খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার মহামুনি পাড়ার ২যুবক সংসারে স্ত্রী, সন্তানাদি রেখে স্বর্ণালংকার, ঋণে ক্রয় করা মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন সমিতি থেকে নেওয়া মোটা অংকের টাকাসহ পরকীয়া দুই নারী নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পাড়া ও বৌদ্ধ সমাজে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। লাখ লাখ টাকা ঋণের কিস্তি, কর্জ ও সন্তানাদি নিয়ে দুশ্চিন্তায় স্ত্রীরা।
পরিবার ও পাড়া প্রধান সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মহামুনি বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণে মহামুনি পাড়ার নিবাইঅং মারমা(২৮) ও স্ত্রী ময়ূরী মারমা সংসারে ৫ বছর বয়সী এক পুত্র সন্তান ও ৯ মাস বয়সী কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিবাইঅং মারমা পেশায় কাঠমিস্ত্রী হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় মানুষ ঘর, দরজা ও আসবাবপত্র তৈরির কাজ করত। সে এলাকার থোইঅংগ্য মারমা পুত্র।
সম্প্রতি সে আশা সমিতি থেকে স্ত্রীর নামে ৯০ হাজার টাকা ও দি মারমা কো-অপারেটিভ লিমিটেড থেকে স্ত্রীর নামে ৩০ হাজার টাকা এবং ১লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি মোটরসাইকেল ক্রয় করেন। এছাড়া বাড়ির আশপাশ থেকে কর্জ(ধার) হিসেবে আরও লক্ষাধিক নিয়ে হঠাৎ গত ১আগস্ট সন্ধ্যার পর ঘরে থাকা স্বর্ণালংকার নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়। একই দিন ঘণ্টা খানেক পর লাব্রেঅং মারমা (৩০) ঘরে স্ত্রী রেজিমা মারমা ও ৫বছর বয়সী কন্যা ও ৩ বছর বয়সী পুত্র সন্তান রেখে ঘরে থাকা ২টি স্বর্ণের চেইন ও বিভিন্ন সমিতি থেকে নেওয়া ঋণ বাবদ প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা কর্জ রেখে নিরুদ্দেশ হয়। সে একই পাড়ার আচাফা মারমা পুত্র। পেশায় কাঠমিস্ত্রী।
এ ঘটনা জানাজানির পর পাড়ায় তোলপাড় শুরু হলে উভয়ের সন্ধানে পরিবার,আত্মীয়-স্বজনেরােরা চারিদিকে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন যে, নিবাইঅং মারমা রামগড় উপজেলা থেকে এবং লাব্রেঅং মারমা লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা থেকে ২ যুবতীকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। পরে স্ত্রী ময়ূরী মারমা ও রেজিমা মারমা বিষয়টি পাড়া প্রধান(কার্বারী) ক্যজাই মারমাকে অবহিত করেন। ময়ূরী মারমা এ বিষয়ে পার্বত্য কন্ঠকে বলেন, আমার স্বামী কাঠমিস্ত্রীর কাজ করার সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে, থেকে মানুষের ঘর, দুয়ার বানায়। কিছু দিন আগে আশা সমিতি থেকে ৯০ হাজার টাকা ও আমাদের দি মারমা কো-অপারেটিভ লিমিটেড থেকে ৩০ হাজার নগদ টাকা ও ১লাখ ৩৭ হাজার টাকা মূল্যে একটি মোটরসাইকেল কিনে। গাড়ী কিনতে আমি জাবিনদার হই এবং ঋণগুলো আমার নামে নেওয়া। এছাড়াও বাড়ির আশপাশে লক্ষাধিক টাকা ধার নেওয়া আছে। আমাকে এত্তগুলা টাকার চাপে ফেলে পরকীয়া করে চলে যাওয়ায় আমি চোখেমুখে কিছু দেখছি না! ছোট শিশু ও ৫ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে এবং রাত পোহালে ঋণের কিস্তি কিভাবে আদায় করব? আমি কি করব জানে না! তিনি আরও বলেন, একই পাড়ার রেজিমার স্বামীও স্বর্ণালংকার(২টি চেইন), নগদ দেড় লাখ টাকা এবং সাড়ে ৩ লাখ টাকার ঋণ রেখে লক্ষ্মীছড়ি থেকে এক মারমাকে মেয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাড়া প্রধান বা কার্বারী ক্যজাই মারমা ওরফে ক্যজ কার্বারী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমাদের মারমা সমাজে একাধিক বিয়ে করার নিয়ম নেই। গত কিছু দিন ধরে এই পরিবারের স্ত্রী ময়ূরী মারমা ও রেজিমা মারমা তাদের স্বামীর পরকীয়া করে মর্মে তারা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। আমি অভিযুক্ত নিবাইঅং মারমা ও লাব্রেঅং মারমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করব,করব ভাবতেই গত ১আগস্ট রাতে তারা পালিয়ে গেল! ২আগস্ট সকাল থেকে চারিদিকে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি তারা দুইজনে দুইজন যুবতী নারী নিয়ে ওই দিন( গত মঙ্গলবার)রাতে জালিয়াপাড়া -সিন্দুকছড়ি সড়ক হয়ে মহালছড়ির দিকে যেতে অনেকে দেখেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। তাদের বর্তমান অবস্থানের তথ্য পাওয়া গেলে বিষয়টি সমাধান সহজ হতো। তবে তাদের স্ত্রীরা ঋণের কিস্তি, সন্তানাদি নিয়ে কষ্ট পাচ্ছে! এত্ব টাকার ঋণের কিস্তি, কর্জ শোধের সাধ্য তাদের নেই।