ফলের রাজ্য খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় বিভিন্ন টিলায়, বাড়ির আঙ্গিনা ও ছাদে ড্রাগন চাষ বাড়ছে। সৃজিত গাছ এখন ফুল-ফলে নজর কাড়ছে । ক্যাকটাস জাতীয় বৃক্ষ ড্রাগন মূলত ‘বেটা কেরোটিন ও ভিটামিন সি’ সমৃদ্ধ সুস্বাদু ও উচ্চ ফলনশীল ফল। শাঁস গাঢ় গোলাপি রংয়ের দানাযুক্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ এই ফল চাষাবাদে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে । এ বছর উপজেলায় প্রায় ৮হেক্টর বাগানে ৮০ মেট্টিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে কৃষি বিভাগ। স্থানীয় বাজারে কেজি ৩০০ টাকা হলেও শহরে ৫০০ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে এই সুস্বাদু ফল ড্রাগন । নতুন বাগানের ফল ওজনে ২৫০-৩০০ গ্রাম হলেও ৫/৭ বছর বয়সী গাছের প্রতিটি ফল ৪৫০-৫০০ গ্রাম হয়ে থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় ও বাগান মালিকেরা জানান, দীর্ঘস্থায়ী ও সুস্বাদু ড্রাগন ফল চাষে উদ্ধুদ্ধ হয়েছে এখানকার ২০/২৫জন শৌখিন বাগান মালিক। এদের সৃজিত ড্রাগন প্রথমে স্থানীয় বাজারে কেনাবেচা হলেও অচেনা ও সুস্বাদু ফলটি এখন মূখরোচক ফল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। উপজেলায় ৭হেক্টরের অধিক টিলা ও ১ হেক্টর সমপরিমাণ বাড়ির ছাদ ও আঙ্গিনায় ড্রাগন সৃজন করেছে মানুষ। গত মৌসুমে এর পরিমাণ ছিল ৬হেক্টর।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে এ বছর ড্রাগনের ফলন ভালো হওয়ার লক্ষণ রয়েছে। যার পরিমাণ হতে পারে ৮০ টনের কাছাকাছি। জুনের শুরু থেকে ড্রাগন গাছের ডগায় ডগায় ফুল আসা শুরু হয়। সবুজের ডগায় ডগায় ফল পেকে লাল, লাল হয়ে লোভনীয় স্বাদে ভোক্তাদের মন কাড়ছে এখন। নতুন বা কম বয়সী বাগানের ফল ২৫০-৩০০ গ্রাম। কেজি ৩০০ টাকায় বাগান থেকে কিনে নিচ্ছে ক্রেতা ও পাইকারেরা। আর ৫/৭ বছর বয়সী গাছের ফল ৪৫০-৫০০ গ্রাম। কেজি ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
গতকাল রোববার বিকেলে বড়ডলু ডিপি পাড়াস্থ
নাসির এগ্রো জোনে গিয়ে দেখা গেছে, ৬একর টিলা ভূমিতে সৃজিত বাগানে প্রথম বারের ফল-ফুলে বাগানে সমাদৃত। বাগানের ম্যানাজার মোহাম্মদ সাইমন জানান, এ বছর প্রথম ফলন হিসেবে ৬একরে ১৫ টন ফল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
অন্যদিকে গাড়ীটানাস্থ প্রফেসর মো. মাসুদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমার ৬বছর বয়সী ৪হাজার পিলারে এবার লক্ষ্যমাত্রা ২০ টন। জুন-আগস্ট ৩ মাসে অন্তত ৫/৬ বার ড্রাগন ফল কাটা সম্ভব। দিন দিন ড্রাগনের পুষ্টি গুণাগুন উপলব্ধি করার পর এখন ড্রাগন চাষ ও খাওয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার নাথ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ক্যাকটাস জাতীয় বৃক্ষ ড্রাগন মূলত ‘বেটা কেরোটিন ও ভিটামিন সি’ সমৃদ্ধ সুস্বাদু ও উচ্চ ফলনশীল একটি ফসল। শাঁস গাঢ় গোলাপি রংয়ের দানাযুক্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ এই ফলটি চাষাবাদ এবং বাজারজাতে বড়বিল, চেঙ্গুছড়া, কর্ণেল বাগান, কুমারী, পূর্ব তিনটহরী, বরইতলী, বড়ডলু মাস্টার পাড়া,গাড়ীটানা এবং সদরের বাসাবাড়ির ছাদ ও আঙ্গিনায়ও ড্রাগন চাষ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মহি উদ্দীন আহমেদ বলেন, বেটা কেরোটিন ও ভিটামিন সি’ সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল অত্যান্ত সুস্বাদু ও উচ্চ ফলনশীল ফসল। বর্তমানে উপজেলার প্রায় ৮ হেক্টর ভূমিতে ড্রাগনের চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ মেট্রিক টন। রোগ-বালাই ও পুঁজি কম এবং অধিক ফলনের সুযোগ থাকায় পাহাড়ে ড্রাগন চাষ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তৃণমূলে লাভবান ও পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল চাষাবাদে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
পার্বত্যকন্ঠ নিউজ/এমএস