মোঃ শহিদুল ইসলাম স্টাফ রিপোর্টার (রাঙামাটি)
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: সারাদেশে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ, ছিনতাই ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে রাঙামাটিতে এক বিশাল মানববন্ধন, প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থী, সমাজসেবক ও সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই কর্মসূচি এক দৃঢ় প্রতিবাদের রূপ নেয়।
প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রথম পর্বে সকাল ১১:৩০ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন হাতে নিয়ে ধর্ষণ, ছিনতাই ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানান। এরপর একটি বিশাল মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বনরূপায় এসে দুপুর ১২:০০ টায় শেষ হয়। কর্মসূচি শেষে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়, যা গ্রহণ করেন নাবিল নওরোজ বৈশাখ, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত শাখা, পারমিট শাখা)।
মানববন্ধন ও সমাবেশ বিশিষ্ট সমাজসেবক এবং ছাত্র উপদেষ্টা মোঃ কামাল উদ্দিন এর সভাপতিত্বে এবং রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ এর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মোঃ শহিদুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় পরিচালিত হয়। উপস্থিত বক্তারা বর্তমান পরিস্থিতির তীব্র নিন্দা জানান এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
তানজিনা আক্তার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ (অনার্স ২য় বর্ষ): “আমরা কি এমন সমাজ চেয়েছিলাম, যেখানে প্রতিদিন নারীরা ধর্ষণের শিকার হবে, মানুষ রাস্তায় বের হতে ভয় পাবে? এই নৃশংসতার অবসান ঘটাতে হলে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই দ্রুত বিচার, আমরা চাই নিরাপদ বাংলাদেশ।”
দিপ্ত চাকমা, এইচএসসি ২০২৪: “ছাত্র-ছাত্রীরা আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত নিরাপদ নয়। রাস্তায় বের হলেই ছিনতাই, সন্ত্রাস আর সহিংসতার ভয়। আমরা কি এমন দেশ চেয়েছিলাম? প্রশাসন যদি এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তবে এই অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে।”
হোসাইন মল্লিক, ইংরেজি বিভাগ (অনার্স ৩য় বর্ষ): “যেখানে আইনের শাসন নেই, সেখানে অপরাধীরা আরও সাহসী হয়ে ওঠে। ধর্ষকদের কঠোর সাজা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা সমাজের জন্য ভয় পায়, সমাজ তাদের ভয় না পায়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে।”
মোঃ সাইমুন ইসলাম, ব্যবস্থাপনা বিভাগ (অনার্স ৩য় বর্ষ): “নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রশাসনের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। প্রতিটি নারী যেন নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারে, সে জন্য সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে আওয়াজ তুলতে হবে।”
মোঃ ইমাম হোসেন, গণিত বিভাগ (অনার্স ৩য় বর্ষ): “ধর্ষকদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের অপরাধীরা জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসলে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। আমরা চাই, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হোক এবং এটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হোক।”
ওয়াহিদুজ্জামান রোমান, গণিত বিভাগ (অনার্স ৪র্থ বর্ষ): “আজ আমরা কেন রাস্তায়? কারণ আমাদের নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধর্ষণ, ছিনতাই আর খুনের ঘটনা ঘটছে। প্রশাসন যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তবে সাধারণ মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে।”
জুঁই চাকমা, বিশিষ্ট সমাজসেবক: “নারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হলে পরিবার থেকেই নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। কিন্তু শুধু তা-ই যথেষ্ট নয়, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কেউ এমন নৃশংস কাজ করতে সাহস না পায়।”
মোঃ কামাল উদ্দিন, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ছাত্র উপদেষ্টা: “আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করে, সাধারণ জনগণ আর চুপ থাকবে না। প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করা হবে। আমরা চাই নিরাপদ সমাজ, ধর্ষণমুক্ত বাংলাদেশ।”
স্মারকলিপি প্রদান
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়, যেখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরা হয়—
ধর্ষকদের দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন ও অফিস-আদালতে নারীদের নিরাপত্তা জোরদার করা।
ছিনতাই ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা।
মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমকে আরও জোরদার করা।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এই প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে রাঙামাটির সাধারণ ছাত্র-জনতা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা কোনোভাবেই ধর্ষণ, ছিনতাই ও সন্ত্রাস মেনে নেবে না। বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, প্রশাসন যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তবে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ আরও বড় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকবে।
সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়— অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, ন্যায়ের পক্ষে থাকুন। আমরা চাই ধর্ষণমুক্ত, নিরাপদ বাংলাদেশ।