সরেজমিন ও কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী , উপজেলার সেম্প্রুপাড়া ও ডাইনছড়ি গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বাণিজ্যিক ভাবে পেঁপে চাষে বাজিমাত দেখিয়েছে কৃষকেরা। কৃষি বিভাগের রেকর্ডে গত অর্থ বছর ২০২২-২০২৩ উপজেলায় পেঁপে চাষ হয়েছে ৭০হেক্টর। উৎপাদন হয়েছে ৭৭০ মেট্রিক টন। এবার চাষ বেড়ে ১০০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে।
এখানকার সফল কৃষক ও সেম্প্রুপাড়া কালেকশন পয়েন্ট কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি মো.ফোরকান বলেন, কৃষি পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র এলাকার চাষিদের জীবনমান পাল্টে দিয়েছে। প্রান্তিক কৃষকেরা সেবাদানকারীদের শলাপরামর্শ নিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি অবলম্বন করে উৎপাদিত পণ্য নিজ এলাকায় সংগ্রহ কেন্দ্রে এনে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করছে। ৪০ শতক জমি চাষে ২লাখ টাকা ব্যয়ে বিক্রি হবে অন্তত ৫-৬ লাখ টাকা। এক টন পেঁপে স্থানীয় পর্যায়ে ৪৫-৫০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোন কৃষক এক টাকাও মধ্যস্থভোগী বা সরকারকে টোল দিতে হয় না। উপজেলার চার ইউনিয়নে চারটি সংগ্রহ কেন্দ্র ও একটি মাস্টার কেন্দ্র রয়েছে।
৩৯টি পাড়া কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত শতাধিক প্রান্তিক কৃষকের পাশাপাশি এলাকার সাধারণ কৃষকেরাও কৃষিপণ্য সহজে ও প্রকৃত বাজারমূল্যে বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছে।
পান্নাবিলের সফল পেঁপে চাষি রিংকু মল্লিক ও ডাইনছড়ির মো. হানিফ বলেন, জেলা পরিষদের উদ্যোগে এখানকার হাজারো কৃষক পেঁপে চাষে প্রশিক্ষণ পেয়ে এবং নিয়মিত উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে আজ শতশত কৃষক পেঁপে চাষ করে লাভবান হয়েছে। উচ্চফলনশীল এসব পেঁপে গাছ একবার লাগালে ২বছর ফল দিবে। পেঁপেতে ব্যয়ের ৩গুন লাভ হয়। গাছের গোড়ায় পানি না জমিয়ে শুষ্কমৌসুমে সেচ ও বর্ষায় দ্রুত পানি নিষ্কাশনে সজাগ থাকা জরুরী।
সেম্প্রুপাড়ার সফল কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি গত বছর ৪০ শতক জমি থেকে সাড়ে ৫লাখ টাকার পেঁপে বাজারজাত করেছি। আমার ব্যয় হয়েছিল প্রায় ২লাখ টাকা। এবার আমি ১৬০ শতক বা ৪কানি জমিতে পেঁপে লাগিয়েছি। গাছে ফুল ও ফল আসতে শুরু করেছে।
প্রান্তিক কৃষক মো. আবু তাহের, মো. শামীম, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. নুর ইসলাম, দ্বীন ইসলাম, মো. হাশেম, আবু মারমা, রেদু মারমা ও মংক্যজাই মারমার সাথে আজকের পত্রিকার কথা হলে তাঁরা জানান, উচ্চমূল্যের ফসল পেঁপে চাষ করে আমরা এখন সবাই স্বাবলম্বী। কৃষিপণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র বা কালেকশন পয়েন্টের মাধ্যমে দেশের বড় বড় বাজারে কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পেরে এলাকার কৃষকরা সবাই খুশি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মহি উদ্দীন আহমদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, কৃষিনির্ভর জনপদে আধুনিক কৃষি পণ্য চাষাবাদে সরকারের পাশাপাশি জেলা পরিষদও কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে তৃণমূলে কৃষক মাঠ স্কুল ও পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপনের ফলে প্রান্তিক কৃষকেরা উৎপাদিত মালামাল বিক্রির বিষয়ে চিন্তা করতে হয় না। সমতলের পাইকারেরা সরসরি সংগ্রহ কেন্দ্র এসে বা মোবাইলে পণ্য কিনে নিচ্ছে।
এতে মধ্যস্থভোগীর হাতে কৃষকদেরকে প্রতারিত হতে হচ্ছে না। ফলে প্রান্তিক কৃষক পেঁপে চাষাবাদ ও পণ্য বাজারজাতে কৃষকেরা বাজিমাত করছে। এবার অন্তত ১০০ হেক্টরের কাছাকাছি জমি পেঁপে চাষের আওতায় এসেছে।
পার্বত্যকন্ঠ নিউজ/এমএস