নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২য় দফায় আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে লামা পৌরসভা নির্বাচন। নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছেন, যতই নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে প্রচার-প্রচারণা। একান্ত আলাপচারিতায় সাধারণ ভোটাররা জানান, যাকে দিয়ে একটি আধুনিক পৌরসভা গঠন করা সম্ভব হবে আমরা তাকেই সমর্থন দিব।
এদিকে, গত ২৯ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ সময় পেরিয়ে গেলে ও প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই পৌর এলাকায় দৃশ্যপট পাল্টে যায়। চায়ের দোকান, বাজার, অফিস-আদালত সর্বত্রে শুরু নির্বাচনী আলোচনা সমালোচনা করতে দেখা যায় ভোটারদেও। পাশাপাশি প্রার্থীরা কর্মী ও দলের লোকজন নিয়ে চালাচ্ছে নির্ঘুম প্রচারণা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় করছেন উঠান বৈঠক ও সভা। বসে নেই মহিলা সমর্থকরাও। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলা ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন।
উপজেলা নির্বাচন অফিসের সূত্রে জানা যায়, লামা পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো. শাহিন এবং জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী এ.টি.এম শহিদুল ইসলাম। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন। সমর্থক ও ভোটাররা জানান, বিগত ৫ বছর ও করোনাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন জহিরুল ইসলাম। দিয়েছেন বিভিন্ন সহায়তা। তাই তার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে তুঙ্গে। তবে লামা পৌর এলাকা বরাবরই বিএনপির দূর্গ হিসাবে পরিচিত। সেই বিবেচনায় ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থী মোঃ শাহীনকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই বলে বলছেন সুশীল সমাজ।
অন্যদিকে নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত সাবেক মেয়রকে মনোনয়ন না দিয়ে নবীন একজনকে সুযোগ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপি দুই গ্রুপে বিভক্ত লামা বিএনপি। জড়িয়ে পড়েছে পাল্টা অভিযোগ ও মামলা মোকাদ্দমায়। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, নির্বাচনকালীন সময়ে দলের এমন অবস্থা দেখে হতাশ সাধারণ ভোটাররা।
জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী এ.টি.এম শহিদুল ইসলামও বয়সে নবীন। ভোট পেতে গণসংযোগ অব্যাহত রেখে পুরোনোরা অতীতে এলাকায় যা উন্নয়ন করেছেন তার ফিরিস্তি তুলে ধরছেন তিনি। সঙ্গে নির্বাচনী ওয়াদা তো রয়েছেই।
সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বি বেশি হওয়ায় ও তিন ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের। ১নং ওয়ার্ডের প্রার্থীরা হলেন সাকেরা বেগম (আনারস), রোকেয়া খানম কেয়া (চশমা) ও শ্যামলী বিশ্বাস (জবা ফুল)। ২নং ওয়ার্ডের প্রার্থীরা হলেন জোসনা বেগম (আনারস) ও মরিয়ম বেগম (জবা ফুল)। ৩নং ওয়ার্ডের প্রার্থীরা হলেন মাজেদা বেগম (চশমা), জাহানারা বেগম (আনারস), রোজিনা আক্তার (অটোরিক্সা) ও মোছাম্মৎ সুমনা আক্তার (জবা ফুল)।
জানা যায়, ২৮.৪৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৩৮৯জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ হাজার ৩০০ জন ও মহিলা ভোটার ৬ হাজার ৩৮৬ জন। আসন্ন নির্বাচনে ৯টি কেন্দ্রে ৩৯টি বুথে ১৬ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১৪ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাবে।
নির্বাচনী মাঠ ঘুরে দেখা যায়, ভোট বাড়ানোর আশায় মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থীরা কর্মী সমর্থকদেও নিয়ে পৌষের কনকনে শীত উপেক্ষা করে পাহাড় নদী ডিঙ্গিয়ে যে যার মত মাঠে ঘাটে বাড়িতে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। বেলা দুইটার পর অটোরিক্সা, ইজিবাইক ও রিক্সায় মাইক বেঁধে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এদিকে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১নং ওয়ার্ডে স্বপন কুমার দে, মো. ফরিদ মিয়া, বশির আহমদ, ৩নং ওয়ার্ডে মো. সাইফুদ্দিন, মো. শাখাওয়াত হোসেন ও ওসমান গণি শিমুল, ৫নং ওয়ার্ডে আবদুস সালাম, মো. আবুল হোসেন, আলী আহমদ ও মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, ৬নং ওয়ার্ডে মমতাজুল ইসলাম, মো. ফজর আলী ও মো. জাকির হোসেন, ৭নং ওয়ার্ডে মো. সোহরাব হোসেন ও মো. কামাল উদ্দিন, ৮নং ওয়ার্ডে মো. ইউছুফ আলী, মো. জহির হোসেন, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. ইউছুফ ও মো. আলা উদ্দিন ও ৯নং ওয়ার্ডে মংএ মার্মা, মো. মঞ্জুর আলম, উশৈথোয়াই মার্মা ও মো. এরশাদ মিয়া জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। উল্লেখ্য, ২নং ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় মোহাম্মদ হোসেন বাদশা ও ৪নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ রফিক কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
পৌর নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার মো. রেজাউল করিম বলেন, ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।