শিক্ষা সম্প্রীতি সংগ্রাম মুক্তি এই স্লোগানে
আগামীদিনে বৈষম্য মুক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়তে আপামর ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে সংগ্রাম করার লক্ষ্যে নানিয়ারচর উপজেলা ও কলেজ শাখার কমিটি গঠনকল্পে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি আহ্বায়ক কমিটির উদ্যােগে আজ সকাল ১১.০০টায় মতবিনিময় সভা নানিয়ারচর উপজেলার সদরে অস্থায়ী অফিসে অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে দেড় শতাধিক এনজিওর মাধ্যমে কয়েক হাজার খানেক প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের কোনোটিতেই বাঙালী অধিবাসীরা সুযোগ পাচ্ছে না। বাঙালী জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে তা দেয়া হচ্ছে। রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলায় এনজিও গুলোর ২২৫টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৯টি ক্ষুদ্র প্রকল্প বাঙালী অধ্যুষিত এলাকায়।
পার্বত্য অঞ্চলের শহরের বাঙালীরা অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা সচ্ছল হলেও গ্রামের মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিশেষ করে বসতি ও চাষের জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা। তিন জেলাতে এরকম মোট ৮৬টি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। এগুলো ২৬ হাজার পরিবার পুনর্বাসন করা হয়। বর্তমানে পরিবারের সংখ্যা পাঁচ গুণ বাড়লেও রেশন কার্ড বাড়েনি একটিও।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নাগরিক পরিষদ রাঙামাটি জেলা সিঃ সহ-সভাপতি ও নানিয়ারচর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ নুরুজ্জামান হাওলাদার বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন পাহাড়ের বাঙালীরা। উপজাতি জনগোষ্ঠী করের আওতামুক্ত হলেও বাঙালীদের কর দিতে হচ্ছে। পাহাড়ি সংগঠনগুলোর আদায় করা চাঁদার ক্ষেত্রে বাঙালীদের কাছ থেকে অধিক হারে আদায় করা হয়।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সিঃ সহ- সভাপতি ও রাঙামাটি দশ উপজেলা কমিটি বাস্তবায়ন এর প্রধান সমন্বয়ক মোঃ হাবিব আজম বলেন, পার্বত্য অঞ্চলকে অনগ্রসর অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, চাকরি, উচ্চশিক্ষা বৃত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা রকম কোটা ও সুযোগ-সুবিধা চালু করেছে সরকার। তবে একই এলাকায় বসবাস করে এবং জনগোষ্ঠীর অর্ধেক হয়েও তা পাচ্ছেন না বাঙালীরা।
শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালীদের তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হচ্ছে। অবিলম্বে সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করে জনসংখ্যানুপাতে সকল সুযোগ-সুবিধা বণ্টন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে একজন বাঙালি প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান।
মেডিক্যাল, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য সকল উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে উপজাতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে ১৯৮৪ সাল থেকে। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর কোটার সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতি বছর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩২৫ জন উপজাতি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে কোটাতেই। নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এর সংখ্যা আরো বাড়ানো হয়েছে।
অন্য দিকে একই অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বাঙালীদের জন্য কোটা তো দূরে থাক তেমন কোনো সুযোগ এখনো তৈরি করা হয়নি। পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী দু’টি জনগোষ্ঠীর জন্য দুই রকম নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চ শিক্ষাবৃত্তিতে বাঙালিরা চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তাই আগামীতে উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা পরিষদ কর্তৃক শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে জনসংখ্যা অনুপাতে বাঙালী শিক্ষার্থীদের সমান ভাবে দিতে হবে।
মতবিনিময় সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ন আহ্বায়ক মোঃ নুরুল আবছারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মহিলা পরিষদের রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক ও নানিয়ারচর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আসমা মল্লিক, নাগরিক পরিষদ রাঙামাটি জেলা নেতা মোঃ আব্দুস সালাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক মোঃ তাজুল ইসলাম, রাঙামাটি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোঃ আমিনুল ইসলাম, নানিয়ারচর উপজেলা ছাত্র পরিষদ নেতা মেহরাজ ইসলাম সুজন প্রমুখ।
এম/এস