মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান, (বান্দরবান)
বান্দরবানের লামায় ‘জোড়মনি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের’ ৩ একর জায়গার মধ্যে ২ একর ৬০ শতক জায়গা জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সময়ে স্কুলের বেদখল হওয়া জায়গা থেকে কয়েক লাখ টাকার গাছ কেটে বিক্রি ও স্কুলের জায়গা জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে খোদ স্কুলের এসএমসি কমিটির সদস্য আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে। এদিকে স্কুলের জায়গা উদ্ধারে দফায় দফায় বৈঠক করা হলেও ক্ষমতাশীলদের হাত থেকে স্কুলের বেদখল হওয়া জায়গা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে সর্বশেষ গত ১৩ নভেম্বর ২০২৩ইং সোমবার স্কুলের এসএমসি কমিটির সদস্য সহ অভিভাবকদের উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে স্কুলের জমিদাতা জোড়মনি ত্রিপুরার নাতি বাছারাম ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, তারা দাদা স্বর্গীয় জোড়মনি ত্রিপুরা ১৯৬৫ সালে জোড়মনি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সময়ে স্কুলের নামে তিন একর জায়গা দান করে। বর্তমানে স্কুল ৪০ শতকের মত জায়গা দখলে আছে। বাকী জায়গা আশপাশের লোকজন দখল করে নিয়েছে। তিনি জনস্বার্থে স্কুলের জায়গা পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেন।
নাম প্রকাশ না করা সত্তে¡ স্কুলের কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ২০১৯ থেকে দেশে করোনা মহামারী শুরু হয়। এসময় ২/৩ বছর স্কুল বন্ধ ছিল। এই সুযোগে ২০১৯ সালে স্কুলের ১০ ফুট পিছনে একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে প্রায় দেড়/দুই একর জায়গা দখল করে নেয় স্কুলের এসএমসি কমিটির সদস্য আব্দুল আলিম ও তার ছেলে নাছির উদ্দিন। এছাড়া অন্যান্য পাশের সীমানায় থাকা লোকজনও কিছু জায়গা দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে স্কুলের দখলে ৪০ শতকের বেশি জায়গা নেই। স্কুলের পিছনের প্রায় এক একর জায়গার গাছ ব্যবসায়ী গফুর সওদাগরকে বিক্রি করে দিয়েছে এসএমসি কমিটির সদস্য আব্দুল আলিম। সরেজমিনে গেলে দেখা যায় গত একমাস ধরে প্রায় এক একর জায়গার একাশি বেলজিয়ার প্রজাতির ১০/১২ বছর বয়সী গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ী গফুর সওদাগর।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল কবির বলেন, আমি আসার পর স্কুলের জায়গার কাগজপত্র পায়নি। স্কুলের জায়গা কি পরিমাণ আছে তা ঠিকমত আমি জানিনা। তবে স্কুলের বেশ কিছু জায়গা বেদখল আছে, বিষয়টি জানি। জায়গা উদ্ধারে অনেকবার বৈঠক ও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
স্কুলের এসএমসি কমিটির সভাপতি ও সরই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীতিপূর্ণ বড়ুয়া বলেন, স্কুলের জায়গা এখনো পরিমাপ পরিচিহ্নিত হয়নি। কিভাবে স্কুলের জায়গার গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন আমি কিছু জানিনা। আমি নিজেও একটি স্কুলের দায়িত্বে আছি। আমার স্কুলের দায়িত্ব পালন শেষে ওই স্কুলের কাজ করার সময় আমার নেই। দেখি কি করা যায়।
সরই ইউপি চেয়ারম্যান মোহাং ইদ্রিস কোম্পানী বলেন, স্কুলের গাছ কাটার বিষয়টি জানতে পেরে আমি গাছ কাটা বন্ধ রাখতে বলেছি। দ্রুত স্কুলের কমিটির লোকজন নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে। আব্দুল আলিমের গাছ কাটার জায়গা স্কুলের হলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এই বিষয়ে কথা হয় আবদুল আলিমের সাথে৷ তিনি বলেন জায়গার যার হোক, গাছ আমি লাগিয়েছি। চেয়ারম্যান বলেছে তাই আপাতত বাকী গাছ কাটা বন্ধ রেখেছি। স্কুলের জায়গার গাছ আপনি কাটছেন কেন? এমন প্রশ্ন করলে তিনি নিউজ না করতে অনুরোধ করেন। আমি আপনার সাথে কথা বলব।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু নোমান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। জেনে স্কুলের জায়গা উদ্ধারে উদ্যোগ নিব। মাসিক শিক্ষা কমিটির সভায় বিষয়টি এজেন্ডা হিসাবে উপস্থাপন করা হবে।