রিপন ওঝা,মহালছড়ি প্রতিনিধিঃ
তিন পার্বত্যঞ্চলের আঞ্চলিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাবেক গেরিলা নেতা শ্রী তাতিন্দ্র লাল চাকমা ওরফে মেজর পেলে আজ বৃহস্পতিবার ১৩ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
তিনি সাবেক এ গেরিলা নেতা অবিভক্ত “পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি” (পিজেএসএস)র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সশস্ত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের আগ পর্যন্ত সন্তু লালমা’র নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র শাখা ‘শান্তিবাহিনীর’ সহকারি ফিল্ড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও চুক্তি’র পরে প্রকাশ্য রাজনীতিতে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর জনসংহতি সমিতি মূলধারার রাজনীতিতে আবির্ভূত হলেও পরবর্তী সময়ে দলে মতবিরোধ দেখা দেয়। এর জেরে সন্তু লারমার নেতৃত্ব প্রত্যাখান করে ২০১০সালে জনসংহতি সমিতির আরেকটি অংশ সৃষ্টি হয়। যার নাম পিজেএসএস(এমএন লারমা)। আর তিনি নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন।
সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০ সনের ১২তম জনসংহতি সমিতির জাতীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
পিজেএসএস (এমএন লারমা) গ্রুপের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, পার্টির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিকালে পারিবারিকভাবে খাগড়াড়ির দীঘিনালায় উপজেলার পারিবারিক শশ্মানে দাহক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
জানা যায়, তিনি গত ৩রা আগস্ট অসুস্থ হলে তাকে প্রথমে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অবস্থার অবনতি হলে তাকে গত ৮ আগস্ট ২০২০ রোজ শনিবার চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
তবে তিনি ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে আত্মীয় স্বজনসহ তিন পার্বত্যঞ্চলের সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি দুই ছেলে, এক মেয়ে এবং স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন। এ সময় তার বয়স ৭২ বছর হয়েছিল।
মহালছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় পিসিজেএসএস(এমএন লারমা) কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি চাকমা বলেন শ্রী তাতিন্দ্র লাল চাকমার মৃত্যুতে আমাদের কাছে ভীষণ এক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আজীবন সংগ্রামী, ত্যাগী, বিপ্লবী। নিঃস্বার্থ ভাবে দুঃখী মেহনতি মানুষদের জন্যে জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করেছেন। এমএন লারমা ও সন্তু লারমার নেতৃত্বে শান্তিবাহিনীর আমলেও অনেক অবদান রেখেছেন। তিনি কখনো অন্যায়কারীকে প্রশয় দেয়নি, স্বজনপ্রীতিও করেন নি। সদা সৎ পথে থেকে প্রিয় জুম্ম জাতির মুক্তি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লড়াই সংগ্রাম করেছেন। এমন প্রতিভাবান নেতা, রাজনীতিবিদ, সংগ্রামী, ত্যাগী নেতা ও নক্ষত্র আজ পার্বত্যবাসী হারালো এই মহান মানুষকে। নিজের পরিবার পরিজনসহ জীবন-জীবিকার নিরাপত্তার চেয়ে তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিকেই মনোযোগী ও নিবেদিত প্রাণ ছিলেন।
পার্বত্য জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্রীয় সভাপতি তাতিন্দ্র লাল চাকমার মৃত্যুর ঘটনায় সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপাতত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সুভাষ কান্তি চাকমা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।