ছোটন বিশ্বাস, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।। পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম চাষ একটি প্রাচীন পদ্ধতি। পাহাড়ের বুকে জুম চাষ করে জুমিয়ারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে জুমের বাকি ফসল বাজারজাত করে সংসারের অন্যান্য প্রয়োজন মিটাই।
পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির নয়টি উপজেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে এই জুম চাষ। দূর্গম পাহাড়ে যতদূর চোখ যাবে ততোদূর চোখে পড়বে পাহাড়ের বুকে জুম চাষ। জুমে ধান ছাড়াও মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, আলু, ভূট্টা, মারফা, শসা, চিনার, আদা, হলুদ ছাড়াও প্রায় ৪০ রকমের ফলন হয় এক সাথে।
এবার অনুকূল আবহাওয়া আর নিয়মিত পরিচর্যায় এবার খাগড়াছড়ির জুমে ফলন ভালো ফলন হয়েছে। পাহাড়ের জুমে এখন জুমের ফসল সংগ্রহ করার মৌসুম চলছে। ফলন ভালো এবং বাজারে ভালো পণ্যমূল্য পাচ্ছে বলে জানান জুমিয়ারা।
নয় মাইল এলাকার জুমিয়া ক্ষেতি রঞ্জন ত্রিপুরা জানান, গত বারের তুলনায় এবার পাহাড়ে জুমের ফলন ভালো হয়েছে। জুমে ধান ছাড়াও হলুদ, মারফা, আদা, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়া, তিল, ভুট্টা, বরবটিসহ প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জাতের সবজির চাষাবাদ হয়। জুমের উৎপাদিত খাদ্যশস্য দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি জুমে উৎপাদিত সবজি ও কৃষিপণ্য বিক্রি করে জুমিয়াদের সংসার চলে। জুমের উৎপাদিত ধান দিয়ে তাঁরা প্রায় ৭ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত খাবারের জোগান পান বলে জানান। তবে খরচের তুলনায় উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। জুম চাষের জন্য সরকারিভাবে প্রণোদনা সার বা বীজের দাবি জানান এই জুমিয়া।
জুমিয়া অন্নতি ত্রিপুরা জানান, পাহাড়ে আমরা জুমের ওপর নির্ভরশীল। জুমে আমরা ধান ছাড়াও হলুদ ,মারফা, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করি। তবে গতবারের তুলনায় এবার ভালো ফলনও হয়েছে। কিন্তু খরচ বেশি। আমরা যদি কোনো সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেতাম তাহলে ভালো হতো।
খাগড়াছড়ি দীঘিনালার নয় মাইল এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য গণেশ ত্রিপুরা বলেন, জুমিয়ারা সরকারি ভাবে কোনো ধরনের প্রণোদনা পান না। যদি প্রণোদনা পেতো তাহলে জুন চাষের আরো উৎসাহী হতেন বলে জানান তাঁরা।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মোঃ বাছিরুল আলম জানান, চলতি মৌসুমে ১২শ হেক্টর জমিতে জুম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ১১শ ২৪ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন বারাতে জুমে উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদের পরামর্শ কৃষি বিভাগের। তবে হরিপেক মৌসুমে জুম করাতে জুমিয়াদের কোনো সরকারি প্রণোদনা ইচ্ছা থাকার স্বত্বেও দেওয়ার সুযোগ নাই। তবে পাহারের জুমে উন্নত জাতের ধান চাষ করা সম্ভব। এছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জুমিয়াদের কৃষি পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।
খাগড়াছড়িতে অন্তত ৬ হাজার কৃষক জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল রয়েছে।