ছোটন বিশ্বাস, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।। খাগড়াছড়ির ছেলে তরুণ উদ্যোক্তা সুমন চাকমা’র লটকন ফল চাষে বেশ সাড়া মিলেছে অনলাইন এবং অফলাইনে। তার ফেইসবুক এ লটকনের থোকা থোকা হলুদ ফল দেখে অনেকেই আসেন তার বাগানে লটকন ফল সংগ্রহের জন্য। খুবই অল্প সময়ে এই তরুণ উদ্যোক্তা লটকন ফল চাষে বেশ সারা মিলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরস্ত সাত ভাইয়া পাড়া গ্রামে নিহার বিন্দু চাকমার ছেলে সুমন চাকমার বাগান। বাগানের আয়তন পায় ৪ একর। এ বাগানে আসলে দেখা মিলবে সারি সারি বিভিন্ন ফলজ গাছের ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে সোনালী রঙের লটকন ফল। দেখে মনে হবে এ যেন সোনালী ফলের রাজ্যে প্রবেশ করলাম।
সুমন চাকমা ঢাকা মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল থেকে ২০১৪ সালে ডিপ্লোমা মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট পাস ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশবিদ্যালয় থেকে বি.এস.এস. স্নাতক (সামাজিক বিজ্ঞান) এ ২০১৮ সালে শেষ করে নরসিংদী সহকারী মেডিকেল অফিসার হিসেবে ইসলামিয়া প্রাইভেট হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে খাগড়াছড়ি পিবিএম মেডিকেল ইনিস্টিউট এ লেকচারার মেডিসিন হিসেবে কর্মরত ছিলাম। আর পাশাপাশি ছিলো বিভিন্ন চাকুরি পরীক্ষার প্রস্তুতি।
সুমন চাকমা জানান, আমার বাবা ছিলেন একজন বেসরকারি হাইস্কুল শিক্ষক। আমাদের গ্রামে বসতি ভিটার খানিকটা দুরে পাহাড়ের কিছু জায়গা পরিত্যক্ত ছিলো। আমি কাজের সুবাদে নরসিংদীতে ছিলাম।
একদিন নরসিংদী শিবপুর উপজেলায় লটকন বাগান দেখতে গিয়ে সেখান থেকে চারা সংগ্রহ করি। চিন্তা করলাম পাহাড়ে সম্ভব হয় কি-না। এবং এই ফল ৭/৮ প্রকার গুণা-গুণ সম্পন্ন একটি ফল। জানতে পারলাম ২/৩ বছরের মধ্যে গাছে ফল আসে। জানা যায়, এই ফল ছায়া যুক্ত জায়গায় ভালো হয়। বাড়তি কোনো খরচ লাগে না।
পরে নরসিংদী কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে পরামর্শ, ইউটিউব দেখে এবং বাবার অনুপ্রেরণা নিয়ে শুরু করি বাগান। আর খাগড়াছড়ি এসে আমাদের পাহাড়ে পরিত্যক্ত জায়গায় ১ হাজার টি চারা রোপণ করি। ৩ বছরের প্রায় ৭০০শ টি গাছে ফল আসতে শুরু করে।
এর আগে এই ফলটিকে আমরা পাহাড়ে দেখে ছিলাম বটে। কিন্তু সেটা আমরা ছিনতাম জঙ্গলি ফল হিসেবে। বর্তমান বাজারে এই ফলের বেশ চাহিদা আছে। ১০০/১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রথম বছরে প্রায় ৩,০০০কেজি লটকনে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি করে সে। আরো প্রায় ১ লক্ষ টাকার মত লটকন করবে বলে সে আশাবাদী।
পিতা নিহার বিন্দু চাকমা জানান, আমি আগে জানতাম না যে এই ফলের এতো গুণ। আমার ছেলে বাগানে চারা রোপন করার পর জানতে পারলাম। দেখতে পায়, প্রতি নিয়ত বাগানে ২/৩ জন আসেন এই ফল নিতে। আবার কেউ ছেলেকে ফোন করে অডার করে নিয়ে নেয়।
ক্রেতা সুপ্রিয়া কর্মকার জানান, আমি কুঞ্জ ব্লগে ভিডিও দেখে এ বাগানে এসেছি। নিজের মনের মতো লটকন সংগ্রহ করে স্বল্প মূল্যে ক্রয় করে পেরে আমি খুশী। আর মনে মনে ভাবছি, আমি এখন পাহারের আঙ্গুর রাজ্যে। লটকন’র রাজ্যে মনে মতো লটকন সংগ্রহ করার মজাই আলাদা। এছাড়া এখানে দেখতে পাচ্ছি আমি ছাড়াও প্রতিদিনই আশেপাশের অনেক মানুষ বাইরের দর্শনার্থীরাও আসেন বাগানটি দেখতে। এবং যাওয়ার সময় তারা মনের মত লটকন ফল ক্রয় করে নিয়েও যাই।
পাশ্ববর্তী গ্রামের চাষি সুজন চাকমা বলেন, শুনেছি লটকন ফল চাষে নাকি লাভ আছে। বছর দুই থেকে তিন বছরের মাথায় গাছে লটকন ফল আসতে শুরু করে। আঙ্গরের মত থোকা থোকা দেখতে এ লটকন খেতে হালকা টকমিষ্টি সুস্বাদু। আমি ছোট চাষি। যদি কৃষি অফিস যদি আমাদেরকে লটকন কোনো প্রণোদনা দেয়, তাহলে সামনের বার আমিও লটকনের চারাগাছ লাগাবো।
ফল ব্যবসায়্য নেতা অনিমেষ চাকমা রিংকু জানান, সুমন এর বাগান দেখে এখন বাগানীরাও উৎসাহ পাচ্ছে। তাঁরাও লটকন ফল চাষে আগ্রহী হয়েছে। যেহেতু এই ফল গাছের তেমন কোনে পরিচর্যায় খরচ করতে হয়না। বাজারেও এই ফলের বর্তমান চাহিদা আছে। ১০০/১২০ দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মোঃ বাছিরুল আলম জানান, শুনেছি সুমন চাকমা নামে এক উদ্যোক্তা পাহাড়ে লটকনের বাগান চাষে সারা ফেলেছে। পাহাড়ের মাটি অম্লীয় হওয়ায় তা লটকন চাষের উপযোগী। আমাদের হটি কালচারগুলোতে লটকন চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এবং আমরা লটকন চাষে সব ধরণের উদ্যোগ নিচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, চলতি মৌসুমে খাগড়াছড়িতে ১শ ৪৫হেক্টর জমিতে ২ হাজার ১৯ মেট্রিক টন লটকনের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।