অসীম রায় (অশ্বিনী) বান্দরবান:
বাংলাদেশের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি সম্প্রদায় ‘খুমি’। সর্বসাকুল্যে তাদের জনসংখ্যা প্রায় চার হাজার। বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে খুমিদের বসবাস।
এ সম্প্রদায়ের মেয়ে তংসই খুমি। এ সম্প্রদায়ের প্রথম ছাত্রী হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন তিনি।
গত ২৪ অক্টোবর তংসই খুমি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে নৃবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। এ খবরে উচ্ছ্বসিত খুমি সম্প্রদায়ের লোকজন। তংসই খুমির গ্রামের বাড়ি বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় তারাছা ইউনিয়নের দুর্গম মংঞো পাড়ায়।
জানা যায়, ১১ বছর বয়সে হারান পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবাকে। মায়ের উপার্জন, চেষ্টা আর ভাইদের অনুপ্রেরণায় শিক্ষা জীবনের এই স্তরে পৌঁছান তিনি। চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় তংসই। বান্দরবান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকার হলিক্রস কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। তার বড় ভাই সুইতং খুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাফিক ডিজাইন বিষয়ে মাস্টার্স পর্বে এবং আরেক ভাই তংলু খুমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। সবার ছোট বোন রেংসই খুমি ঢাকার সেন্ট যোসেফ কলেজে উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে পড়ছেন।
খুমিদের সামাজিক সংগঠন খুমি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সিঅং খুমি বলেন, তংসইয়ের বাবা খুমি জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে গঠন করা এই কাউন্সিলের একজন প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তারই মেয়ে তংসই আমাদের সম্প্রদায়ের গর্ব। এর আগে কিছু মেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করলেও প্রথম ছাত্রী হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেল। খুমি জনগোষ্ঠীতে মেয়েদের শিক্ষার হার খুবই কম। এ অবস্থায় তুৎসইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা পালন করবে।
উল্লেখ্য, খুমি সম্প্রদায় থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১১ জন ছেলে শিক্ষার্থী দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে সবচেয়ে কম ভাষিক ও বিপন্ন জনগোষ্ঠী হলেন খুমিরা। সরকারি হিসাবে ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী তাদের জনসংখ্যা তিন হাজার ৯৯৪ জন। তাদের বসবাস একমাত্র বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি এই তিন উপজেলায়।