মহিউদ্দীন চৌধুরী, পটিয়া সংবাদদাতা, (পটিয়া) চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামের পটিয়ায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে রাত-দিন ফসলী জমি ও পাহাড় কেটে মাটি লুটে বিক্রি করে দিচ্ছে মাটি খেকোরা। কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না মাটি কাটা। প্রশাসনের গাফিলতির কারণে মাটি খেকো চক্রের সদস্যদের শাস্তির আওতায় না আনায় দিনের পর দিন কৃষি জমির টপসয়েল কাটার পাশাপাশি পাহাড় কেটে উজাড় করে দিচ্ছে চক্রের সদস্যরা।
সূত্রে জানা গেছে, পটিয়ায় থানা পুলিশ এর নাম ভাঙ্গিয়ে নুর আমিন প্রকাশ মোটা আমিন ও নুরু নামে দুই ব্যাক্তি ট্রাকপ্রতি ৪ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে।
একাধিকাবার এই বিষয়ে বিভিন্ন পত্র – পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও প্রশাসনের লোকজন জড়িত থাকায় এই মাটি কাটা বন্ধ করা যাচ্ছেনা। স্থানীয়রা এই মাটি কাটা বন্ধের দাবি জানালে বিভিন্ন ভাবে হয়রানির শিখার হচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
সরেজমীন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার হাইদগাঁও মল্লপাড়া গ্রাম, সাতগাছিয়া দরবার সংলগ্ন পাহাড়, ধলঘাট ইউনিয়নের গৈড়লা গ্রাম, খরনা ইউনিয়ন, কচুয়াই শ্রীমাই, কেলিশহরের গুচ্ছ গ্রাম, কিল্লা পাড়া, ছত্তরপেটুয়া এলাকা সহ উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে রাতের আঁধারে কৃষি জমির টপসয়েল ও পাহাড় কেটে সমতল করে দিচ্ছেন মাটি খেকোরা।
এছাড়া কেউ বাধা দিতে আসলে তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখা, মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ভয়ভীতিও প্রদর্শণ করার অভিযোগও আছে। স্থানীয়রা জানান, শুষ্ক মৌসুম আসলেই বেপরোয়া হয়ে উঠে মাটি খেকোরা। কৃষি জমির ক্ষতিসাধন করে পরিবেশেরে ভারসাম্য নষ্ট করলেও প্রশাসন কার্যকরী ভূমিকা না রাখায় তাদের দমানো যায়না।
এ-বিষয়ে চক্রের অন্যতম এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মোটা আমিন, টোকেন নুরু ও মোটা আমিনকে ম্যানেজ করে আমাদের মাটি কাটার কাজ করতে হয়।
মানবাধিকার ও পরিবেশ আইনজীবী জাফর হায়দার বলেন, ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনে টপসয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এ আইনে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হযেছে। চট্টগ্রাম পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের নেতা সাংবাদিক আলিউর রহমান বলেন, ‘কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলায় এর উর্বরতা হারিয়ে যায়। অন্যদিকে পাহাড় কেটে সমতল করে দেওয়ার ফলে পাহাড়ি গাছ কমে যাওয়ায় জলবায়ুর উপর চরম প্রভাব পড়ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কল্পনা রহমান জানান, জমিতে ভালো ফসল উৎপাদনের উপযোগী হলো উপরিভাগের মাটি। ওই মাটি প্রতিনিয়ত কেটে ফেলার কারণে জমির উর্বরতা শক্তি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। অপর দিকে পাহাড় কেটে সমতল করে দেওয়ার ফলে পরিবেশেরও চরম বিপর্যয় হচ্ছে। জমির উপরিভাগের মাটি একবার কেটে নিয়ে গেলে তা পূরণ হতে ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগে।
এই বিষয়ে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানুর রহমান জানান, পটিয়ায় মাটি কাটার চরম প্রবনতা চরম আকার ধারণ করেছে। যেখানে যেখানে মাটি কাটার খবর পেয়েছি সেখানে অভিযান পরিচালনা করে জেল জরিমানা করেছি। তিনি জানান, মাটি কাটার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওসি পটিয়াকে বলেছি। কোথাও কৃষি জমি ও পাহাড় কাটার খবর পেলে অভিযান পরিচালনা করা হবে।