রাবিতে আবাসিক হলের সামনে ট্রাকচাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাতভর বিক্ষোভও শিক্ষার্থীরা।এ সময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ৫ টি ট্রাকে আগুন দিয়ে প্রথমে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে পরে উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়।
এ সময় শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেয় প্রশাসন।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টায় শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে নির্মাণাধীন ভবনের পাথরবাহী একটি ট্রাক মোটরসাইকেল আরোহী তিন শিক্ষার্থীকে চাপা দেয়।এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন চারুকলা অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও রাবি ড্রামা অ্যাসোসিয়েশন (রুডা) সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাবিব হিমেল।এ ঘটনায় একই বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান রিমেলকে গুরুতর অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ সময় প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে দূর্ঘটনা স্থলে নিহত হিমেলের লাশটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় কয়েক দফা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়।পরে পৌনে ১১টায় লাশটি নিয়ে রামেক হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায় হয়। উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার এই ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করেন।এদিকে, দূর্ঘটনার খবর পেয়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী দূর্ঘটনাস্থলে এসে একত্রিত হয়। এ সময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নির্মাণের মালবাহী পাঁটি ট্রাকে আগুন দেয়।এ ছাড়া নির্মাণস্থলে ব্যাপক ভাঙচুর ও দুইটি কক্ষে অগ্নি সংযোগ করে। এ সময় পুলিশ ও ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বাধায় তারা ফিরে যায়।শিক্ষার্থীদের একটি অংশ রাতে প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়র তিন ঘন্টা অবরোধ করে। শিক্ষার্থীদের কিছু অংশ উপাচার্যের বাসভবনের সামনে টায়ার জালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।এ সময় গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা উপস্থিত হলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তারাও স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।আজ বুধবার রাত দেড়টায় উপাচার্য ভবনের সামনে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান রাজশাহী সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়েরুজ্জামান লিটন।এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু উপস্থিত ছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের বহিষ্কার সহ নিহতের পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ, নিহতের বোনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি প্রদান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পাল্টানো এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।এ সময় সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার নিহতের প্রতি শোক জানিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন।তিনি ঘোষণা দেন প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক লিয়াকত আলীকে করা হবে। এ ছাড়াও এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে একসাথে এই সমস্যার সমাধানকল্পে কাজ করার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।
এ সময় রাবির উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মোঃ জাকারিয়া, উপ-উপাচার্য প্রফেসর সুলতান উল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ডাবলু সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আব্দুল মমিন, সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম,সাধারণ সম্পাদক সিরাজুম মুবিন সবুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।