মহেশখালীর দিগন্ত জুড়ে ফসলের মাঠ এখন কাচা হলুদ সোনালী বর্ণে ঝলমল করছে। বিস্তৃর্ন ফসলের মাঠে দোল খাচ্ছে সোনালী বর্ণের পাকা ধান। নবান্নে শুরু হয়েছে ধান কাটার মহা উৎসব। আর তাই কৃষকের ঘরে ঘরে চলছে নবান্ন উৎসবের আমেজ। মাঠের সোনালি ধান এখন ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্বিঘ্নে ধান কাটা-মাড়াই ও শুকানোর কাজ করতে পারছেন কৃষান-কৃষানিরা। তাই ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে নবান্নের পিঠা-পুলির উৎসব। এ বছর আমন চাষে উৎসাহিত করতে ৪৫০ জন কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে সার ও বীজ প্রদান করেছে উপজেলা কৃষি অফিস।
মহেশখালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় ১৫ হাজার২৬৫ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ করা হয়েছে। তারমধ্যে পৌরসভা, ছোট মহেশখালী, বড় মহেশখালী, কুতুবজোম, কালারমারছড়া হোয়ানক, শাপলাপুর, মাতারবাড়ী, ধলঘাটা ইউনিয়নে আমনের চাষ ভালো হয়েছে। আমনে হাইবিড এরাইজ – ৭০০৬, ধানী গোল্ড- এসিআই, বিআর ১০, ১১, ২২, ২৩, উফশী জাত ৫১, ৫২, ৬২, ৭১, ৭২, ৭৫, ৭৬, ৭৮, বিনাধান ১১, ১৬, ১৭, ২০, ২২, ২৩, রাই চিকন, সাহেব চিকন, লাল মতি, বিন্নি, কালো জিরা, ও কুমড়া বৈলাম ধানের চাষ করা হয়েছে। ধানের ফলনও বেশ ভালো। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গ্রামে ধান কাটা শুরু হয়েছে। নতুন জাতের উফশীজাত ও হাইব্রিডে কৃষকে মুখে হাসি ফুটেছে। এ বছর উপজেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ হাজার ৯৭০ মে. টন। কামিতারপাড়া গ্রামের কৃষক হেলাল জানান, নবান্ন উৎসবের আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নতুন ধানের পায়েশ, পিঠা, পুলি ছাড়াও তৈরি করবেন হরেক রকমের মজাদার খাবার। নবান্ন উৎসবে প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজন বাড়িতে আগমন ঘটবে। একে অপরের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়া।
একই গ্রামের কৃষক শামশুল মিয়া জানান, করোনা মহামারির মধ্যেও এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের বাম্পার ফলনে তিনি বেজায় খুশি। কয়েক দিন পরেই নতুন ধান থেকে মজার মজার খাবার তৈরি করা হবে। নবান্ন উৎসবকে ঘিরে তিনি স্বজনদের দাওয়াত দেবেন। আটুলিয়ায় নবান্ন উৎসবে ছেলে মেয়েরা সারারাত আনন্দ উল্লাস করে। রয়েছে সেই আনন্দের অসংখ্য উদযাপনী স্মৃতি। তবে আগের মতো উচ্ছাস এখন দেখা মেলে না। আস্তে আস্তে এখানে নবান্ন উৎসব ফিকে হচ্ছে। আয়োজকরা অনেকেই এখন গ্রামের বাইরে বসবাস করেন। এ কারনে নতুন প্রজন্ম নবান্ন উৎসব সম্পর্কে জানেনা। জানেনা গভীর রাতে নলুনে রস ও গুড়ের চালের পিঠার স্বাদ। জানেনা ‘নতুন রসের কলের পিঠা খাওয়ার মজার কাহিনী’।
মহেশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মুমিনুল ইসলাম জানান, চলতি আমন মৌসমে ৩০০ কৃষকের মধ্যে হাইব্রিড ও ১৫০ জনকে উফশীজাতের ধানসহ মোট ৪৫০ জন কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে সার ও বীজ প্রদান করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন তিনি।