এম মহাসিন মিয়া, স্টাফ রিপোর্টার (খাগড়াছড়ি)
পেনি আপিলের অর্থায়নে তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার বাস্তবায়নাধীন ‘ইন্টিগ্রেটেড সাপোর্ট ফর দ্যা লাইফলং সাকসেস অফ অরফান চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ(সফল)’ শীর্ষক প্রকল্পে সৃষ্ট একুশ শতকের শিখন কেন্দ্রগুলোতে শিশু বিকাশে সহপাঠ্যক্রম কার্যক্রম ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে।
২০২২ সাল থেকে এ কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়।
দীঘিনালার পাঁচটি ইউনিয়নে মোট ৩৭টি গ্রামে ‘একুশ শতকের শিখন কেন্দ্র’ নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি শিখন কেন্দ্রের জন্য একজন কমিউনিটি ভলান্টিয়ার নিয়োজিত রয়েছে। কমিউনিটি ভলান্টিয়াদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হয়েছে। এই দক্ষ কমিউনিটি ভলান্টিয়াররাই শিখন কেন্দ্রে সহপাঠক্রম কার্যক্রম পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।
গ্রামের প্রান্তিক ও অবহেলিত শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ও একুশ শতকের চারটি দক্ষতা(কমিউনিকেশন, কোলাবোরেশন, ক্রিটিক্যাল থিংকিং ও ক্রিয়েটিভিটি) উন্নয়নে শিখন কেন্দ্রগুলোতে এ ধরণের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান, প্রকল্পের একজন কর্মী পাপেন ত্রিপুরা।
প্রতিদিন বিকালে শিশুরা স্কুল থেকে ফিরেই শিখন কেন্দ্রে ছুটে যায়। ছবি অঙ্কন, কবিতা আবৃত্তি, গান, শিক্ষামূলক গেইম, সাধারণ জ্ঞান, উপকরণ তৈরি, বক্তৃতা উপস্থাপন, গল্প বলাসহ ইত্যাদি সহপাঠক্রম কার্যক্রম চর্চা করা হয় এই শিখন কেন্দ্রে।
একুশ শতকের শিখন কেন্দ্রের কার্যক্রম দেখতে কয়েকটি শিখন কেন্দ্রে ঘুরেছিলাম।
কথা বলেছিলাম, শিখন কেন্দ্রে আগত শিশু ও নিয়োজিত কমিউনিটি ভলান্টিয়ারদের সাথে।
এসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে শিশুরা আগের তুলনায় দক্ষ হয়ে উঠছে বলে জানান, পোমাং পাড়া শিখন কেন্দ্রের কমিউনিটি ভলান্টিয়ার জেলি ত্রিপুরা।
থানা পাড়া শিখন কেন্দ্রের কমিউনিটি ভলান্টিয়ার মনছুরা আক্তারের মতে, ‘শিখন কেন্দ্রে আগত শিশুদের প্রতিদিন নতুনত্ব কিছু শিখাতে গিয়ে আমিও অনেক কিছু শিখছি। শিশুদের সাথে কাজ করতে খুব ভাল লাগছে।’
সুরেশ হেডম্যান পাড়া শিখন কেন্দ্রের কমিউনিটি ভলান্টিয়ার প্রাণেশ ত্রিপুরা বলেন, ‘স্কুলে যা শেখানো হয় না, তা আমরা শিখন কেন্দ্রে শিশুদের চর্চা করতে দিই। আমি শুধু নেতৃত্ব দিয়ে থাকি। এ প্রকল্পে কাজ করতে এসে আমিও অনেক কিছু শিখছি।’ স্কুলের সিলেবাসের বাইরে কিছু করতে পারলে শিশুরা খুশি হয় বলে জানান এই ভালান্টিয়ার।
উল্লেখ্য, সফল প্রকল্পের মাধ্যমে তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা দীঘিনালায় ৩৩৫ জন অনাথ শিশুকে শিক্ষা সহায়তা ভাতা হিসেবে মাসিক ১০০০ টাকা সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে দিয়ে থাকে। তাদেরকে দেওয়া হয়েছে ওয়েলবিং কিটস(চেয়ার, টেবিল, ওয়াটার ফিল্টার, সোলার প্যানেল সেট, ছাতা, স্কুল ব্যাগ)। এছাড়াও অনাথ শিশুর প্রত্যেক অভিভাবকদের আয়বর্ধনমূলক কর্মসূচির অনুকূলে প্রশিক্ষণ ও ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে, একশত অনাথ শিশু পরিবারকে এ অনুদান দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, অনাথ শিশুদের অধ্যয়নরত বিদ্যালয়সমূহে পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ ক্রয় ও ওয়াটার, স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থাপনার জন্য ২৫ হাজার টাকা ক্ষুদ্র অনুদান দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সূত্রমতে, সফল প্রকল্পের আওতায় ব্লু স্কুল কার্যক্রম চলছে উপজেলার ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ব্লু স্কুল কার্যক্রমে মূলতঃ কিশোর কিশোরী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য শিক্ষার উপর সাপ্তাহিক সেশন পরিচালনা, নিউট্রিশন গার্ডেন গড়ে তোলা, ওয়াশ(ওয়াটার, স্যানিটেশন ও হাইজিন) ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিদ্যালয়কে উপকরণ ও সহযোগিতা করা হয়।
সফল প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রমে সহযোগিতা করা হয় উপজেলার ৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। দেওয়া হয়েছে ক্ষুদে ডাক্তারের উপকরণ(ইউনিফর্ম, স্টেটোস্কোপ, নেইল কাটার, উচ্চতা মাপক স্কেল, ওজন মাপক মেশিন, সেশন পরিচালনার মডিউল ইত্যাদি)। ফোকাল শিক্ষক দ্বারা চালানো হয় সাপ্তাহিক সেশন।
সফল প্রকল্পটি পাঁচটি ফলাফলের উপর কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। যথা- ১। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের উপর ২। আর্থিক নিরাপত্তা(অনাথ শিশু পরিবারের) নিশ্চিতকরণের উপর ৩। স্বাস্থ্য ও সুস্থতার কার্যক্রম ৪। সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচির উপর কার্যক্রম ও ৫। শিশু অধিকার ও শিশু সুরক্ষার উপর।