শেষ গেইট হিসেবে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। পেরোতে পারলেই কেল্লাফতে। দুবাই থেকে যাত্রীবেশে বহন করে আনা সোনার বার ও স্বর্ণালঙ্কার ঢুকে পড়বে দেশে, যার মূল্যমান ৩০ লাখ টাকা। কড়াকড়ি এড়াতে বিমানবন্দরেরই হেল্প সার্ভিসের স্টাফের সাথে ১৫০০০ টাকায় রফা হলো। সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। যাত্রীবেশে সোনা পাচারকারী ও তার সহায়ক বিমানবন্দরের স্টাফ দুজনই এপিবিএনের হাতে বমাল ধরা পড়লেন।
ঘটনাটি মঙ্গলবার বেলা ১১টার। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৫০০০ টাকার বিনিময়ে সোনা পাচারের চেষ্টাকালে তিনটি গোল্ডবার এবং ৯৯ গ্রাম স্বর্ণালংকারসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। কাস্টমস গ্রিন চ্যানেল পার হওয়ার পর বিমানবন্দরের হেল্প সার্ভিস প্রোভাইডার শুভেচ্ছা-এর স্টাফ মো. নাইমুর রহমান তন্ময় (২৬) ও যাত্রী মো. আলমগীরকে (৪৮) এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক জানান, সোনা আমদানিতে করহার বেড়ে যাওয়া এবং বৈধভাবে শুধু একটি গোল্ডবার ব্যাগেজ সুবিধায় বিনা করে আনার নিয়ম করার পর পাচারকারী চক্র নানা কৌশল অবলম্বন করছে। এমনই একটি কৌশল ছিল হেল্পলাইন স্টাফকে ব্যবহার।
কী সেই কৌশল? এপিবিএন বলছে, যাত্রী আলমগীর মঙ্গলবার সকালে দুবাই থেকে আগত এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় অবতরণ করেন। দুবাই থাকা অবস্থাতেই তিনি শুভেচ্ছা সার্ভিসের হেল্পার তন্ময়ের সাথে সোনা পাচারে সহযোগিতার বিনিময়ে ১৫০০০ টাকার ডিল করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী উড়োজাহাজ থেকে নেমে যাত্রী আলমগীর বেল্ট এরিয়ায় দাঁড়িয়ে তন্ময়ের সাথে যোগাযোগ করেন। হেল্পলাইন স্টাফ তন্ময় বেল্ট এরিয়ায় যাত্রীর কাছ থেকে তিনটি গোল্ডবার সংগ্রহ এবং যাত্রীর মালামালসহ গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করেন।
বিপত্তি বাধে এখানেই। এপিবিএন সদস্যরা সে সময় তন্ময়ের ওপর নজর রাখছিল। এপিবিএন জানায়, যাত্রীর কাছ থেকে গোপনে কিছু একটা গ্রহণ করে নিজের প্যান্টের পকেটে লুকিয়ে ফেলা তন্ময়কে এপিবিএনের সাদা পোশাকের গোয়েন্দা দল নজরে রাখছিল। বিমানবন্দরের কাস্টমস গ্রিন চ্যানেল পার হয়ে তিনি যখন বের হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে আটক করা হয়। এ সময় তিনি স্বীকার করেন যে, তাঁর কাছে সোনা রয়েছে। পরে তাঁর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে যাত্রী আলমগীরকেও আটক করে বিমানবন্দরে এপিবিএন কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এ সময় তাঁদের তল্লাশি করলে হেল্পলাইন স্টাফ তন্ময়ের কাছে তিনটি গোল্ডবার, যার ওজন ৩৪৮ গ্রাম এবং যাত্রী আলমগীরের কাছ থেকে ৯৯ গ্রাম স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে পরস্পর যোগসাজশে সোনা পাচারের পরিকল্পনার বিষয়টি তাঁরা স্বীকার করেন। উদ্ধার করা সোনার মোট ওজন ৪৪৭ গ্রাম, যার বাজারমূল্য ৩০ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক জানান, গ্রেপ্তার আলমগীর মুন্সীগঞ্জ এবং তন্ময় ঢাকার মিরপুরের অধিবাসী। তাঁদের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় মামলা করা হয়েছে।