মাত্র ৫ একরের মতো জায়গা। যার প্রতিটি ইঞ্চিই সাজানো হয়েছে সবুজ প্রকৃতি আর নির্মল বিনোদনের নানা উপকরণে। এর ফলে এক সময়ের স্যাঁতসেঁতে আর জংলা পরিবেশ পাল্টে সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ আর নির্মল বিনোদনের নানা উপকরণের মিশেলে গড়ে উঠেছে নজরকাড়া উদ্যান। জেলা সদর থেকে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটারের মতো দূরে, মধুমতি নদীর তীরে খুলনা বিভাগের অধীন বৃহত্তর যশোরের নড়াইল জেলার সীমানালগ্ন আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদরে গড়ে তোলা হয়েছে এই মনমুগ্ধকর বিনোদন কেন্দ্র। শুক্রবার (৬ আগস্ট) ‘মুজিব শতবর্ষ ইকোপার্ক’ নামের এই বিনোদন কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বুলবুল। এ সময় জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান জাহিদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদ এলাহী, ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই পুরো বিষয়টি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান জাহিদের। এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জাহিদ বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৩২জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এখানে এসেছেন আর গেছেন। বেশিরভাগই ভারপ্রাপ্ত। কেউ ছ’মাসেরও বেশি থাকতে চান না। বিষয়টি নিয়ে ভাবার পরে দেখলাম আসলে এখানকার পরিবেশ পছন্দ না হওয়ায় তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখানে থাকতে চান না। সে জন্য পরিবেশের উন্নয়নে এই চেষ্টা। তিনি আরও বলেন, এটি বাস্তবায়নে সরকারের নিকট বড়সড় বরাদ্দ চাইতে গেলে পাশ হবে কি-না অনিশ্চয়তা ছিল। তাই একটু একটু করে কাজ এগিয়ে নিয়েছি। এভাবে দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে সকলের আন্তরিকতায় এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাহাত ইসলাম বলেন, পার্কটি বাস্তবায়নে অন্যান্য উপজেলার মডেল দেখে সুবিধামাফিক পরিকল্পনা নিয়েছি। প্রথম পর্যায়ে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজারের মতো দর্শনার্থীর প্রবেশ হতো। ভিড় সামলাতে এখন রাইডগুলোতে নামমাত্র কিছু ফি রাখছি। এটি মেইনটেনেন্সেরও একটা ব্যাপার আছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন হাজামজা একটি পুকুর সংস্কারের সাথে পুরনো ও জীর্ণ গাছপালা ছেঁটে সেখানে পরিকল্পিত বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। সেই সাথে কংক্রিটের সরু পথ করে দুই পাশে গুল্ম জাতীয় গাছ রোপনের মাধ্যমে হাঁটাচলার জন্য মনোমুগ্ধকর করা হয়েছে। পুকুরের মাঝে বসানো হয়েছে আলো ঝলমলে পানির ফোয়ারা। পাড় ঘেঁষে বসার বেঞ্চ। উদ্যানের খোলা জায়গায় শিশুদের খেলাধুলা ও আনন্দের জন্য দোলনা, ঘুর্ণায়মান চর্কা, স্লিপার, বোটসহ আরও কিছু উপকরণ। সেখানে আরও একটি পানির ফোয়ারাও তৈরি করা হয়েছে। সন্ধ্যায় পুরো পরিবেশ আলো ঝলমলে হয়ে উঠে এক বর্ণিল দ্যুতি ছড়ায়। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে এমন একটি পার্ক একেবারেই নতুন। এখানে প্রবেশের জন্য কোনো টাকা দিতে হয় না। সকলের জন্যই উন্মুক্ত। এমন সুব্যবস্থা দেশের খুব কম স্থানেই আছে। ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, শহরের বাইরে গ্রামীণ পরিবেশে এমন আধুনিক একটি নয়নাভিরাম পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। বিশেষ করে শিশু ও পরিবার নিয়ে একটু নির্মল সময় কাটানোর পরিবেশ রয়েছে এখানে। দেখে মনে হচ্ছে, পুরো পরিকল্পনাটি সম্পন্ন করা হয়েছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। এটি আসলেই নজর কেড়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদ এলাহী বলেন, এই পার্ক বাস্তবায়নের কারণে এখানকার সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা শহর থেকে দূরবর্তী হলেও ভৌগলিকভাগে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা আলফাডাঙ্গা উপজেলায় প্রথম কোনো বিনোদন এলাকা এটি। দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী রাখতে সকলকেই খেয়াল রাখতে হবে।