দুইবছরের মাথায় সেন্টমার্টিন দ্বীপকে আবারও নিজেদের ভূমি দাবি করার সাহস দেখালো মিয়ানমার। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সেন্টমার্টিনকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশকে উসকানি দিল মিয়ানমার। এবার মিয়ানমারের একাধিক ওয়েবসাইটে সে দেশের ম্যাপে সেন্টমার্টিনকে নিজেদের অন্তর্গত দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাইট কোপর নিকাসে(https://www.copernicus.eu/en) দেখানো হচ্ছে বাংলাদেশের সীমানা ও ইকোনোমিক জুনের বাইরে অবস্থান এই প্রবাল দ্বীপের। এই কোপারনিকাস সাইটের স্লোগান ইউরোপের চোখে বিশ্বদর্শন। মানুষের তথ্য জানার অধিকারকে সম্মান দেখানোর কথা বলা হলেও এবার ভুল তথ্য উপস্থান করলো তারা। বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনকে তারা দেখাচ্ছে মিয়ানমারের ভূমি হিসেবে।
এদিকে, মিয়ানমার জনগণের তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সুইজারল্যান্ডের অর্থায়নে তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় ওয়ানম্যাপ মিয়ানমার প্রকল্প। গত কয়েক বছর এ সাইটটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও হঠাৎ সেটি অকার্যকর দেখাচ্ছে। বিষয়টি নজরে আসার পর মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৮ সালের অক্টোবরেও মিয়ামনার একই কাজ করেছিল। সে সময় রাষ্ট্রদূত উ লুইন ও’র হাতে একটি কূটনৈতিক চিঠি ধরিয়ে দেয় বাংলাদেশ। যাতে সেন্টমার্টিন যে বাংলাদেশের অংশ তার পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রমাণ রয়েছে।
পাশাপাশি ওই চিঠিতে মিয়ানমারের এমন আপত্তিকর কাজের জবাবও চাওয়া হয়। পরে বাংলাদেশের প্রতিবাদের পর জাতিসংঘে চিঠি দিয়ে ক্ষমা চায় মিয়ানমার। সেন্টমার্টিন ১৯ শতকেরও আগ থেকে তৎকালীন ভারতবর্ষ পরে পাকিস্তান এবং বর্তমানে বাংলাদেশের অংশ। কখনই এটি মিয়ানমারের অংশ ছিল না।
কোরাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন বা এর সাথে সংলগ্ন ছেঁড়াদ্বীপের মালিকানা নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কোনো অনিষ্পন্ন বিরোধ নেই। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে যে বিরোধ ছিল সেটি আন্তর্জাতিক আদালতে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে কয়েক বছর আগেই। আদালতের রায়ে দুই দেশের সমুদ্রসীমা স্পষ্ট করে টানা হয়েছে।
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের ভূখণ্ড টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটারের মতো দক্ষিণে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপটি স্থানীয়দের কাছে নারিকেল জিঞ্জিরা বা দারুচিনি দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। ২৫০ বছর আগে আরব নাবিকেরা প্রথম এ দ্বীপে বসবাস করেন। তারা এর নাম দেন ‘জাজিরা’। ব্রিটিশ শাসনের সময় এর নাম দেয়া হয় সেন্টমার্টিন দ্বীপ।
প্রায় ৫০০০ বছর আগে টেকনাফের মূল ভূমির অংশ ছিল জায়গাটি। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি সমুদ্রের নিচে চলে যায়। এরপর প্রায় ৪৫০ বছর আগে বর্তমান সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া জেগে ওঠে। এর ১০০ বছর উত্তর পাড়া এবং পরবর্তী ১০০ বছরের মধ্যে বাকি অংশ জেগে ওঠে।
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০০ সালে ভূমি জরিপের সময় এ দ্বীপটিকে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়। সে সময়টিতে বার্মা ব্রিটিশ শাসনের আওতায় ছিল। কিন্তু তারপরও সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বার্মার অন্তর্ভুক্ত না করে ব্রিটিশ-ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
এর আগে ১৮২৪ থেকে ১৮২৬ সালে ব্রিটিশদের সাথে বর্মী রাজার যে যুদ্ধ হয় তাতে বিতর্কের ইস্যুগুলোর মধ্যে এ দ্বীপের মালিকানাও একটি ছিল। সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন আট বর্গকিলোমিটারের মতো। এর সাথে সংলগ্ন ছেঁড়াদ্বীপটির মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল থেকে দূরত্ব মাত্র আট কিলোমিটার। ভাটির সময় দু’টি দ্বীপ এক হলেও জোয়ারের সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।