মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান, বান্দরবান
একজন পর্যটক যখন কোন স্থানে ভ্রমণে যায়, তখন তার প্রথমে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হয়। তা হল, গন্তব্য স্থানে নিরাপত্তা, সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, একই সাথে কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরার সুযোগ, থাকার সু-ব্যবস্থা, তুলনামূলক কম খরচে ভ্রমণ, ভালো খাওয়ার ব্যবস্থা। এইসব বিবেচনায় বান্দরবান জেলার লামা উপজেলা হতে পারে ভ্রমণের জন্য আপনার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা।
নিরাপত্তাঃ
তিন পার্বত্য জেলাকে বলা হয় বাংলাদেশের কাশ্মীর। পাহাড়ের সৌন্দর্য সবাইকে আকৃষ্ট করে। ভ্রমণ পিপাসুদের মানুষের অন্যতম পছন্দ পাহাড়। কিন্তু আঞ্চলিক ও জাতীয় রাজনীতির কারণে প্রায়ই পাহাড় অশান্ত থাকে। তাই অনেক সময় পাহাড়ে পর্যটকদের আগমন বন্ধ রাখেন প্রশাসন। নিরাপত্তা ইস্যুতে গত ১ মাস যখন তিন পার্বত্য জেলার প্রায় সকল উপজেলায় পর্যটক আসায় নিষেধাজ্ঞা ছিল, তখনও লামা উপজেলা ছিল উন্মুক্ত। বিশেষ করে লামা উপজেলায় সীমান্তবর্তী কোন উপজেলা না হওয়ায় এখানের পরিবেশ থাকে সবসময় শান্ত। কখনো লামা উপজেলায় সাম্প্রদায়িক বা জাতিগত দাঙ্গা হয়নি। সকল বর্ণ ও ধর্মের মানুষের মিলনমেলা লামা। তাই ভ্রমণ পিপাসুদের প্রিয় স্থান হতে পারে লামা উপজেলা। ইতিমধ্যে লামা তা প্রমাণ করেছে। যার ফলস্বরূপ গত ১ বছরের অধিক সময় ধরে জ্যামেতিক হারে বাড়ছে লামায় পর্যটকদের আগমন।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে কক্সবাজার মুখী বিশ্বরোড বা আরকান সড়কের কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা হতে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরত্ব অবস্থিত লামা শহর। চকরিয়া বাস টার্মিনাল থেকে যে কোন যানবাহনে আসা যায় লামা উপজেলায়। এছাড়া বিকল্প হিসাবে আরকার সড়কের লোহাগাড়া উপজেলা হতে এমচর হাট ও কেয়াজুপাড়া দিয়ে লামায় আসা যায়। অথবা যারা বান্দরবান সদরে ভ্রমণে আসেন তারা অভ্যন্তরীণ সড়ক দিয়ে লামায় আসতে পারে। আর কেউ যদি নৌ-পথে আসতে চান, তাহলে চকরিয়া শহরে নতুন ব্রিজ হতে নৌকা বা স্পিরিট বোর্ড করে লামায় আসতে পারেন।
সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ
লামা উপজেলা বান্দরবান জেলার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। তাই লামায় আসলে এখান থেকে বান্দরবানের প্রায় সবকয়টি উপজেলায় সহজে যাওয়া যায়। এছাড়া লামা উপজেলার দক্ষিণ ও পশ্চিমে কক্সবাজার জেলা, উত্তরে চট্টগ্রাম জেলা আর পূর্বে থানচি উপজেলা হয়ে মায়ানমার। লামা বেড়াতে আসলে এখান থেকে তুলনামূলক কম সময়ে অন্যান্য জায়গা যাওয়া যায়।
তুলনামূলক কম খরচে ভ্রমণঃ
লামা উপজেলা শহর হওয়ায় এখানে হোটেল ও আবাসিক স্থান গুলোতে থাকার খরচ তুলনামূলক কম। এখানে সদ্য পর্যটন শিল্পের বিকাশ হওয়ায় এখানকার হোটেল মোটেল ও বিভিন্ন পর্যটন স্পটের মালিকদের ছাড় দেয়ার মানসিকতা অধিক। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে তারা। অনেক জেলা বা উপজেলা হতে অর্ধেকেরও কম বাজেটে লামায় ঘুরে যেতে পারেন। সাবেক মহকুমা ও কয়েকদিনের জেলা হওয়ায় লামা উপজেলা সদর হতে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পর্যটন স্পটের কাছাকাছি গাড়ির যোগাযোগ রয়েছে।
৪টি নৃ-গোষ্ঠী সহ বাঙ্গালীদের সুন্দর সহাবস্থানের কারণে লামায় সব ধরনের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। আধুনিকমানের খাবারের বেশ কয়েকটি রিসোর্ট ও হোটেল রয়েছে এখানে। পাশাপাশি ট্রেডিশনাল খাবারের বাহারি আয়োজন তো আছেই। উল্লেখযোগ্য খাবারের স্থান গুলো হল, তংথমাং রিসোর্ট এন্ড রেস্টুরেন্ট, কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্ট, ফুড হিল, লাড়ং ফুড কর্ণার, হোটেল আমিরাবাদ।
দর্শনীয় স্থানঃ
লামা উপজেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৫০টির অধিক পর্যটন, রিসোর্ট ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেমন-
মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স, তংথমাং রিসোর্ট এন্ড রেস্টুরেন্ট, অনন্য রিসোর্ট, মিরিঞ্জা ভ্যালী, মিরিঞ্জা প্যারাডাইস ট্যুরিজম, মারাইংছা হিল, ভিউ পয়েন্ট কিছুক্ষণ, মিরিঞ্জা সানরাইজ, হিল স্টেশন রিসোর্ট, মিরিঞ্জা ইকো রিসোর্ট, ন্যাচালার পার্ক, ভ্যালী ৯৭, হিল স্কেপ রিসোর্ট, মারাইংচা ওয়াইল্ড রিসোর্ট, সুখিয়া ভ্যালী, রিভার ভিউ, রিভার হিল, চুন্দার বক্স, দুইশত বছরের পুরানো সাবেক বিলছড়ি বৌদ্ধ বিহার, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, নুনারঝিরি-আইম্যারা ঝিরি-নকশাঝিরিসহ অসংখ্য ঝর্ণা, লামা-ফাইতং রোডে ইকো রিসোর্ট ‘প্রংখংডং’, মাতামুহুরী নদী ও লামা খালে নৌকা ভ্রমণ, দুখিয়া-সুখিয়া সহ অসংখ্য পাহাড় ট্রেকিং, লামা খাল, পোপা খাল, বমু খালের মাছকুম, মাষ্টার পাড়া সুরুঙ্গ (গুহা), বীর বাহাদুর কানন, এনআইসি চেয়ারম্যান লেক আজিজনগর।