ফেনীর সোনাগাজী উপজেলাধীন থাক খোয়াজের লামছি মৌজার মুহুরী প্রকল্প এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ীবাঁধ ও সরকারী রাস্তা দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালী সোলায়মান (প্রকাশ- মেজর সোলায়মান) নামক ব্যক্তি লোহার গেইট স্থাপন করে জনগণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও সড়কের পাশে তারকাঁটার ঘেরা দেওয়ায় দুর্ঘটনা আশংকায় স্থানীয় জনসাধারণ রাস্তা উম্মুক্ত করে দেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করলেও তারকাঁটার ঘেরা ও সড়কে স্থাপিত লোহার গেইট অপসারণ করেনি সোলায়মান। স্থানীয় কৃষক সফিউল্লা, মিলন, ইব্রাহিম, কেফায়েত, নজরুল, নাছির, নিজাম সহ স্থানীয়রা জানান- সোলায়মানের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে মামলা হামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
গত ৮ই সেপ্টেম্বর স্থানীয়দের পক্ষে সাংবাদিক গাজী মোহাম্মদ হানিফ সোনাগাজী সদর ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আরেফিন এর কার্যালয়ে রাস্তা উম্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য লিখিত আবেদন পেশ করেন। চেয়ারম্যান শামসুল আরেফিন জানান- সোলায়মান মেজরের বিরুদ্ধে এর আগেও তার পল্লী আদালতে মানুষের জমি দখলের ৮/১০টা অভিযোগ আসলে তাকে নোটিশ করা হয়, সে পল্লী আদালতে হাজির নাহয়ে উল্টো চেয়ারম্যান ও অভিযোগ কারীদের বিবাদী করে এডিএম কোর্টে মামলা দায়ের করে হয়রানি করেন।
গত ১০ই সেপ্টেম্বর সোনাগাজী মুহুরী প্রজেক্ট আঞ্চলিক মহাসড়কে সোলায়মান কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় এলাকাবাসী ও ভূমি মালিকগণ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। ১২ই সেপ্টেম্বর সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। ১৩ই সেপ্টেম্বর ফেনীর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর জনগণের চলাচলের জন্য সড়ক উম্মুক্ত করে দেওয়ার দাবিতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়, অভিযোগের অনুলিপি ফেনী-৩ আসনের সাংসদ, সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান, এএসপি সার্কেল, আইএসপিআর, সোনাগাজী মডেল থানা ও গণমাধ্যম অফিসে পাঠানো হয়।
১৩ই সেপ্টেম্বর বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সরেজমিন তদন্ত করেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নুরুননবী, তিনি বলেন- সড়ক কাউকে ইজারা দেওয়া হবেনা, সকলের চলাচলের জন্য উম্মুক্ত থাকবে।
২৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে বাংলাদেশ মানবাধিকার সম্মিলন (বামাস) চেয়ারম্যান এড. জাহাঙ্গীর আলম নান্টু সহ গণমাধ্যম কর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সোলায়মান’কে উক্ত সড়ক উম্মুক্ত রাখার অনুরোধ জানান।
ফেনীর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নির্দেশে ১২ই অক্টোবর দুপুরে সরেজমিন তদন্ত করেন সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আবদুর রহিম সরকার, সাব ইন্সপেক্টর মোবারক হোসেন ও বেলায়েত হোসেন। মেজর সোলায়মান সরকারি রাস্তায় গেইট ও গাছ লাগানোর বিষয়টি স্বীকার করে জানান- সড়কে কাউকে চলাচলে বাধা দেওয়া হবেনা, তবে গেইট অপসারণ করতে তিনি রাজি হননি।
২০ই অক্টোবর বুধবার সকাল ১১টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন- ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান। সেখানে উপস্থিত এলাকাবাসী ও সাংবাদিকগণ মেজর সোলায়মান কর্তৃক রাস্তায় গেইট ও তারকাঁটা লাগিয়ে রাস্তা অবরুদ্ধ করার বিষয়টি আবারও উপস্থাপন করলে জেলা প্রশাসক সোলায়মানকে সড়কে স্থাপিত তারকাঁটার ঘেরা ও লোহার গেইট সরিয়ে নিতে বলেন। বিষয়টির সংবাদ শতাধিক প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা দেওয়ার ২ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি রাস্তায় তারকাঁটার ঘেরা ও সড়কে স্থাপিত লোহার গেইট অপসারণে কোন উদ্যোগ নেয়নি দখলদার মেজর (অবঃ) সোলায়মান।
মেজর (অবঃ) সোলায়মান কর্তৃক জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অমান্য করার বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাগাজী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিখন বণিক জানান- ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ইউএনও স্যারের সাথে কথা হয়েছে, ডিসি স্যারের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।