দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের অন্যতম প্রবেশদ্বার নামে পরিচিত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এই নৌরুটের রাজবাড়ী প্রান্তে রয়েছে দৌলতদিয়াঘাট ও মানিকগঞ্জ প্রান্তে রয়েছে পাটুরিয়া ফেরিঘাট। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই রাজবাড়ী দৌলতদিয়া প্রান্তে নদী ভাঙন দেখা যায়।
এতে করে যেমন ফেরিঘাটের জায়গা কমে যাচ্ছে তেমনিভাবে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের মানচিত্র ছোট হতে শুরু করেছে। এছাড়াও ফসলি জমি, বসটভিটাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এবছরও বর্ষা মৌসুম আসতেই পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দৌলতদিয়া প্রান্তে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই নদী ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে দৌলতদিয়া প্রান্তের ফেরিঘাটের আশেপাশের এলাকার তিনশতাধিক বসতভিটা ও দোকানপাট ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলছে বিআইডব্লিউটিএ। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এসব এলাকার জিওব্যাগ ধসে পড়েছে।
কয়েকবছর ধরে পদ্মার এই ভয়াবহ ভাঙনের ফলে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার মানচিত্র। এই বছর বৃষ্টির শুরুতেই পানি বৃদ্ধির ফলে ওই এলাকার ১০০ মিটার তীর পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু ভাঙন রোধ ও ফেরিঘাট রক্ষায় ওই এলাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর এই ঘাট রক্ষার্থে কোটি কোটি টাকার কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। এবার ভাঙন রোধে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ২২ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলবে বিআইডব্লিউটিএ। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের নদীতীরবর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,দৌলতদিয়া ঘাটে দফায় দফায় পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা আমরা
কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই ঘাট এলাকায় এই ভাঙন। শুকনো মৌসুমে যদি বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলানো যেত তাহলে এই ভাঙন রোধ করা সম্ভব হতো। তবে স্থানীয়দের দাবি, এই ভাঙন প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে দৌলতদিয়াঘাট হারিয়ে যাবে। ৫
নম্বর ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা তুরাপ মিঞা জানান, নদী ভাঙনে কয়েকটি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এছাড়াও অর্ধশত পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। ওই এলাকার কৃষি জমিসহ রাস্তাঘাট নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে গ্রাম পদ্মার গ্রাসে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
বিআইডব্লিউটি এ আরিচা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন পাঠান জানান, দৌলতদিয়াঘাটের ভাঙন প্রতিরোধে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। এ মৌসুমে ঘাট এলাকায় ২২ হাজার জিওব্যাগ ফেলা হবে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়াঘাট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) ফিরোজ শেখ বলেন, বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং করার পরপরই ৭নম্বর ফেরিঘাট ভাঙতে শুরু করে। তখনই ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা মুন্সী বলেন, খুব দ্রুত নদীশাসনের কাজ শুরু করতে না পারলে এবারও ভাঙনে দৌলতদিয়ার অনেক অংশ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।