মোঃ সালাউদ্দিন:-
খাগড়াছড়ির সদর থানায় সাইবার বুলিং-এর অভিযোগের ভিত্তিতে ৩৬ ঘন্টার মধ্যে উদয়ন ত্রিপুরা নামের এক স্কুল শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ।
একবিংশ শতাব্দীতে মানুষের কাছে সবচেয়ে সহজলভ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে ইন্টারনেট।
প্রযুক্তিকে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে গিয়ে কেউ কেউ আবার নিজের অজান্তেই প্রযুক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। আর এভাবেই অপরাধের ডিজিটাল মাত্রা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
যার একটি হলো সাইবার অপরাধ। ফলশ্রতিতে এই সাইবার জগতে বিভিন্নভাবে প্রতারণা, বুলিং, আপত্তিকর, অশ্লীল অনেক ঘটনায় অপরাধের শিকার হচ্ছেন বর্তমান সমাজের নাগরিকগণ। এর ব্যপকতা ও ভয়াবহতা উপলব্ধি করে খাগড়াছড়ি জেলায় যোগদানের পর থেকে জেলার পুলিশ সুপার মুক্তা ধর পিপিএম (বার) সাইবার ক্রাইম এবং ভার্চুয়াল জগতে বিভিন্ন অনিয়মের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। এইসকল হুমকি মোকাবেলায় পুলিশ সুপার জেলা পুলিশে বিশেষ সাইবার ক্রাইম ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেন।
সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে খাগড়াছড়ি জেলার এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনৈক একজন স্কুল শিক্ষিকা গত ১২ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি সদর থানায় এসে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন যে তার নামে কেউ একজন ফেইক ফেইসবুক আইডি খোলেখোলে বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর ও আপত্তিকর পোস্ট করেছেন এবং আরো একটি ফেইক ফেইসবুক আইডি থেকে ভিকটিমের মুল আইডিতে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল,কুরুচি ও কুরুচিকর মেসেজ প্রদান করেছেন। ভিকটিমের একটি ব্যক্তিগত ছবিকে এডিট করে অশালীন ভাবে উপস্থাপন করে প্রথমে ভিকটিমের ফেসবুক আইডিতে মেসেজ করে ভিকটিমকে ভয় দেখিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্লাকমেইলকারী তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন এবং ছবিটিকে ভিকটিমের পরিচিত বিভিন্ন ব্যক্তির সামাজিক মাধ্যমে ছরিয়ে দিয়ে ভিকটিমকে নানান ভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।
উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার মুক্তা ধর পিপিএম (বার) এর নজরে আসলে পুলিশ সুপারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও দিক নির্দেশনায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উক্ত ফেইক ফেইসবুক আইডিধারী ও ব্লাকমেইলকারীকে অভিযান পরিচালনা করে, ১৪ জানুয়ারি গভীর রাতে দূর্গম এলাকা থেকে গ্রেফতার করে এবং বর্নিত আসামীর ব্যবহৃত ডিভাইস গুলিকে যব্দ করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত আসামী উদয়ন ত্রিপুরা,বলং হামারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, অভিযুক্ত শিক্ষক খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার অমৃত পাড়া এলাকার রঞ্জিত ত্রিপুরার ছেলে।
উক্ত ঘটনার বিষয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায়
পন্মোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মুক্তা ধর পিপিএম (বার) এর কাছে জানতে চাইলে, বর্নিত বাদীর মতো আমাদের সমাজের অনেকেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে। মুলত এই ধরনের অপরাধের প্রতিরোধে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। নিজেদের ব্যক্তিগত ও একান্ত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা কারো সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্ম ও ডিভাইস সমুহ সিকিউরড করার সকল পন্থা অবলম্বন করতে হবে। নিরাপদ নয় এমন কোন লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার না করা বা প্রাইভেসি “অনলি মি”রাখা। সর্বোপরি কেউ সাইবার অপরাধের শিকার হলে ভিকটিমকে প্রেসার না দিয়ে ভিকটিমের পাশে থেকে যত দ্রুত সম্ভব আইনের আশ্রয় নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। ধৃত আসামীকে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। সাতদিনের রিমান্ড ও দাবি করে পুলিশ।