• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম
দাগনভূঞা সরকারি হাসপাতালে আস্থা ফিরেছে রোগীদের – ক্রমান্বয়ে বাড়ছে রোগী, কনসালটেন্ট ও জনবল সংকটে চরমে ইসলামি ফাউন্ডেশন উদ্যোগে মহিলাদের মধ্যে সেলাই মেশিন ও ভাতা প্রদান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পরিদর্শনের এ.এস.এম এমদাদুল কবীর মাগুরায় সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রের জমি দখলের পায়তারা, আতংকে শাপলা হকের পরিবার খাগড়াছড়িতে জেলা পর্যায়ে জাতীয় শিশু কিশোর ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, পুরস্কার ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠিত  কমলনগর উপজেলার আগামী দুই বছরের জন্য আমির হিসাবে নির্বাচিত হলেন মাওলানা আবুল খায়ের মোল্লাহাটে বিষাক্ত রাসায়নিক জেলি পুশকৃত চিংড়ি জব্দ সিন্দুকছড়ি জোনে মাসিক মতবিনিময় সভা অনুষ্টিত মণিরামপুরে আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা দীঘিনালায় আইন শৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত নারী-শিশু নির্যাতন, মানবপাচার ও যৌতুক প্রতিরোধে রাঙ্গামাটিতে ইফা’র সভা অনুষ্ঠিত কাপ্তাইয়ে ভোক্তা অধিকারের অভিযানে ৬৫০০ টাকা জরিমানা

ইতালি যাওয়ার পথে শরীয়তপুরের ৪ যুবক নিখোঁজ

মাসুদ রানা, স্টাফ রিপোর্টার / ৪৫৬৪ জন পড়েছেন
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৩

শরীয়তপুরের চার যুবক লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, শরীয়তপুরের ডামুড্ডা উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গংগেসকাঠি গ্রামের দালাল বাচ্চু ব্যাপারীর খপ্পরে পড়ে ওই চার যুবক প্রথমে লিবিয়া যান। পরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন তারা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার শরীয়তপুর আদালতে বাচ্চু ব্যাপারী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

নিখোঁজ শওকত ফকিরের পরিবার জানায়, পরিবারের অভাব দূর করতে গত বছরের অক্টোবরে লিবিয়া যান শওকত ফকির। সেখান থেকে সমুদ্রপথে রওনা দেন ইতালির উদ্দেশে। এরপর চার মাস ধরে পরিবার তাঁর কোনো সন্ধান পাচ্ছে না। তিনি বেঁচে আছেন- নাকি মারা গেছেন, এ খবরও কেউ জানেন না।

এদিকে, ছেলের খোঁজ পাবেন- এমন আশায় মা সুফিয়া বেগম চোখের পানি ফেলে যাচ্ছেন। শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়নের দড়িহাওলা গ্রামের রুপচাঁন ফকির ও সুফিয়া বেগম দম্পত্তির বড় ছেলে শওকত ফকির। চার ভাই এক বোনের মধ্যে বড় শওকত। তাঁর মিনহা, মিথিলা নামে দুইটি মেয়ে রয়েছে।

নিখোঁজ শওকত ফকিরের মা সুফিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিযোগ করে বলেন, ‘ইসলামপুর ইউনিয়নের দালাল বাচ্চু ব্যাপারী আমার ছেলেকে ইতালি নেবে বলে প্রথমে সাত লাখ টাকা নেয়। পরে ইতালি না নিয়ে আমার ছেলেকে লিবিয়া পাঠায়। লিবিয়া নিয়ে মাফিয়াদের হাতে তুলে দেয় বাচ্চু। ছেলেকে মারধর করে আরও চার লাখ টাকা দাবি করে। আমি চোখে মুখে কিছু না দেখে বিভিন্ন এনজিও ও গয়না বিক্রি করে আরও চার লাখ টাকা দিই। মোট ১১ লাখ টাকা দিয়েছি বাচ্চুকে। পরে গত ২১ রমজানে বাচ্চু মোবাইলফোনে বলে, আগামীকাল ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে শওকতকে লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠাবে। এরপর থেকে বাচ্চুর মোবাইল বন্ধ।’

সুফিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘তিনি (বাচ্চু) আর যোগাযোগ করেনি আমাদের সঙ্গে। আর আমার ছেলেও নিখোঁজ। ছেলের কোনো খোঁজ খবর নেই। আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। আর টাকা ফেরত চাই। তাই শরীয়তপুর আদালতে বাচ্চু ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি।’

শুধু শওকত ফকিরই নন, চার মাস ধরে নিখোঁজ আছেন ডামুড্যা উপজেলার ধানকাঠি ইউনিয়নের মডেরকান্দি গ্রামের আলী আকবর, ইসলামপুর ইউনিয়নের বিন্দাইকাঠি গ্রামের কামাল ব্যাপারী ও ফয়সাল মাদবর। অভিযোগ উঠেছে, এই যুবকদের ১১ লাখ টাকায় ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা দালাল বাচ্চু ব্যাপারীর। কিন্তু তা না করে ৭ লাখ টাকা করে নিয়ে লিবিয়া নেন তাদের। পরে লিবিয়া নিয়ে মাফিয়ার ভয় দেখিয়ে চার লাখ টাকা করে পরিবারের কাছে আদায় করেন বাচ্চু। প্রতিটি পরিবার ঋণ করে বাচ্চু ব্যাপারীকে টাকা দিয়েছেন বলে জানান।

নিখোঁজ আলী আকবরের মা মাসুদা বেগম বলেন, দারিদ্র্যের কারণে তাঁর ছেলে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে কাজ নেন। এরপর হঠাৎ ইতালি যাওয়ার বায়না ধরেন। এনজিও থেকে ঋণ ও ধার-দেনা করে তাঁকে ইতালি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন মা। তাঁদের পাশের গংগেসকাঠি গ্রামের বাচ্চু ব্যাপারীর সঙ্গে ১১ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। দুই দফায় বাচ্চুর বাবা মজিবর ব্যাপারীর কাছে টাকা দেন। লিবিয়া নিয়ে প্রথমে চার মাস আটকে রাখেন। এরপর আবার টাকা পাঠানোর পর ‘গেম দিতে’ (ট্রলারে করে সাগর পাড়ি দিতে) রাজি হন। ছেলে ১২ এপ্রিল রাতে ফোন দিয়ে জানায়, পরদিন তাঁদের নিয়ে ট্রলার ইতালির উদ্দেশে রওনা দেবে। এরপর আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।

ভুক্তভোগী পরিবার নিখোঁজ চারজনের মধ্যে কারও রয়েছে সন্তান, কারও বা স্বামী। এ অবস্থায় চরম উদ্বেগে দিন কাটছে পরিবারগুলোর। তারা জানান, বাচ্চুর লোকজন এলাকায় প্রচার করছে, ট্রলারডুবিতে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জেলার মানুষ বিদেশে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা ধার করে, সুদ ও ঋণ করে দালাল চক্রের হাতে টাকা দেন সন্তানকে ইতালি যাওয়ার জন্য। পরে দেখা যায়, ইঞ্জিনচালিত নৌকায় দালালেরা তাদের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পাঠাচ্ছে। কিন্তু সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় অনেক যুবকের মৃত্যু হয়। তাছাড়া দালালরা তাদের মাফিয়াদের হাতে তুলে দেয়। পরে মাফিয়ারা মুক্তিপণ দাবি করে।’

এদিকে, ঘটনার পর থেকে লাপাত্তা অভিযুক্ত বাচ্চু বেপারী। তাঁর বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম বলেন, অনেকেই বৈধ পথ পরিহার করে অবৈধ পথে বিদেশ যেতে চেষ্টা করছে। অবৈধ পথে যাওয়ার জন্য তারা দালালের মাধ্যমে টাকা দিচ্ছে। সেই টাকা মার যাচ্ছে, অথবা অপহরণের স্বীকার হচ্ছে। তাছাড়া সমুদ্র পথে যাচ্ছে ও বিদেশে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাচ্ছে না। তারা দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। এতে যেটা হচ্ছে, যে যাচ্ছে সেই যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শুধু তাই না। তাঁর পরিবারসহ সকলেই কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই আমি বলব, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করুন। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি মানবপাচার রোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান পুলিশ সুপার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ