ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশকে ধর্মহীন রাষ্ট্র বানানোর চক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে, আপনারা খেয়াল করেছেন কিনা জানি না। সেটা হচ্ছে যে, প্রাইমারি স্কুলের যে টেক্সট বই সেখানে এমন সব কারিকুলাম আনছে যে, আমার কালচারের বিরুদ্ধে, আমাদের কৃষ্টির বিরুদ্ধে, আমার ধর্মের বিরুদ্ধে। আমরা কখনোই কোনো কাজে ওইভাবে চিন্তা করিনি। আমরা বড় হয়েছি, ইসলামিক যে চিন্তাধারা সেই চিন্তা আমাদের ধর্মের মধ্যে বেরিয়েছে। আজকে সেখান থেকে সম্পূর্ণভাবে বের করে নিয়ে ধর্মহীন একটা রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের আলেম-মাশায়েখদের বিভিন্ন মামলায় কারাবন্দি ও সরকারের দমননীতির কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতীয়তাবাদী উলামা দলের উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের (আওয়ামী লীগ) হাতে স্বাধীনতা কোনো দিনই নিরাপদ না। আপনাদের এর আগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো বলেই ফেললেন, পাশের একটি দেশের ব্যাপারে। যে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো। তারা (ভারত) যে অন্যায়ভাবে আমাদের সব ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কিছু করতে পারছে না। আমাদের পানির হিস্যা দেয় না। সীমান্তে আমাদের হত্যা করা হয়, সেই সম্পর্কে একটা টু শব্দ করে না।তিনি বলেন, বেনজীর সাহেব ছিলেন পুলিশ বাহিনী ও র্যাবের প্রধান। সব পত্রিকায় যখন তার অপকীর্তি, চুরি-দুর্নীতি বেরিয়ে আসছে, তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেব বলছেন, সে কি আওয়ামী লীগ করে?
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আরেকজন সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ। তাকে তারা (আওয়ামী লীগ) অনেককে ডিঙ্গিয়ে, তার দুই ভাই চিহ্নিত সন্ত্রাসী জেনেও সেনাবাহিনীর চিফ (প্রধান) করেছিল। তাদের যে কাজ, তারা সেটা করে দিয়েছিল, নির্বাচন পার করে দিয়েছিল।’বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে মাঠে নামতে দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
২৮ অক্টোবরের পরে ২৭ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যখনই আমরা আন্দোলন করি, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নামি, তখনই তারা একেবারে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশ-র্যাব আক্রমণ করে।বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বলেছেন যে, সাদা চামড়ার লোকেরা নাকি তাকে বলেছে যে, এখানে কোনো একটা দেশের এয়ারবেইস বানাতে। অর্থাৎ সেখানে তাদের জঙ্গি বিমান নামবে এয়ার বেইস হিসেবে তারা ব্যবহার করবে। আর বাংলাদেশের একটা অংশ চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমারের একটা অংশ নিয়ে নতুন একটা খৃষ্টান রাষ্ট্র তৈরি করবার তারা চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত হবে এই মুহুর্তে জনগণের কাছে তার প্রকৃত ব্যাখ্যা তুলে ধরা। কারা চাইছে এবং কেনো চাইছে? কেনো তা এতোদিন পরে প্রকাশ করছেন, এটা আমরা জানতে চাই। কারণ এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন। আপনাদের হাতে স্বাধীনতা আর কোনভাবেই নিরাপদ না। ভারতের সাথে বাংলাদেশের অভিন্ন ১৫৪টা নদীর হিৎসা, তিস্তা নদীর পানি বন্টন সদস্যা, সীমান্ত হত্যা বন্ধের শেখ হাসিনার সরকারের ব্যর্থতার কথাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।ভারতে ভোটের অধিকার আছে বলেই লোকসভার নির্বাচনে তার প্রতিফলন ঘটেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে বাংলাদেশে যে দানব গত ১৫ বছর ধরে আমাদের ঘরের মধ্যে, বুকের মধ্যে চেপে বসে আছে, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধবংস করে দিয়েছে, সব অর্জন ধবংস করে দিয়েছে। একে সরাতে না পারলে কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা থাকবে না, আমাদের সার্বভৌমত্ব থাকবে না। আমাদের ভোটের অধিকার নেই, এই ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। আজকে দেখেন, ভারত বর্ষে ভোটের অধিকার আছে বলেই কিন্তু তারা অন্তত এই যে মোদীর (নরেন্দ্র মোদী) তিনবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যে ক্ষমতায় যাওয়ার যে ইচ্ছা-ভাবনা সেইটাকে কিন্তু তারা (জনগণ) রোধ করে দিয়েছে। আজকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তারা পাচ্ছে না।বাংলাদেশে ভোটের অধিকার ফিরে পেতে আন্দোলনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ভোটাধিকারের সেই অবস্থাটা আমাদেরকে ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষজন ভোট দিয়ে যাতে তার নিজস্ব পছন্দমত প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারি তার ব্যবস্থা করতে হবে।তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আমরা মুক্ত করতে, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারিনি। সেজন্য আমাদের সংগ্রাম-লড়াই করতে হবে, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব যিনি নির্বাসিত আছেন তাকে ফিরিয়ে আনার লড়াই করতে হবে, সর্বাপরি দেশের মানুষকে মুক্ত করবার জন্য আমাদেরকে সংগ্রাম করতে হবে। এই সংগ্রাম-লড়াই আমার জন্য নয়, এই সংগ্রাম দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য। এই সংগ্রামের ডাকে সকলে সাড়া দিয়ে দল-মতনির্বিশেষে সবাই মিলে গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ।উলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা কাজী মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মাওলানা মোহা. কাজী আবুল হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন,এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম জামাল, আবদুল বারী ড্যানি, মাওলানা শাহ মো. নেসারুল হকসহ উলামা দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।