• সোমবার, ০৩ মার্চ ২০২৫, ০৩:১৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম
বরকলে ছাত্র অধিকার পরিষদ’র ভূষণছড়া ইউনিয়ন কমিটি গঠিত প্রণোদনা ও আইন দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছেনা লামা-আলীকদমে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে তামাক চাষ রামগড় ৪৩ বিজিবির অভিযানে চারশ কার্টুন ভারতীয় সিগারেট জব্দ রামগড়ে জাতীয় ভোটার দিবস পালিত জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে কাপ্তাইয়ে র‍্যালি খাগড়াছড়িতে জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও আলোচনা অনুষ্ঠিত দীঘিনালায়  জাতীয় ভোটার দিবস পালিত পবিত্র রমজান মাসে বাজারে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে বাজার মনিটরিং করছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনায় মহালছড়িতে পালিত হলো জাতীয় ভোটার দিবস-২০২৫ আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে বাজারে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে বাজার মনিটরিং করছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত নবাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান’র দায়িত্ব গ্রহণের ৩ বছর পূর্তিতে খতমে কুরআন ও দোয়া মাহফিল পানছড়িতে ৩ বিজিবির বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ

প্রণোদনা ও আইন দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছেনা লামা-আলীকদমে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে তামাক চাষ

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান, বান্দরবানঃ / ৫৪ জন পড়েছেন
প্রকাশিত : রবিবার, ২ মার্চ, ২০২৫

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান, বান্দরবানঃ

বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলায় বিগত বছরের ন্যায় এবছরও দশ হাজার একর ফসলি জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। সরকারিভাবে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কৃষকদের প্রণোদনা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না ক্ষতিকর তামাকের আগ্রাসন। ফলে বিষবৃক্ষ তামাকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে পাহাড়ি এই দুই উপজেলা।

এদিকে তামাকের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ক্ষেতে পোকা দমনের জন্য ব্যবহার হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত সার ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কীটনাশক। সচেতন চাষীরা বলছেন, এর ফলে একদিকে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে; অপরদিকে উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা মাতামুহুরী নদীতে মাছ বিলুপ্ত হতে চলছে। কৃষকরা জানান, অধিক তামাক ফলনের আশায় চাষীরা রাসায়নিক সার ব্যবহার করে থাকেন। তামাক চাষে সাধারণ ফসলের চেয়ে আট গুণ বেশি সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এই সারের মধ্যে ইউরিয়া, ফসফেট, বোরণ, দস্তা, ম্যাঙ্গানিজ ও পটাসিয়াম সালফেট অন্যতম। সম্প্রতি তামাকের জমিতে আগাছা না জন্মানোর জন্য ব্যবহৃত বিশেষ আগাছানাশক। যা মাটির ব্যাপক ক্ষতি করে চলেছে। এসব ব্যবহারের ফলে মাটির উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো মরে গিয়ে মাটি ক্রমশ শক্ত হয়ে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এমওপির পরিবর্তে এসওপি (সালফেট অব পটাশ) মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ করছে। এরফলে ফসলি জমির মাটির মুখ্য এবং গৌন বিভিন্ন উপাদান নষ্ট হয়ে মাটি শক্তি হারাচ্ছে।

তামাক চাষি ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে লামা উপজেলার লামামুখ ও মেউলারচর এলাকায় প্রথমবারের মত ১০ একর জমিতে তামাক চাষ শুরু হয়। এরপর থেকে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে মাতামহুরী নদীর পলিবাহিত উর্বর এলাকা এবং জ্বালানি কাঠের সহজলভ্যতার কারণে তামাক চাষ গ্রাস করেছে লামা ও আলীকদমের বোরো-রবি মৌসুমের ফসলি জমি। ফসলি জমিতে একচেটিয়া তামাক চাষের বিরূপ প্রভাব পড়ছে বোরো ও রবি শস্য আবাদে। তামাকের আগ্রাসনের কারণে মাঠে তৈল বীজ জাতীয় ফসলের চাষ কমেছে। সবুজ ধানক্ষেতে এখন দোল খায় তামাকের উচ্চ ফলনশীল গাছের ডগা।

জানা গেছে, তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের বীজ, সার, কীটনাশক, পাওয়ার টিলার, পাওয়ার পাম্প, নগদ ঋণ-সর্বোপরি বাজারজাতকরণের সুবিধা প্রদানের শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার বিভিন্ন ফসলের ওপর কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। এরপরও ঠেকানো যাচ্ছে না ক্ষতিকর তামাক চাষ। তামাক চাষ বৃদ্ধিতে অন্যতম আরেকটি কারণ হিসাবে দেখা হচ্ছে কীটনাশক সারের সহজলভ্যতা। ফসলের জন্য সরকারের ভর্তুকি দেয়া হাজার হাজার টন সার বিসিআইসি ডিলাররা কালোবাজারি ও মুনাফা জন্য তামাকে ব্যবহারে সুযোগ দিচ্ছে।

লামা কৃষি বিভাগের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অভিজিত বড়ুয়া জানান, এবছর লামা উপজেলায় ১ হাজার ৬০০ জন কৃষককে বিভিন্ন ফসলের ওপর প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে সরিষা, চিনাবাদাম, পেঁয়াজ, ভুট্টা, পেলন, সূর্যমুখী, অড়হর ও বোরো হাইব্রিড ধান। এছাড়া কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ, বিভিন্ন ধরনের সার, পাওয়ার টিলার, সেচ যন্ত্র ও কীটনাশক ছিটানোর স্প্রে মেশিন প্রদান করা হয়েছে। আলীকদম কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, আলীকদমে কৃষি বিভাগ, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ১ হাজার ৭০০ কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

লামা পৌরসভার লামামুখ এলাকার কৃষক মালু মিয়া ও আলী মিয়া জানান, তরিতরকারি বা অন্যান্য ফসল উৎপাদন করলে তা বাজারজাত করার নিশ্চয়তা না থাকায় ন্যায্য মূল্য না পেয়ে লোকসান গুনতে হয়। তামাক চাষ করলে কোম্পানিগুলো নগদ এবং এককালীন মূল্যে উৎপাদিত শতভাগ তামাকই ক্রয় করে। এ কারণেই তারা তামাক চাষে ঝুঁকছেন।

লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুজ্জামান জানান, কৃষকদের উৎপাদিত তরিতরকারিসহ অন্যান্য পণ্যের বাজারজাতকরণে অনিশ্চয়তা, পক্ষান্তরে তামাক বাজারজাতকরণের শতভাগ নিশ্চয়তার কারণেই কৃষকরা তামাক চাষ করছেন। তবে আগের তুলনায় তামাক চাষ কিছুটা কমে আসছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ