন কর্মী আলীনগর প্রান্তিকপাড়া এলাকার কাসেমের ছেলে আল আমীন (২১), রাজশাহীর বায়া এলাকার হেলাল (২৫) ও একই এলাকার বনি(২৪)। এই মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সিনজেট স্টার টেকনোলসিজ কোম্পানী লিমিটেডের হয়ে নেসকোর প্রিপেইড মিটার সংযোজন কাজ করছিল আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রেন টেকনোলজিস লিমিটেড।
সেখানে সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্বপালন করিছলেন শাহরিয়ার ইমন সোহেল। সোহেল এবং তার ইউনিটের তিন মাসের বেতন-বিল বেকেয়া রেখেছিলেন ব্যবস্থাপক হামিদুর রহমান। চাইলেই নানারকম তালবাহানা শুরু করেন।
মামলার বাদী সাংবাদিক ফেরদৌস সিদ্দিকী বলেন, ৬ ডিসেম্বর বকেয়া বেতন দেওয়ার নাম করে সোহেলকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডেকে নেন হামিদুর। নিজ এলাকার বাসিন্দা ও ইলেকট্রন কর্মী রহমত আলীকে সাথে নিয়ে পাওনা টাকা নিতে যান সোহেল। দিনভর কৌশলে বসিয়ে রেখে সন্ধ্যায় ২০ হাজার ৭০০ টাকা দেন হামিদুর।
বাকি টাকা পরে দেয়ার আশ্বাস দেন। টাকা নিয়ে ফেরার পথে হামিদুর রহমানের নেতৃত্বে শাহরিয়ার ইমন সোহেলের ওপর হামলা হয়। পেছন থেকে তার মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে সন্ত্রাসীরা। পড়ে যাবার পর ইট দিয়ে তার বাম হাত থেঁতলে দেয়। সঙ্গে থাকা মোট ৩০ হাজার ৭০০ টাকা ছিনিয়ে নেন হামিদুর। পরে অচেতন সোহেলকে অটোরিকশায় তুলে গুম করার নির্দেশ দেন বলে বাদী জানান।
তিনি আরও বলেন, হামিদুলের লোকজন সোহেলকে অটোরিকশায় তোলার চেষ্টা করলে প্রতিবেশীরা টের পেয়ে তাদের আটকে দেন। প্রতিবেশীদের একজন মনোয়ারা বেগম। তিনি জানান, অচেতনে অবস্থায় সোহেলকে হামিদুলের লোকজন অটোরিকশায় তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এলাকার লোকজনকে সাথে নিয়ে বাধা দেন। একপর্যায়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যাওবার চেষ্টা করেন। কিন্তু এলাকার লোকজন তখনও তাদের আটকে দেন।
এলাকাবাসীর জেরার মুখে হামলার শিকার সোহেলকে নিজের ভাই পরিচয় দেন হামিদুর। কিন্তু পরে সেটিও মিথ্যে প্রমাণিত হয়। ওই নারী জানান, তিনি, মেয়ে এবং প্রতিবেশী জিয়ানুর রহমানসহ আহত সোহেলকে নিয়ে সদর হাসপাতালে যান। বাধ্য করেন হামিদুরকে সাথে যেতেও। পরে হামলাকারীরা আরও তিন-চারজন হাসপাতালে যায়। সোহেলের মোবাইল থেকে তার মেয়ে সোহেলের স্বজনকে বিষয়টি জানান। পরে তার স্বজনরা হাসপাতালে পৌঁছান।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হামিদুুর রহমান দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এনে ওই বাড়িতে রাখতেন। বেতন বকেয়া রাখতেন। পাওনা টাকা চাইলে স্থানীয় সন্ত্রাসী আল আমিনকে দিয়ে বর্বর নির্যাতন চালাতেন। সম্প্রতি আরেক কর্মীকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যার চেষ্টা চালান হামিদুর। পরে ছিনতাইকারী বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।
বাড়িটির মালিক আলীনগর হাইস্কুল এলাকার বাসিন্দা ইসরাইল হক (৬৪)। তিনি জানান, বাড়িটি ভাড়া নিয়েছেন হামিদুর রহমান। তার নিয়মিত ভাড়াও দেন না। ২০ হাজার টাকা বকেয়া রেখেছেন। চাইলে সন্ত্রাসী দিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। এই ঘটনার পর তিনি বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন। তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনজেন স্টার ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার মুক্তাদির রহমান সৈকত বলেন, কাজ করা বা না করা এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে কর্মীদের মধ্যে একটি ঝামেলা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নেসকো-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল আজিম জানান, প্রিপেইড মিটার স্থাপন কাজগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। তাদরে সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কাজ বুঝিয়ে নেব আমরা। এই কাজে নিয়োজিত কর্মীদের মাঝে একটি ঝামেলা হয়েছে বলে শুনছি। তবে এনিয়ে আমাদের তেমন করণীয় তেমন কিছু নেই।