২০১২ সালের দিকে এক হাজার মুরগীর শেড দিয়ে পোল্ট্রি খামারের পথচলা শুরু করেন মো. আজিজুল ইসলাম। প্রথম বছরে সফলতাও স্পর্শ করে এ যুবককে। পোল্ট্রি খামার করে স্বাবলম্ভি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আজিজুল ইসলামের সাফল্যে অনুপ্রানিত হয়ে আরো অনেকেই পোল্ট্রি খামারের ব্যবসা শুরু করেন একজন আজিজুল ইসলামের দেখানো পথ ধরে এ গ্রামের পোল্ট্রি খামারীরা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভুমিকা রাখছে। বর্তমানে ওই গ্রামের সকলের আয়ের একমাত্র উৎস পোল্ট্রি খামার।
বলছিলাম পাহাড়ী জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার বেলছড়ি ইউনিয়নের এক পিছিয়েপড়া পল্লী স্বর্নকারটিলা‘র বদলে যাওয়ার গল্প। এক যুগের ব্যবধানে পোল্ট্রি খামারে ভাগ্য বদলে গেছে শতাধিক পরিবারের। পোল্ট্রি খামারের আয়ে ছনের ঘরের বদলে গড়ে উঠছে পাকা বাড়ি।
আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত এ পল্লীর প্রতিটি বাড়িতেই গড়ে উঠেছে পোল্ট্রি খামার। পোল্ট্রি খামার গড়ে অনেকেই আজ স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। এ গ্রামের প্রতিটি বাড়িই যেন একেকটি পোল্ট্রি খামার। পোল্ট্রি খামার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একেকজন হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা। এসব খামারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
সম্প্রতি মাটিরাঙ্গায় উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরের বেলছড়ি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের স্বর্ণকারটিলা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার দু’ধারে বাড়ির আঙিনা বা পাহাড়ের পাদদেশে ছোট বড় পোল্ট্রি খামার। দুই হাজার থেকে শুরু করে চার হাজার মুরগির শেড রয়েছে বিভিন্ন খামারে।
১৩০ পরিবার নিয়ে গঠিত বেলছড়ির স্বর্ণকারটিলা গ্রামের ছোট-বড় ১৮০টি পোল্ট্রি খামারে প্রতি মাসে গড়ে ৪ লাখ মোরগ উৎপাদন হয়। প্রতিটি মোরগ গড়ে দেড় কেজি করে গড় উৎপাদন হয় ৬লাখ কেজি মোরগ। ফলে প্রতিমাসে এক গ্রাম থেকে ১০ কোটি ১৫ লাখ টাকার মোরগ বিক্রি হয়। বছরে যা দাঁড়ায় ১২১ কোটি ৮০ লাখ টাকায়। পাহাড়ী পল্লীর এসব মোরগ খাগড়াছড়ি জেলার চাহিদা মিটিয়ে ফেনী, নেয়াখালী, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিক্রি করা হয়। প্রতি মাসে প্রায় কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয় এ গ্রামের বিভিন্ন খামারে।
১৩০ পরিবারের একটি গ্রামে শত কোটি টাকার উপরে পোল্ট্রি মোরগ উৎপাদন করলেও ভালো নেই সে গ্রামের খামারীরা। বিদ্যুত সঙ্কট, অতিরিক্ত টোল আদায়, মোরগীর বাচ্চা, খাদ্য ও ভ্যাকসিনের মুল্য বৃদ্ধিতে নিজেদের হতাশার কথা জানিয়েছেন খামারীরা। তারা বলেন, দেশের অর্থনীতিতে আমরা গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখলেও আমাদের খবর কেউ রাখেনা।
খামারিদের অভিযোগ, দেশ স্মার্ট বাংলাদেশের যুগে প্রবেশ করলেও স্বর্ণকারটিলা এখনো অন্ধকারেই পড়ে আছে। বিদ্যুতের আলো পৌছেনি দেশের অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখা এ গ্রামে। ২০১৯ সালে বৈদ্যুতিক খুটি এবং ট্রান্সমিটার স্থাপন করা হলৌ অজানা কারণে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়া হয়নি। ফলে লাখ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব দেয়া ওই এলাকার জনগণ সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মোরগীর বাচ্চা, খাদ্য ও ভ্যাকসিনের মুল্য বৃদ্ধিতে নিজের হতাশার কথা জানিয়ে খামারী আসমাউল ইসলাম বলেন, এসবের দাম বাড়লেও মাংসের দাম আগে যা ছিল এখনো তাই আছে। তিনি বলেন, চাইলেও এ ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই। সবমিলিয়ে এখানকার খামারীরা দুর্ভোগের মধ্যে আছে। অপর খামারী ইয়াসির আরাফাত বিদ্যুত না থাকায় নিজেদের ভোগান্তির কথা জানিয়ে বলেন, পোল্টি খামার করতে বিদ্যুত খুব গুরুত্বপুণূ হলেও তা নেই।
২০১২ সাল থেকে পোল্ট্রি খামার ব্যবসার সাথে নিজের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়ে মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, একটা সময় মুরগীর উপর টোলের বোঝা না থাকলেও বর্তমানে একই মুরগীল জন্য কয়েক জায়গায় টোল দিতে হয়। পাশাপাশি ফিড, বাচ্চার ক্রয় মুল্য বৃদ্দিসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদেরকে পথে বসতে হবে।
বেলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রহমত উল্যাহ বলেন, নানা প্রতিকুলতাকে মোকাবেলা করে বেলছড়ির স্বর্ণকারটিলার অধিবাসীরা অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভুমিকা রাখছে। তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সম্ভব সবকিছু করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে।
স্বর্ণকারটিলার পোল্টি খামার ঘুরে দেখার আগ্রহের কথা জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডেজী চক্রবর্তী বলেন, পোল্ট্রি খামারের মাধ্যমে বদলে যাওয়া ওই গ্রামে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেয়া হবে। পোল্ট্রি খামারীদের সাথে কথা বলে তাদের সব ধরনের সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া হবে।