বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারি কাম হিসাব রক্ষক (ইউডিএ) খুঁটির জোর কোথায়? শিক্ষকদের সাথে অসাদাচরণ, দুর্নীতি-অনিয়ম, আর্থিক হয়রানীর বিরুদ্ধে ৫৭ জন প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকের অভিযোগের সাড়ে তিনমাস পার হলেও ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালকের নির্দেশের দুইমাস পর বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এডিপিও গত ২৪ জানুয়ারি এ অভিযোগের তদন্ত করেন। এ সময় ৫২ জন শিক্ষক তদন্ত কর্মকর্তার নিকট লিখিত ও মৌখিক সাক্ষ্য দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এডিপিও’র তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও বহাল তবিয়তে আছেন অভিযুক্ত ইউডিএ নাছির। উপজেলার চম্পট পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হক বলেন, আলীকদমের ৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পক্ষে আমরা ৫৭জন প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিসের ইউডিএ নাছিরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগের কপি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালকের নিকট পাঠাই। কিন্তু অভিযোগের সাড়ে তিনমাস পার হলেও ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর উপজেলার ৫৭ জন শিক্ষক গত ১৩ নভেম্বর আলীকদম শিক্ষা অফিসের ইউডিএ নাছিরের বিরুদ্ধে ১৫ অনুচ্ছেদের সুনির্দ্ধিষ্ট একটি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২২২০/১ নম্বর স্মারকে গত ২২ নভেম্বর তদন্তের নির্দেশ দেন বিভাগীয় উপপরিচালক। এ নির্দেশের ২ মাস পর গত ১৭ জানুয়ারির ৫১(৪) নম্বর স্মারকের নির্দেশে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গত ২৪ জানুয়ারি আলীকদম শিক্ষা অফিসে গিয়ে তদন্ত করেন।
প্রাপ্ত অভিযোগে প্রকাশ, আলীকদম উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারি কাম হিসাব রক্ষক (ইউডিএ) মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বিগত একযুগেরও বেশী সময় ধরে আলীকদম শিক্ষা অফিসে কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার কারণে ক্ষমতার অপব্যবহার, শিক্ষকদের আর্থিক হয়রানী, অশোভনীয় আচরণ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, হুমকী-ধমকী, সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক কথাবার্তা এবং দুর্নীতি-অনিয়মে ডুবে আছেন। শিক্ষকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ইউডিএ নাছিরের অত্যাচারে প্রধান শিক্ষক থেকে সহকারি শিক্ষক সকলেই অতীষ্ট।
শিক্ষকদের অভিযোগে জানা গেছে, ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ইউএনডিপি আলীকদমের দুর্গম এলাকায় ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করেছিল। এসব বিদ্যালয় ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয়করণের পরিকল্পনার উদ্যোগ নেয় পার্বত্য জেলা পরিষদ। শিক্ষক তালিকা করার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার ও তথ্য গোপন করে স্কুলে স্থানীয় শিক্ষক থাকা স্বত্তেও অভিযুক্ত ইউডিএ মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন সেইসব বিদ্যালয়ের মধ্যে ‘রাইতুমনি পাড়া সপ্রাবি’তে তার স্ত্রী রিয়াজুল জান্নাত ও সহোদর ভাই মোঃ আব্বাস উদ্দিনকে, ‘পারাও পাড়া সপ্রাবি’তে তার সহোদর বোন মোতাহারা বেগম কে, ‘মেনক্য মেনকক পাড়া সপ্রাবি’তে তার মামাতো ভাই আরিফ উল্যাহকে, ‘বিদ্যামনি পাড়া সপ্রাবি’তে তার ভাগ্নে মোজাম্মেল হককে শিক্ষক হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে নেন। গত ১৩ এপ্রিল ২০২২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত শিক্ষক গেজেটে তারা চূড়ান্তভাবে নিয়োগ লাভ করেন।
একই কায়দায় জ্যোতি বড়ুয়া, উম্মে রুমান রুমি, ও লিপিকা শর্মা নামের আরো তিনজন শিক্ষককে মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ওই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত দেখিয়ে নিয়োগে সহায়তা করেন ইউডিএ নাছির। অভিযোগে শিক্ষকরা বলেন, তারা কেউ ২০১১ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্নের শিক্ষক নন। এসএমসি দ্বারা তারা নিয়োগপ্রাপ্তও নন। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দা নন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব শিক্ষকরা স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্কুল জাতীয়করণ এবং শিক্ষক গেজেটের সময়কাল থেকে ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বও পর্যন্ত ১১ বছর ১০ মাস ১৯ দিন ধরে একদিনের জন্য সেইসব বিদ্যালয়ে হাজির ছিলেন না। শিক্ষক হাজিরা খাতায় তাদের নামও নেই। গত জুন মাস থেকে বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা অফিসে প্রদত্ত এম.আর ফরমেও এসব শিক্ষকদের নাম নেই।
এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা বান্দরবান জেলার সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন তদন্তস্থলে এ প্রতিবেদককে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে শিক্ষকদের অভিযোগের বিচারের দায়িত্ব আমার হাতে। আমি ইনসাফভিত্তিক একটি তদন্ত প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হাতে দাখিল করবো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য দুংড়ি মং মার্মা বলেন, শিক্ষকদের অভিযোগের বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের গত মিটিংয়ে অভিযুক্ত ইউডিএ নাছিরের বিরুদ্ধে আলোচনা হয়েছে। এ সময় তাকে আলীকদম উপজেলা থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে। তবে এখনো কেন তাকে সরিয়ে নেয়া হয়নি সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।
এম/এস