আফগানিস্তান ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য সব সময়ই ফুটবলের পেনাল্টির মতো। জিতলে কেউ গা করবে না, হারলে সর্বনাশ। সেই ম্যাচটাই কিনা এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম! তারওপর যেখানে তামিম ইকবালকে বাদ দিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়ায় বাংলাদেশ দলের চাপটা আরও বেশি ছিল। না জিতলে যে বাড়তি সমালোচনাই হতো।
সব চাপ অনায়াসেই জিতে গেল বাংলাদেশ। ধর্মশালায় আজ আফগানিস্তানকে ১৫৬ রানে অলআউট করেই বাংলাদেশের জয় প্রায় নিশ্চিত করে রেখেছিলেন বোলাররা, ব্যাটিংয়ে লিটন-তানজিদ না পারলেও মেহেদি হাসান মিরাজ আর নাজমুল হোসেন শান্তর দুই ফিফটিতে ৬ উইকেট আর ৯২ বল হাতে রেখে জিতে গেল বাংলাদেশ।
যে ম্যাচ হতে পারত পঁচা শামুক, সে ম্যাচেই বিশাল ব্যবধানে জিতে রানরেট অনেক এগিয়ে রাখল বাংলাদেশ। এক ম্যাচ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আর চাইতে পারতেন না অধিনায়ক সাকিব আল হাসান! হয়তো এতটুকুই চাইতেন যে, শেষ দিকে হুট করে দুটি উইকেট পড়ে না গেলে জয়টা আরও বড় ব্যবধানের, আরও আগে আসতে পারত।
ধর্মশালার মাঠ আয়তনে ছোট, টি-টোয়েন্টির এই যুগে সেখানে ১৫৭ রানের লক্ষ্য তো হাতের মোয়া! বাংলাদেশ অবশ্য শুরুতে ধুঁকেছে। অযথা রান নিতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা তানজিদ তামিম। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে স্ট্রাইকে থাকা লিটনের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে তিনি যখন আউট হচ্ছেন, দলের রান ১৯, তানজিদের নামের পাশে তখন ১৩ বলে ৫ রান।
এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরাজকেই লিটনের সঙ্গে নামিয়ে দেয়া হয়েছিল, এ ম্যাচে তা না করার কারণ হয়তো প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ দুটি ইনিংস খেলা, বিশ্বকাপে প্রথম নামা তানজিদকে তাঁর প্রতি দলের বিশ্বাস উপলব্ধি করানো। তবু ‘সিনিয়র তামিম’ অর্থাৎ, তামিম ইকবাল আফগানিস্তানের ফজলহক ফারুকি এবং অফ স্পিনার মুজিব উর রহমানের বিপক্ষে ভোগেন বলেই তাঁকে এই ম্যাচে না খেলা কিংবা খেললেও নিচে ব্যাটিংয়ে নামার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন তামিম, যা থেকে গোলমালের শেষে বিশ্বকাপ দলেই আর নেই তামিম। সেই ফারুকি কিংবা মুজিবদের সামনে আরেক বাঁহাতি তানজিদকে নামিয়ে দেয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অযৌক্তিক নয়।
তবে তানজিদ তামিম আজ কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়া বা কোনো যুক্তি খন্ডনের আগেই রানআউট হয়ে গেছেন।
এরপর লিটনের পালা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং তাঁর – সেই লিটন ফর্মহীনতা টেনে নিয়ে গেলেন আরেকটি ম্যাচ। তানজিদ ফেরার ১৫ বল পরই বোল্ড লিটন। সেটিও কীভাবে? ফারুকির বল থার্ডম্যানে পাঠাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে বলের ওপর থেকে চোখ সরে যায় লিটনের, বল তাঁর ব্যাটের নিচের দিকের অংশে লেগে স্টাম্পে আঘাত হানে। ১৮ বলে ২ চারে ১৩ রান করে আউট লিটন, দলের রান তখনো ২৭।
এরপর? আফগানিস্তান এবং মিরাজ-শান্তর গল্প। এশিয়া কাপে দুজনের সেঞ্চুরিই বাংলাদেশকে জিতিয়েছে, আজ আর সেঞ্চুরি করার সুযোগই ছিল না। ১৫৬ রানের লক্ষ্যে আর সেঞ্চুরি কে করবেন! তবে দুজন ফিফটি পেয়েছেন, মিরাজ আউট হওয়ার আগে তৃতীয় উইকেট দুজনের ৯৭ রানের জুটিই জয় নিশ্চিত করে দিয়েছে বাংলাদেশের।
জুটিতে মিরাজই বেশি আগ্রাসী ছিলেন। বেশি ভাগ্যবানও। দুবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচেছেন, একবার আম্পায়ার এলবিডাব্লিউ দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচেছেন। ফিফটি পূর্ণ করেছেন ৫৮ বলে, ৪ চারে। তার আগেই অবশ্য বাংলাদেশের ১০০ রান হয়ে গেছে।
কিন্তু এ দুজনই যখন বাংলাদেশকে জিতিয়ে দেবেন বলে মনে হচ্ছিল, নাভিন-উল-হকের বলে মিড অফে রহমত শাহর চোখধাঁধানো ক্যাচের শিকার হয়ে ফিরলেন মিরাজ। তার আগে ৭৩ বলে ৫ চারে ৫৭ রানে মিরাজ আরেকবার বুঝিয়ে দিলেন, পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার পথে দ্রুতগতিতেই এগোচ্ছেন তিনি।
আর শান্ত? সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান আজ আরেকবার বাংলাদেশের ত্রাতা। শেষ পর্যন্ত দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন, তার আগে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন ৮৩ বলে ৩ চারের পাশাপাশি বাংলাদেশের ইনিংসের একমাত্র ছক্কায় ৫৯ রানে। মিরাজের সঙ্গে জুটিতে তিনিই রয়েসয়ে খেলেছেন, সে কারণেই ফিফটিতে পৌঁছাতে ৮০ বল লেগেছে তাঁর।
তবে দুজনের জুটির পর মিরাজ আউট হয়ে যাওয়াতে বাংলাদেশের জিততে একটু সময় বেশি লেগেছে, এই যা! মাঝে সাকিবও এসেই আউট হয়ে গেলেন ১৯ বলে ১৪ রান করে। মুশফিক নেমে ৩ বলে ২ রান করতে পারলেন, তারপর ওদিকে টানা দুই মিসফিল্ডিংয়ে শান্তর টানা দুই চারে জয় নিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের।