স্টাফ রিপোর্টার (খাগড়াছড়ি)
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা উপজেলায় সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ওপেন টেন্ডার ছাড়াই উপজেলা পরিষদের ১১১টি সরকারি সেগুন গাছ কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিছুদিন আগেও উপজেলা পরিষদের আশপাশে শতাধিক পুরাতন এ সেগুন গাছগুলো দাঁড়িয়ে ছিলো বলে জানান স্থানীয়রা।
জানা যায়, গাছের পরিমাণ-পরিমাপ, মূল্য নির্ধারণ এবং নিয়ম অনুযায়ী ওপেন টেন্ডার বা নিলাম ঘোষণা না করেই বহু বছরের পুরোনো এসব সেগুন গাছ কাটা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি জানান, উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব মূল্যবান সেগুন গাছ ওপেন টেন্ডার ব্যতিত নির্বিচারে কেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির ক্ষমতা বলে সবাই নীরব, কেউ বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করছেন না।
প্রাকৃতিক পরিবেশের বন্ধু পুরাতন সেগুন গাছগুলো কাটার ফলে উপজেলা পরিষদের সৌন্দর্য হারাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দীঘিনালা উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, এসব গাছ কাটার ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী দেয়া হয়নি ওপেন টেন্ডার। তাছাড়া স্থানীয় কিংবা জাতীয় কোনো দৈনিক পত্রিকায় টেন্ডার নোটিশও প্রকাশ করা হয়নি বলেও জানান সরকারি ওই কর্মকর্তা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন কাঠ ব্যবসায়ী নিজের নিরাপত্তা জনিত কারণে নাম প্রকাশ না করে জানান, বড় আকৃতির কর্তনকৃত ১১১টি সেগুন গাছের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা। তবে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের সরকারি এসব সেগুন গাছগুলো কাটার পেছনে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে।
একচ্ছত্র ক্ষমতা বলে অনিয়মের মাধ্যমে ওপেন টেন্ডার ছাড়াই স্থানীয় ভাবে সিন্ডিকেট তৈরি করে উপজেলা পরিষদের এসব সরকারি সেগুন গাছ কাটা হয়েছে বলে জানান দীঘিনালা উপজেলার একজন আওয়ামী লীগ নেতা। ওই নেতা আরও জানান, এই ঘটনার সাথে যারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জড়িত তাদের নাম মিডিয়ায় প্রকাশ করা যাবে না। আমার জীবনের নিরাপত্তা কে দিবে? গাছ কাটার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা অর্থ-বিত্তে খুবই প্রভাবশালী।
এ বিষয়ে দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাশেম জানান, আমি টেন্ডার প্রক্রিয়ার সাথে কোনো ভাবেই জড়িত না। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশে যথাযথ টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের জায়গা থেকে সরকারি পুরাতন সেগুন গাছগুলো কাটা হয়েছে সত্য। এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই এবং কোনো প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী বিস্তারিত জানাতে পারবেন।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানানো হয়, ওপেন টেন্ডার বা জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি না হলেও সম্পূর্ণ নিয়ম অনুসরণ করেই নোটিশের মাধ্যমে স্থানীয় এক ব্যক্তি সর্বচ্চ দামে (২৯ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা) গাছগুলো নিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বন কর্মকর্তা (নাড়াইছড়ি রেঞ্জ) ফরেস্টার মো. মতিউর রহমান জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশে ওই সেগুন গাছগুলো কাটা হয়েছে। তাছাড়া উপজেলা পরিষদের প্রাপ্ত চিঠি মোতাবেক আমি সহ বন বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তারা কর্তনকৃত সেগুন গাছগুলোর পরিমাপ করেছি। ওখানে মোট সেগুন গাছের পরিমাণ ১১১ টি।