রামুতে কাগজ-পত্র জালিয়াতির পর জন্মনিবন্ধন করে বাল্যবিয়েতে বসছে দু’ কিশোরী শিক্ষার্থী। আগামী ৭ ফেরুয়ারী তাদের এ বিয়ে। আর তাও ঘটা করে হচ্ছে বিয়েটি । এ দিনকে সামনে রেখে বরপক্ষ বিয়ের চিঠি বিতরণ শুরু করেছে শুক্রবার বিকেল থেকে। চিঠিতে লেখা আছে ছেলের গায়ে হলুদ ৬ ফেরুয়ারী রোববার ছেলের বাড়িতে। বিয়ে অনুষ্টান সোমবার কক্সবাজার সদরের লাল গোলাপ কমিউনিটি সেন্টারে।
আর পুুরো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে রামু উপজেলার কাউয়ার খোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনার টিলাপাড়া গ্রামে আবদুর রহমানের পিতা নুর কাদের।বিশ্বস্ত সূত্র মতে, টিলাপাড়া গ্রামের নূর কাদেরের ছেলে আবদুর রহমান পড়ে রামু কাউয়ারখোপের সাইমুম সরওয়ার কমল উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে। তার শ্রেণি রোল নম্বর ৯ । বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান।অপর দিকে মোমেনা আক্তার পড়ে নবম শ্রেণিতে। সে কক্সবাজার সদর ইউনিয়নের বাংলাবাজাস্থ একটি বেসরকারী মাদরাসা ছাত্রী। মোমেনা পূর্ব মুক্তারকূলের জাফর আলমের মেয়ে। তারা দু’জন কিশোর কিশোরী হলেও জন্ম নিবন্ধন পরিবর্তন করে এ বিয়েতে বসছে তারা। যদিও সাইমুম সরওয়ার কমল উচ্চ বিদ্যালয়টি রামুতে সেহেতু রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা এ বাল্যবিয়ে
ঠেকাতে সচেষ্ট থাকলেও কথিত বর- ও কনে পক্ষের একঘেয়েমির কারণে এ বাল্য বিয়ে ঠকাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন।স্থানীয় কাউয়ারকোপ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, সরকার চায় বাল্যবিয়ে বন্ধ হক। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনিও চান সরকারের ঘোষনা বাস্তবায়ন করা। আর এ কারণে তিনি নিজে এ বিয়ে বন্ধ করা কাজ করছেন। এ ভূঁয়া জন্মনিবন্ধনের বিরুদ্ধে তিনি রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করেছেন। যা ইতিমধ্যে বাতিল প্রক্রিয়ার শেষ প্রান্তে। আবদু রহমানের বিষয়ে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক কার্যালয় সূত্র জানান, এ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে সে জেএসসি পাস করে আবদুর রহমান । জেএসসি পরীক্ষার মার্কশীট ও সনদপত্রে তার জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১ মে ২০০৫ ইংরেজি । তারা বাবা-মায়ের বিয়েও হয় ২০০২ সালের ১ মার্চ। কিন্তু বিয়ের দু বছর আগের জন্মতারিখ উল্লেখ করে সে গত ২৩ নভেম্বর ২০২১ ইং তারিখে জন্মনিবন্ধন সৃজন করে। এবং ভোটার হয়। এতে পিতা-মাতার বিয়ের ২ বছর আগে তার জন্ম দেখিয়ো নিবন্ধন করে আবদুুর রহমান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামু উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়- এনআইডি করার সময় তথ্যফরমে আবদুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছে ৪র্থ শ্রেণি। এ কারণে তার সার্টিফিকেট দেখার সুযোগ ছিলো না। প্রতারণার মাধ্যম এনআইডি সৃজনের জন্য সে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি গোপন রাখে।কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম আরো জানান- অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে শিশু শিক্ষার্থী আবদুর রহমানের জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি করা হয়েছে। এটা দূঃখজনক। ইউনিয়ন পরিষদ ও নির্বাচন অফিসের কতিপয় দূর্ণীতিবাজ জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি এ অনিয়মে জড়িত। তিনি আরো জানান- আবদুর রহমানের বয়স এখনো ১৬ বছর। সে ইতিপূর্বে বাল্যবিয়ের চেষ্টা করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমার আন্তরিক প্রচেষ্টায় তার বাল্যবিয়ে আটকে যায়। এখন তার পিতাসহ নানা প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে তাকে মিথ্যা জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি পেতে সহযোগিতা করেছে। অথচ আবদুর রহমানে জেএসসি সনদ এবং এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড আমরা দেখেছি। তাতে তার জন্মতারিখ ২০০৫ সালের ১ মে। এমনকি তার এনআইডিতে জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারি। ওইসময় তার বাবা-মায়ের বিয়েও হয়নি। বিয়ে হয়েছে ২০০২ সালের ১ মার্চে। এমন অভিনব প্রতারনার মাধ্যম এনআইডি কার্ড করার ঘটনা বিরল। সচেতন মহল দাবী জানান, আগামী ৭ ফেরুয়ারী সোমবারের বহুল আলোচিত এ বাল্য বিয়ে ঠেকানো দরকার।
এ প্রসঙ্গে রামু উপজেলার সহকারি কমিশনার রিগ্যান চাকমা বলেন- বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।