পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসন ও নানাভাবে প্রভূত সুযোগ সুবিধা দেওয়া ছাড়াও সেনাক্যাম্প গুটিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে লক্ষাধিক মানুষের জীবন অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছিল তৎকালীন সরকার। সেটি সঠিক নাকি ভুল ছিল তার ফলাফল এ প্রজন্মের নেতৃবৃন্দ হারে হারে টের পাচ্ছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এবং প্রয়োজনে নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকের অনেকে এ কথা বহুবার বলেছেন যে, সেনাবাহিনী না থাকলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বহু আগেই বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তো। এখনো চারদিক বারুদের গন্ধ, রক্তের হোলিখেলা, হিংসা-হানাহানি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি এবং গুম-খুন অপহরণের প্রতিযোগিতায় অশান্তির আগুন প্রতিনিয়ত আরো যেন উস্কে উঠছে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকাগুলো থেকে অর্ধশত সেনা ও পুলিশ ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নিরীহ জনগনের জানমালকে নিরাপত্তাহিনতার দিকে ঠেলে দিয়েছে তা স্বীকার করতে আমার আপত্তি নেই!
আসল কথায় আসি ,পাহাড়ের রাজনীতিতে দিন দিন যেমন ঘটছে পরিবর্তন ঠিক তেমনি ইতিহাসে প্রতি বাঁকে বাঁকে ঝরছে রক্ত। সবকিছুর মূলে “শান্তিবাহিনী।
১৯৭৬ সালে বরকলে টহল পুলিশের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে এই সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন। পাহাড়ের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে এমএম লারমার নেতৃত্বে গঠিত হয় সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন শান্তিবাহিনী।পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ উত্তর দুই দশকের বেশি সময়ে সমস্যার ডালপালা বিস্তৃত হয়েছে। চুক্তি’র পক্ষে-বিপক্ষে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে শত শত মানুষের জীবনপ্রদীপ নিভেছে অকালে। গত বছর ২৮ নভেম্বর ২০২০ এ সকালে বাঘাইহাটে আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দল জেএসএস এর গোপন আস্তানা থেকে সেনাবাহিনী দুটি একে-৪৭ ও একটি এসএমসি উদ্ধার করে। এর আগে এলএমজি, ৭.৬২ মিলিমিটার রাইফেল, এম-১৭ রাইফেল, জি-৩ রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, মর্টার, হ্যান্ড গ্রেনেড ও রকেট লঞ্চার উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। এগুলো কি আমাদের জন্য হুমকি স্বরুপ নয় ? মানুষের মৌলিক অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন এখন সময়ের দাবি।
পাহাড়ে ঘটে যাওয়া এবং চলমান কোন ঘটনারই নির্মোহ-নিরপেক্ষ প্রতিফলন গণমাধ্যমে ঘটে না। কোন কোন সময় দায়িত্বশীল কোন কর্তৃপক্ষই দায় স্বীকার করেন না। রাষ্ট্রের দর্শন, দেশের গন্তব্য, শিক্ষার চরিত্র, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে এবং আমাদের তরুন নেতৃবৃন্দের পাহাড়ের রাজনীতিতে কতটুকু ভূমিকা রাখবে ? স্বার্থপক্ষীয় রাজনীতির বাহিরে আমাদের চিন্তা করতে হবে। কোনো দলের পক্ষে নয় বরং দেশের সার্বভৌত্বের পক্ষে যদি সরকার সিদ্ধান্ত না নেয় তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম হারানোর শঙ্কা করছি । পার্বত্য চট্টগ্রামে মানুষ আগে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাস করতো। কিন্তু দিন দিন পাহাড়ে আলাদা হওয়ার প্রবণতা ও ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বেড়ে যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকেই অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছি। সবশেষে একটা কথাই বলতে হবে অবিলম্বে পাহাড় থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি করতে হবে।
লেখকঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম
সাংগঠনিক সম্পাদক
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ