প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদযাপন শেষে জীবিকার তাগিদে কর্মস্থলগামী লাখো মানুষের ঢল নেমেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে। এছাড়াও মহাসড়কে রয়েছে ব্যক্তিগত ও যাত্রীবাহী যানবাহনের দীর্ঘ যানজট।
ফলে স্বস্তিতে ঘরে ফেরা মানুষগুলো ঈদের পর থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সহজেই কর্মস্থলে ফিরতে পারলেও শুক্রবার দিনগত রাত থেক কর্মস্থলগামী মানুষ পরেছেন চরম বিপাকে। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটে বাড়তি মানুষ ও যানবাহনের চাপে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় তৈরি হয়েছে ভয়াবহ যানজটের।
ঘাট সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন নদী পারাপার করার জন্য ২১টি ছোট বড় ফেরি ও ২২টি লঞ্চ চলাচল করছে।
সরেজমিন শনিবার (৭মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের খানখানাপুর ছোট ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ১১কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যাত্রীবাহী বাস ও বাইপাস সড়কের দৌলতদিয়া টার্মিনাল-হামিদ মৃধার হাট আঞ্চলিক সড়কের প্রায় ৩কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ব্যক্তিগত গাড়ির দীর্ঘ সারি রয়েছে। এ ছাড়াও প্রায় ১৪কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ী -কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গোয়ালন্দ মোড় এলাকার প্রায় ৩কিলোমিটার অংশজুড়ে অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক পারের অপেক্ষায় রয়েছে। এতেকরে প্রচন্ড গরমে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে কর্মস্থলে ফেরা মানুষগুলোর। দীর্ঘ ৮থেকে ৯ঘন্টা যানজটে আটকে থেকেও ফেরির নাগাল না পেয়ে অনেকেই পায়ে হেঁটে অথবা রিকশাযোগে ফেরি ঘাটের দিকে রওয়ানা হন অনেক যাত্রি। আবার ঘাটে পৌঁছার পর ফেরি লঞ্চের জন্যও অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যাত্রী ও যানবাহনের সারি আরও বড় হবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারনা।
মাগুরা থেকে আসা হানিফ পরিবহনের যাত্রী হোমায়ুন বলেন, গত রাতে ঘাটে এসেছি। বেলা ১টা বাজে এখনো ফেরিতে উঠতে পারিনি। প্রচন্ড গরমে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থেকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেবাগ্রীন লাইন পরিবহনের যাত্রী আরিফুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগে ঘাট পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল তাই শিশু সন্তানকে নিয়ে পরিবহনে করে ঘাটে এসেছি কিন্তু ঘাটের যা পরিস্থিতি তাতে কখন ফেরিতে উঠতে পারবো জানিনা। প্রচন্ড রোদ্রের তাপে সিরিয়ালে আটকে থেকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
লঞ্চযাত্রী গার্মেন্টসকর্মী রোকেয়া আক্তার বলেন, এমআর পরিবহনে করে ঘাটে এসেছি প্রায় ৮/৯ ঘন্টা অপেক্ষা করে ফেরি না পেয়ে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে লঞ্চঘাটে এসেছি এখানেও বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছি লঞ্চের আশায়। দেখা যাক কি হয়।
দৌলতদিয়া নৌ-পুলিশ ফাড়ির ওসি সৈয়দ মো.জাকির হোসেন পিপিএম বলেন, ঈদ শেষে মানুষ কর্মস্থলে ফিরছে আর এই কর্মে ফেরা মানুষ ও যানবাহনের চাপ পড়েছে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। ফেরি ঘাটের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বভাবিক রাখতে দৌলতদিয়া নৌপুলিশ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। আশা করছি আজকে সন্ধ্যার মধ্যেই ঘাট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যাবস্থাপক (বানিজ্য) মো. শিহাব উদ্দিন জানান, এই ঈদে যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন করতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ২১টি ফেরি চলাচল করছে। দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে প্রাইভেটকার ও যাত্রিবাহিবাস অগ্রাধীকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। তিনি দাবি করে আরো বলেন, ঘাট এলাকায় সিরিয়াল হলেও খুব বেশি সময় আটকে থাকতে হচ্ছে না। রুটে পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় কম সময়ের মধ্যেই যাত্রীবাহি যানবাহনগুলো পারাপার হতে পারছে।
এম/এস