আরিফুর রহমান স্বপন, লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
লাকসাম রেলওয়ে জংশনের টিএক্সআর বিভাগের টুল ভ্যানের যন্ত্রপাতি চুরির ঘটনায় এখনো উদ্ধার হয়নি খোয়া যাওয়া যন্ত্রপাতি। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল (চট্টগ্রাম) বিভাগ।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল (চট্টগ্রাম) বিভাগের এটিও, এএমই ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমান্ডেন্টকে সদস্য করে ওই তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কার্য দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পূর্বাঞ্চল (চট্টগ্রাম) বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবিদুর রহমান।
এদিকে টুল ভ্যানের খোয়া যাওয়া প্রায় দুই লাখ টাকার যন্ত্রপাতি উদ্ধার এবং চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে এখনো সনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে চুরির ওই ঘটনাটি রহস্যজনক বলে ধারণা করছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ আগষ্ট রাতে ওই চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন লাকসাম টিএক্সআর বিভাগ। টুল ভ্যানের ওই বগিটি লাকসাম রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী অফিসের পাশে থাকায় চুরির ঘটনাটি রহস্যজনক বলে ধারণা করছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা। পাশাপাশি টুল ভ্যানের ওই বগিটি ঘিরে সেখানে রেলওয়ের নিরাপত্তা বেস্টুনিও রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেলওয়ের ট্রেন দূঘর্টনা বা ট্রেনে যে কোন ধরণের সমস্যা দেখা দিলে সেটি প্রাথমিক মেরামত এবং ট্রেনের বগি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বহন ও সংরক্ষণের জন্য বিশেষ এই টুল ভ্যানিটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ওই টুল ভ্যানটি লাকসাম রেলওয়ের টিএক্সআর বিভাগের হলেও সেটি রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসের পাশেই রক্ষিত থাকে। রেলওয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লাকসাম নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্ব অবহেলার কারণেই এ ধরণের চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী।
রেলওয়ে এলাকার স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি রেলওয়ে স্টেশনের সামনে একটি মোবাইল দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মোবাইল চুরি করে নিয়ে গেছে দূর্বৃত্তরা। এছাড়াও দুইটি বাইসাইকেল চুরির ঘটনাও ঘটেছে এখানে। রেলওয়ের বাসাবাড়িতে ঘটছে প্রতিনিয়ত চুরির ঘটনা। ফলে লাকসাম রেলওয়ে জংশন এলাকা এখন চোরের আখড়ায় পরিনত হয়েছে।
এদিকে, গত ৩০ আগষ্ট রেলওয়ের পূর্বাঞ্চাল (চট্টগ্রাম) বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রেললাইন পরিদর্শন করতে এসে টুল ভ্যানের যন্ত্রপাতি চুরির ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
অপরদিকে, গত বছরের ৩০ জুন লাকসাম রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ সহকারী প্রকৌশলী কার্যালয়ের হেড টিএক্সআর মো. জাকির হোসেন সিক লাইন, ক্যারেজ টুল ভ্যানসহ স্টোর রুমের আশেপাশে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য বিবিধ/৮/লাক/২২ নং স্মারকে লাকসাম রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সিআইকে একটি পত্র প্রেরণ করেছেন। ওই চিঠির সৃত্র ধরে চট্টগ্রাম ক্যারেজ এন্ড ওয়াগন বিভাগের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী সাজিদ হাসান নির্ঝর ওই বছরের ২৮ আগষ্ট ৫৪.০১.১৫০০.২৬৫.০২.০২৩.১৭ নং স্মারকে চট্টগ্রাম নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডেন্টকে লাকসাম রেলওয়ের সিক লাইন, ক্যারেজ টুল ভ্যানসহ স্টোর রুমের আশেপাশে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য আরেকটি চিঠি প্রেরণ করেছেন।
এছাড়াও এ বছরের গত ১৭ জুন লাকসাম রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ সহকারী প্রকৌশলী কার্যালয়ের হেড টিএক্সআর মো. জাকির হোসেন সিক লাইনে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য বিবিধ/লাক/২৩ নং স্মারকে লাকসাম রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সিআইকে আরেকটি পত্র প্রেরণ করেন। তবে এসবের কোন পদক্ষেপ না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে লাকসাম নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লাকসাম নিরাপত্তা বাহিনীর সিআই সালামত উল্ল্যাহ দায়িত্ব অবহেলার কথা অস্বীকার করে বলেন, টুল ভ্যানটি সীলগালা করা ছিলনা এবং টুল ভ্যানটি সীলগালা করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।
লাকসাম রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ সহকারী প্রকৌশলী কার্যালয়ের হেড টিএক্সআর মো. জাকির হোসেন বলেন, নিরাপত্তার বিষয়ে বারবার চিঠি দেয়ার পরও নিরাপত্তা বাহিনী তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেননি। টুল ভ্যানটি প্রতিদিন খোলা হয়ে থাকে যন্ত্রপাতি চেকআপের জন্য। ওই দিন চেকআপের জন্য খুলতে গিয়ে টুল ভ্যানের তালা ভাঙা অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এখানে অবশ্যই নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে লাকসাম রেলওয়ে থানার ওসি মাসুদ আলম জানান, টুল ভ্যানের প্রায় এক লাখ চুরান্নব্বই হাজার টাকার যন্ত্রপাতি চুরির ঘটনায় লাকসাম রেলওয়ের হেড টিএক্সআর মো. জাকির হোসেন থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে।