• শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম
পানছড়িতে জামায়াতে ইসলামীর সুধী ও কর্মী সমাবেশ মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার এইচপিভি টিকায় ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা, সার্ভারে ধীরগতি! বাজারে প্লাস্টিকের দাপট! হারিয়ে যাচ্ছে হস্তশিল্প বাঁশবেতের উপকরণ বান্দরবানে ২৩ হাজার কিশোরীকে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচী শুরু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবীতে মানববন্ধন মানিকছড়িতে অবৈধ বালু উত্তোলনে লাখ টাকা জরিমানা অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল মোমেন খাগড়াছড়ি জেলা জামায়াতের আমির নির্বাচিত কাপ্তাইয়ে রবি প্রণোদনা কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন ভারতীয় নাগরিক সহ দুইজনকে আটক করেছে বিজিবি মানিকছড়িতে প্রণোদনার আওতায় বীজ সার অর্থ বিতরণ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় মহালছড়ি ছাত্রদলের আনন্দ মিছিল

শনিবার থেকে বৃষ্টিপাত কমতে থাকবে, আবহাওয়া অধিদপ্তর

স্টাফ রির্পোটারঃ / ৪০২ জন পড়েছেন
প্রকাশিত : শুক্রবার, ৩০ জুলাই, ২০২১

আজ শুক্রবারও (৩০ জুলাই) দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রবল বৃষ্টি হবে এবং আগামীকাল শনিবার থেকে বৃষ্টিপাত কমতে থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এদিকে, ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের কিছু এলাকায় নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। দু-এক জায়গায় পানি কমেছে। বন্যার কারণে সড়ক যোগাযোগ ভেঙে পড়েছে কক্সবাজারের চকরিয়ায়। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। বাগেরহাটে টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে সাড়ে ১৬ হাজার চিংড়িঘের ও পুকুর। টানা বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে।

পানি বাড়ায় এবং তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় বৃষ্টির কারণে ১২টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। সাগরের লঘুচাপ ও জোয়ারের পানিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দুমকী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। বৃষ্টির কারণে পানি বাড়তে থাকায় ভাঙনের মুখে পড়েছে মনপুরার বেড়িবাঁধ। তবে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির কিছু উন্নতি ঘটেছে।

টানা বর্ষণ ও পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদীর পানিতে ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়েছে চকরিয়ার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকাই এখন পানির নিচে। কোথাও কোথাও পানির উচ্চতা ১০ ফুট। এরই মধ্যে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছে। তলিয়ে গেছে প্রায় ২০ হাজার একর চিংড়িঘের ও পাঁচ শতাধিক পুকুর। যোগাযোগব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।

চকরিয়া পৌরসভা ছাড়া কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, বমুবিলছড়ি, লক্ষ্যার চর, ফাঁসিয়াখালী, কৈয়ারবিল, হারবাং, বরইতলী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, চিরিঙ্গা, সাহারবিল, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএম চর, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড় ভেওলা, বদরখালী, পেকুয়া সদর, বারবাকিয়া, শীলখালী, রাজাখালী ও টৈটং ইউনিয়নের অনেক গ্রাম বন্যার কবলে পড়েছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘উপজেলার ৮০ শতাংশ এলাকা বানের পানিতে ভাসছে। এরই মধ্যে আমরা ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছি।’

বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, কয়েক হাজার চিংড়িঘের ও পুকুর ডুবে গেছে। তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন চিংড়িচাষিরা। জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, আটটি উপজেলায় ৯ হাজার চিংড়িঘের, সাড়ে সাত হাজার পুকুর ও ২৭০টি কাঁকড়ার ঘের ডুবে গেছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ঘেরের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, চার দিনের টানা বর্ষণে চরমোন্তাজ ইউনিয়নের উত্তর চরমোন্তাজ, মধ্য চরমোন্তাজ, চরমল, চরলক্ষ্মী ও পূর্ব চরমোন্তাজ গ্রামে আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, প্রভাবশালীদের মাছের ঘেরের কারণে পানি বের হতে পারছে না। এর খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ চাষিদের।

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, অস্বাভাবিক পানি বাড়ার ফলে পদ্মা উত্তাল হয়ে উঠেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল ভোর থেকে পদ্মা নদীর পানি উত্তাল হয়ে ওঠে। প্রবল বাতাসে নদীতে বড় বড় ঢেউ সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় বিভিন্ন নৌযান চলাচল বন্ধ থাকলেও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক ছিল।

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি জানান, ভারি বর্ষণে ১২টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এতে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে চাষিদের। উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার জানান, এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা আছে।

দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, টানা বৃষ্টিতে দুমকী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অনেক গাছ উপড়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে। বীজতলাসহ নষ্ট হয়েছে বহু ফসলি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নদীর পানি তিন ফুট পর্যন্ত বেড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক (বান্দরবান) জানান, উজানে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। নতুন করে আর বৃষ্টি না হলে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই সড়ক ও বিভিন্ন বসতি থেকে পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। থানচিতে গতকাল দুপুরের পর থেকেই বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শঙ্খ নদীর পানি কমতে শুরু করে। রুমা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতিও উন্নতির দিকে। তবে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় বিকেলে বৃষ্টি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

চরফ্যাশন প্রতিনিধি জানান, মেঘনার অব্যাহত ভাঙন ও প্রবল জোয়ারের প্রভাবে বেড়িবাঁধগুলো ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। যেকোনো সময় জোয়ারের পানি ঢুকে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হতে পারে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১ নম্বর মনপুরা ইউনিয়নের পশ্চিম কুলাগাজির তালুক রামনেওয়াজ মৎস্য ঘাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধটি জোয়ারের তোড়ে প্রায় পুরোপুরি ভেঙে গেছে। মনপুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠও পানিতে ডুবে রয়েছে। জোয়ারের পানিতে হাজির হাট ইউনিয়নের অনেক বাঁধও হুমকিতে পড়েছে। উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের মাস্টারহাটের পশ্চিম পাশের বেড়িবাঁধ ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের সূর্যমুখী বেড়িবাঁধ, বাতির খাল ও ঢালি মার্কেট সংলগ্ন এলাকার বাঁধের অবস্থাও নাজুক।

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বিষখালী নদীর পানি ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে গেছে। এতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়িসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া বুধবার রাতের দমকা বাতাসে বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক ঘরবাড়ি। গত সোমবার মধ্যরাত থেকেই উপকূলে টানা বৃষ্টি শুরু হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম) জানান, ভারি বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে নগরের নিম্নাঞ্চল। চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, রাউজানসহ বিভিন্ন উপজেলায়ও পাহাড়ি ঢলের পানি নামছে। কোথাও ডুবে গেছে সড়ক। নিচতলার বাসা-বাড়ি, দোকানপাটে ঢুকেছে পানি। ঢলের পানির সঙ্গে নেমে এসেছে পাহাড়ি মাটিও। সব মিলে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। নগরের খুলশী থানাধীন ডেবারপাড় এলাকায় গতকাল সকালে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটলেও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা) জানান, কয়েক দিন ধরেই লঘুচাপের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে স্থল নিম্নচাপ আকারে বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চল এবং তত্সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় অবস্থান করছে। একই সঙ্গে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। ফলে আজ শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর পর থেকে কমবে বৃষ্টিপাত।

বিশেষ প্রতিনিধি (কক্সবাজার) জানান, কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণে ৯টি উপজেলার ৫১ ইউনিয়নের ৫১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অতি বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের পানিতে এসব গ্রামের চার লক্ষাধিক মানুষ হয়ে পড়েছে পানিবন্দি। এ পর্যন্ত জেলায় পাহাড়ধস ও পানিতে ডুবে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় রোহিঙ্গাসহ ২০ জনে। এর মধ্যে ১৩ জন পাহাড়ধসে ও সাতজন পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে।

পাহাড়ি ঢলের পানিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ বেড়েছে রামু, কক্সবাজার সদর ও চকরিয়া উপজেলার অন্তত সাত-আটটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন রেলপথের রাস্তা ভরাটের সময় পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখায় এ দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ