অবশেষে ঘুচলো কাপ্তাইয়ের শীলছড়িতে বিশুদ্ধ পানির সংকট। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়ন এর ৯ নং ওয়ার্ডের শিলছড়ি এলাকা। কাপ্তাই উপজেলা সদর হতে মাত্র ২ কিঃ মিঃ পূর্বে গেলে দেখা মিলবে শিলছড়ি বাজার। তার পাশে চেয়ারম্যান পাড়া এবং ভেলাপা পাড়া। বাজারের পাশে রয়েছে শিলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার অফিস।
শিলছড়ি বাজার, ভেলাপা পাড়া এবং চেয়ারম্যান পাড়ায় প্রায় ১ শত ৭০ পরিবারের বসবাস এখানে আছে কিছু দোকানপাট। পাহাড়ি আর বাঙালী মিলে প্রায় ৫শত ৫০ জন লোকের বসবাস এই এলাকায় । এইখানে আছে পরস্পরের প্রতি পরস্পরের ভ্রাতৃত্ববোধ, আছে সম্প্রীতি। যে ধর্মের লোকদের উৎসব পার্বন হউক না কেনো সকলেই আনন্দচিত্তে অংশ নেয় এই উৎসব গুলোতে।
কিন্ত স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও এই এলাকার বাসিন্দারা কখনো পাননি বিশুদ্ধ পানি। নদীর কিংবা ছড়ার পানি পান করে তাঁরা এতদিন পানির চাহিদা মেটাতো। তাই নানা প্রকার রোগ বালাই লেগে থাকতো এই এলাকার শিশু যুবক থেকে শুরু করে নানা বয়সী লোকদের। আর যারা সামর্থ্যবান তারা ২ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে রিক্সা, সিএনজি কিংবা ভ্যানে করে পাশ্ববর্তী বিজিবি ক্যাম্প হতে পানি সংগ্রহ করতো।
এই শিলছড়ি এলাকায় বেশ কিছু রিং ওয়েল ছিলো। কিন্ত এই এলাকায় পানির স্বর অনেক নীচে হবার কারনে এই রিং ওয়েল দিয়ে পানি উঠতো না, ফলে বছরের পর বছর নষ্ট হয়ে আছে এই রিং ওয়েল গুলো। ফলে এই নিয়ে এলাকাবাসী কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দারস্ত হন। আবার এই নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ফলে টনক নড়ে উপজেলা প্রশাসনের। এই এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকটে এগিয়ে আসেন কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
অবশেষে শিলছড়ি এলাকার শিলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখে গত জুনে কাজ শুরু করা হয় ন্যানো ফিল্টারের । সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভূ- উপরিস্থ পানি পরিশোধনের মাধ্যমে রাঙামাটি, বাগেরহাট এবং ফরিদপুর জেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় চলতি জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে কাপ্তাইয়ের শিলছড়িতে ন্যানো ফিল্টার নির্মাণের কাজ শেষ হয়।
পাশ্ববর্তী কর্ণফুলি নদী হতে পানি বিশুদ্ধকরনের মাধ্যমে এই শিলছড়ি বাজার এলাকার ৭০ টি পরিবারকে ন্যানো ফিল্টারের মাধ্যমে এই সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
২ হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই ন্যানো ফিল্টারের মাধ্যমে পাশ্ববর্তী শিলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরাও এই বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারবেন বলে জানান ওয়াগ্গা ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহাবুব আলম। তিনি আরোও জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর হতে শিলছড়ি খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গায় ১৮০ ফুট গভীর নলকুপ গত জুনে স্থাপন করা হয়েছে, ফলে শিলছড়ি চেয়ারম্যান বাড়ী এবং ভেলাপা পাড়ার শত শত পরিবার এখন বিশুদ্ধ পানি পান করছেন। তিনি এলাকাবাসী পক্ষ হতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে কৃতজ্ঞতা জানান।
ওয়াগ্গা ইউনিয়ন এর ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মিনুপ্র মারমা এই প্রকল্প বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।
শিলছড়ি এলাকার বাসিন্দা মোঃ সরোয়ার হোসেন, সুবাইচিং মারমা, ন্যানচি মারমা, ডাঃ আবুল কাশেম, লিটন দাশ সহ অনেকে জানান, এই এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে তীব্র পানির সংকট দেখা দিতো। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমরা কখনোও বিশুদ্ধ পানির মুখ দেখি নাই। কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান এর আন্তরিকতায় আজ এই এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসন হয়েছে।
শিলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জগদীশ দাশ জানান, তাদের বিদ্যালয়ে ২শত ১০ জন ছাত্র ছাত্রী। এই ছাড়া শিক্ষকও আছেন। যখন স্কুল খোলা ছিল তখন পানির কি পরিমান কষ্ট করতে হয়েছে আমাদের। অনেকদূর হতে বিজিবি এবং আনসার ক্যাম্প হতে দপ্তরির মাধ্যমে আমরা পানি আনতাম। এইছাড়া প্রতিজন শিক্ষক নিজ উদ্যোগে বাসা হতে পানি আনতো। যখন স্কুল খুলবে তখন আমরা এর সুফল পাবো।
৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিরনজীত তনচংগ্যা জানান, এই প্রকল্প ২ টি বাস্তবায়নের ফলে এই এলাকার শত শত পরিবার বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি উপজেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
কাপ্তাই উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী লিমন চন্দ্র বর্মন বলেন, সরকারের মিনি ওয়াটার সারফেস ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পের আওতায় শিলছড়িতে এই ন্যানো ফিল্টার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয় এবং এইছাড়া ঐ এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকটে নিরসনে একটি নলকুপ স্থাপন করা হয়। ফলে দীর্ঘ দিনের পানির যে সংকট ছিলো এই এলাকায় তা দূরীভূত হলো।
গত মঙ্গলবার প্রকল্প দুইটি পরিদর্শনে গিয়ে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, পানির অপর নাম জীবন। আপনারা জানান, পাহাড়ি দূর্গম এলাকায় অনেক জায়গায় শুষ্ক মৌসুমে তীব্র পানির সংকট থাকে। এই শিলছড়ি এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে পানির সংকটে ভূগছেন বিষয়টি স্থানীয় সংবাদকর্মী এবং এলাকার জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টি গোচর হবার সাথে সাথে আমরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে এই এলাকায় ন্যানো ফিল্টার এবং গভীর নলকূপ স্হাপন করে বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসন করি। আশা করছি এই এলাকায় আর বিশুদ্ধ পানির সংকট থাকবে না।