সফলতার সাথে দায়ীত্ব পালন শেষে ঢাকা রেঞ্জে বদলিজনিত কারনে নানিয়ারচরে অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাব্বির রহমানের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার রাতে থানার হলরুমে সহকর্মী অফিসার ও ফোর্সবৃন্দের আয়োজনে বিভিন্ন সামাজিক, সেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিদায়ী এই পুলিশ অফিসারকে সংবর্ধনা প্রদান করে।
এসময় নবাগত অফিসার ইনচার্জ সুজন হালদার, ওসি (তদন্ত) মোঃ রফিকুল ইসলাম, নানিয়ারচর প্রেস ক্লাব সভাপতি মেহেদী ইমাম, সম্পাদক নাজমুল ইসলাম, বুড়িঘাট ইউপি সদস্য আব্দুল মালেকসহ পুলিশ সদস্য, সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিদায়ী ওসি সাব্বিরকে বিভিন্ন সংগঠনে পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয় এবং নবাগত ওসি সুজন হালদারকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক ইন্দ্র দাশ রিপনের সঞ্চালনায় ৭১টেলিভিশন সংবাদদাতা মেহরাজ হোসেন সুজন, ইউপি সদস্য আব্দুল মালেকসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।
এসময় বক্তারা বলেন, নানিয়ারচর থেকে একজন সৎ ও যোগ্য পুলিশ অফিসার বিদায় নিচ্ছেন। সাব্বির রহমান জনবান্ধব ও একজন মানবিক পুলিশ অফিসার। যোগদানের পর থেকেই জনবান্ধব পুলিশি সেবার মাধ্যমে সকলের নজর কাড়েন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাব্বির রহমাম ওসি হিসাবে নানিয়ারচর থানায় যোগদানের পরপরই তার কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যেগে পাল্টে যায় নানিয়ারচর উপজেলার দৃষ্টপট। তিনি প্রকাশ্য উপজেলা মাসিক সভায় ঘোষণা দেন নানিয়ারচর থানা এখন থেকে ঘুষ ও দালাল মুক্ত থাকবে। সাধারন মানুষের জন্য পুলিশি সেবা নিশ্চিত করেন।
সুন্দর আচারণ ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে আইনগত সেবা প্রদানে নানিয়ারচর থানা বদ্ধপরিকর এই স্লোগান বাস্তবায়নে করোনাকালীন সময়েও পুলিশি সেবাকে জনবান্ধব, হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে নানিয়ারচর থানায় কুইক রেসপন্স এন্ড বেস্ট প্র্যাকটিস নামে ব্যতিক্রমধর্মী পুলিশি সেবা চালু করেন।
পর্যটক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, নারী ও শিশুদের দ্রুততার সাথে আইনি সেবা দেওয়ার জন্য থানা খোলা হয় আলাদা আলাদা হেল্প ডেস্ক। ব্যতিক্রমধর্মী এসব পুলিশি সেবার সুফল পাচ্ছেন নানিয়ারচর উপজেলার সাধারণ সেবা প্রত্যাশী মানুষ।
থানা সূত্রে জানা যায়, ওসি সাব্বির যোগদান করার পর দ্রুত সময়েরর মধ্যে দীর্ঘদিন মুলতবী থাকা চাঞ্চলকর হত্যা মামলাসহ আলোচিত নানিয়ারচর উপজেলার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)-এর সভাপতি বর্মা-সহ ৫হত্যা মামলা তদন্ত শেষ করে আদালত অভিযোগপত্র দাখিল করা করেন। গত ৫বছরের তুলনায় তার সময় উপজেলায় অপরাধের সংখ্যা হ্রাস পায়।
তিনি মাদক কার্বারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, বিপুল পরিমাণ ফরমালিনযুক্ত আনারস ও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল উদ্ধার ও ধ্বংস, গরু চুরি বন্ধ গরুচোরদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণসহ একাধিক চোরাই গরু উদ্ধার, সামাজিক বনায়ন প্রকল্প গ্রহণে ও বিরল প্রজাতির প্রাণীকুল রক্ষাকল্পে জনগণকে উদ্বদ্ধকরণ, উপজেলার এতিম শিশুদের প্রতি বিশেষ সুদৃষ্টি, উপজেলার বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, উপজেলার ক্রীড়াঙ্গকে এগিয়ে নিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন, সরকারী পতিত জমিকে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি, ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ সহ বিভিন্ন জনকল্যানমূখী কাজের মাধ্যমে প্রশংসা অর্জন করেন।
নানিয়ারচর উপজেলার মতো একটি দুগম ও সন্ত্রাসী কবলিত এলাকায় করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের হাসপাতালে পাঠানো, হোম কোয়াইন্টনে থাকা রোগীদের বাসায় ওষুধ ও নিত্যপণ্য পৌঁছানো, আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের হোমকোয়ান্টাইন নিশ্চিত, করোনা ভাইরাসে মৃত ব্যক্তির সৎকার নিশ্চিতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্ব সাথে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে তার নেতৃত্বে নানিয়ারচর থানার পুলিশ কাজ করে।
সচেতন জনতা জানান তিনি নিজের সততা, মেধা, বিচক্ষণতা কর্মদক্ষতা ও মানবিকতার মাধ্যমে নানিয়ারচর উপজেলার শান্তিকামী মানুষের মন জয়ের মাধ্যমে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তার যোগদানের পর বাঙ্গালী-পাহাড়ী শান্তিকামী মানুষের মধ্যে পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থা ফিরে আসে।
এছাড়াও তিনি বিট পুলিশিং কার্যক্রম জোরদার করে নানিয়ারচর উপজেলার মতো সন্ত্রাসী কবলিত একটি দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড ও বাল্য বিবাহ বন্ধে সফলতা দেখান। এলাকার দীর্ঘদিনের ভূমি বিরোধ মিমাংসাসহ এলাকার বহু পুরাতন পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে সমাধান করেন। ওসির সততা অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে মাদক নিয়ন্ত্রন ও আইন শৃঙ্খলার ব্যাপক উন্নতি ঘটে।