বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের পূর্ব-চাম্বি মুসলিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা অসাধারণ এক মনোরম পরিবেশে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। নেই কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থারও সমস্যা। তারপরও বিদ্যালয়টিতে ঠিকমতো শিক্ষক আসেন না। দেড় হাজার টাকায় ভাড়া করা একজন শিক্ষক দিয়েই ক্লাস চলছে এই বিদ্যালয়ে।
এলাকাবাসী জানান, কয়েক সপ্তাহ পরপর এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়টিতে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রুমানা আক্তার নামের একজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সংকোচহীন ভাবে বলেন, আমি শিক্ষক না। হেডস্যার আমাকে পড়াতে বলেছেন তাই পড়াচ্ছি। আমাকে দেড় হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। এখানে বর্তমানে একজন প্রধান শিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষক কর্মরত আছেন। তারা মাঝে-মধ্যে আসেন। তবে ক্লাসগুলো আমিই চালিয়ে যাই।
চোখ ফেরাতেই দেখা গেল শিক্ষার্থীদের। জিজ্ঞেস করলাম কোন ক্লাসে পড়? কয়েকজন বলল- পঞ্চম শ্রেণি, কয়েকজন বলল চতুর্থ এবং তৃতীয়। বুঝতে বাকি রইল না তিনটি ক্লাস একসঙ্গে পড়ানো হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিজা আক্তার ও রুনা আক্তার। তারা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের বললাম ইংরেজিতে ফাইভ বানান কর। কিন্তু দুইজনের একজনও পারল না। আবার চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করলাম। তাদেরও একই অবস্থা।
দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টি এভাবেই চলছে বলে জানালেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ ইসমাইল। এছাড়া বিদ্যালয়ের স্লিপ, রাজস্ব মেরামত, রুটিন ম্যান্টিনেস, প্রাক প্রাথমিক ও উন্নয়নের সকল বরাদ্দকৃত অর্থ কাগজে-কলমে দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
অনুপস্থিত শিক্ষকরা হচ্ছেন- ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গুলজার বেগম এবং অন্যজন হচ্ছেন সহকারী শিক্ষক রোকসানা জয়নাব মুক্তা।
প্রধান শিক্ষক গুলজার বেগমের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ তাই যেতে পারিনি।’ তবে উনার সহকারী শিক্ষক কেন যাননি সে ব্যাপারে তিনি জানেন না। খবর নিয়ে জানা যায় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক লামা আলিঙ্গন হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে ভর্তি আছে।
দেখা হয় দপ্তরি হাবিবুর রহমানের সঙ্গে; কিন্তু তিনি কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, করোনার পর থেকে এভাবেই চলছে বিদ্যালয়টি। আমরা কিছু বললে আমাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। এই স্কুলে পড়ালেখা হচ্ছে না বিধায় কেজি স্কুলে নিয়ে গেছে অনেক শিক্ষার্থী।
বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসার শফিউল আলম সাংবাদিককে বলেন, বিষয়টির সত্যতা পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এম/এস