দুর্গম পাহাড়ে গাছ টানতে আনা পালিত হাতি ‘আলী বাহাদুর’। দলছুট হয়ে উম্মাদ ও নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক। ইতিমধ্যে আক্রমন চালিয়ে কেড়ে নিয়েছে আনিসুর রহমান (৩০) নামে এক দিনমজুরের প্রাণ। তার হামলায় মোঃ নাছির নামে আরেকজন গুরুতর আহত হয়ে লামা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। একেরপর এক মানুষের বসতবাড়ি, ফসলের মাঠ ও বাগান ধ্বংস করে যাচ্ছে পালিত এই হাতির পালটি। অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠা আলী বাহাদুরকে কোন ভাবেই যেন নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছেনা। এতে করে আতংকে রয়েছে দুর্গম পাহাড়ের ১৭ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
জানা যায়, বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নে দুর্গম এলাকায় পাহাড়ে গাছ টানতে সিলেট মৌলভীবাজার থেকে ৩টি কোম্পানীর মাধ্যমে আনা হয়েছে ১৮টি পালিত হাতি। মোঃ আব্দুল মালেক (১৪টি), মিঃ ইসাচন্দ্র মাস্টার (২টি) ও মোঃ মনজুর (২টি) নামে তিন হাতির কোম্পানী এইসব হাতি গুলো নিয়ন্ত্রণ করে ও দৈনিক গাছ টানতে ভাড়া দেয়। কিন্তু হাতি গুলোর সঠিক পরিচর্যা ও নিয়ন্ত্রন না থাকায় স্থানীয় মানুষের ব্যাপক ক্ষতি করছে। পালিত হাতির পালের সবচেয়ে বড় পুরুষ হাতি আলী বাহাদুর দলছুট হয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে ও মানুষের ক্ষতি চলেছে। ১৮টি হাতি নিয়ন্ত্রনে ১৮ জন মাহুত (পরিচর্যাকারী) থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৬ জন।
সরজমিনে ঘুরে জানা যায়, ১৮টি হাতি থাকলেও বন বিভাগের পারমিট রয়েছে ৬টি হাতির। সারাদিন হাতি গুলোকে অমানবিক পরিশ্রম করানো হলেও তাদের খাওয়া দাওয়া ঠিকমত দেয়া হয়না। আঘাত পাওয়া হাতি গুলোকে কোন পরিচর্যাও করা হয়না। স্থানীয়রা জানায় গত ২ বছরের এই পালের ৩টি হাতি মারা গেছে। গর্ভবতী হাতি ও বাচ্চা হাতি দিয়েও গাছ টানানো হয়। উম্মাদ হাতি আলী বাহাদুর এর কারণে রূপসীপাড়া ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার চুমপুং হেডম্যান পাড়া, ছত্র পাড়া, আলীয়াং ত্রিপুরা পাড়া, রিয়াং পাড়া, আলীয়াং বাঙ্গালী পাড়া, মিশু মুরুং পাড়া, পানিস্যা ঝিরি, পবলা মুরুং পাড়া, নিডই মুরুং পাড়া, কুইরিং মুরুং পাড়া, তিন গুইজ্জা পাড়া, নাইক্ষ্যং বাজার, ডলুঝিরি মুরুং পাড়া, ব্যাং ঝিরি, বড় কলার ঝিরি, মেনতা মুরুং পাড়া ও রঞ্জু মুরুং পাড়ার মানুষ আতংকে রয়েছে।
চুমপুং হেডম্যান পাড়া সংলগ্ন তামাক চাষ করেন মোঃ ওমর ফারুক বাবুল। তিনি বলেন, গত শুক্রবার বিকেলে আমার বাড়ির কাজের লোক আনিসুর রহমানকে ক্ষেতে কাজ করার সময় আক্রমন চালিয়ে মেরে ফেলেছে হাতি আলী বাহাদুর। রোববার সকালে তার লাশ রংপুর পীরগাছা নিজ বাড়িতে পৌঁছালে দুপুরে দাফন করা হয়েছে। মোঃ নাছির নামে আরো একজনকে আহত করেছে হাতিটি। হাতির পালটি আমার ২/৩ লাখ টাকা তামাকের ক্ষেত নষ্ট করেছে। হাতির ভয়ে এলাকা ছেড়ে রূপসীপাড়া বাজারে চলে এসেছে আমার পরিবার। মাঠে তামাক পড়ে আছে। এখন তামাক তুলতে না পারলে আমার ৮/৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে। পার্শ্ববর্তী ছত্র পাড়ার বাসিন্দা ওয়েলফা ত্রিপুরা ও বথি ত্রিপুরা জানায়, হাতির পালটি হামলা চালিয়ে তাদের লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি করেছে। তারা এখন জীবন নিয়ে শংকায় রয়েছে।
এই বিষয়ে লামা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক খন্দকার মোঃ গিয়াস উদ্দিন বলেন, হাতির আক্রমনে মানুষ মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরে শুক্রবার রাতেই ঘটনাস্থলে বন বিভাগের একটি টিম পাঠানো হয়েছে। দলছুট হাতিটি নিয়ন্ত্রনে অভিজ্ঞ মাহুত আনা হচ্ছে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, হাতির আক্রমনে মৃত্যুর বিষয়টি দুঃখজনক। হাতির কোম্পানীর সাথে আলাপ করে দ্রæত হাতির পালটি সরিয়ে নিতে ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মাকে বলা হয়েছে।
এম/এস