পানছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র (আলিম) মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট পদে অবৈধ নিয়োগ বাতিল ও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিভিন্ন অনিয়ম ও দুনীর্তি প্রতিকারের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধন থেকে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এই অবৈধ নিয়োগ বাতিল করে মাদ্রাসার দীর্ঘদিনের সুনাম ও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
১৩ জুলাই (শনিবার) বেলা ২ টায় মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
জানাযায়, মাদ্রাসার সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক মো: জামাল উদ্দিন মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব নিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহা-পরিচালক বরাবরে পানছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র (আলিম) মাদ্রাসায় সুপারিনটেনডেন্ট নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহা-পরিচালক ‘সুপার নিয়োগ বোর্ডে’র জন্য হাটহাজারী উপজেলার ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মুঈনীয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল ফারাহ মুহাম্মদ ফরিদুদ্দিন’কে প্রতিনিধি নিয়োগ করেন।
ফরিদুদ্দিনের যোগসাজশে নাম মাত্র পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আবুল কাশেমকে। নিয়োগ পরীক্ষায় উপস্থিত ছিলেন না মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। মানা হয়নি শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ সম্পর্কিত সুপারিশ। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কে.এম. রুহুল আমিন স্বাক্ষরিত স্মারকে বলা হয়, নিয়োগ পরীক্ষা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত হতে হবে। তবে এই নিয়োগে মানা হয় নি এই শর্ত। পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে নামমাত্র এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামের ছিপাতলি মাদ্রাসায়। তাছাড়া অভিযোগ রয়েছে সুপারিন্টেন্ডেন্ট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি কোন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশ করা হয়নি। নামমাত্র অখ্যাত একটি পত্রিকায় প্রকাশ করার কারণে অনেক চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন নি।
অভিযোগের বিষয়ে ছিপাতলি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল ফারাহ মুহাম্মদ ফরিদুদ্দিন জানান, খাগড়াছড়ির একটি মাদ্রাসায় নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে সরেজমিনে উপস্থিত ছিলেন পানছড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অরুপ চাকমা। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে শিক্ষা অফিসার অরুপ চাকমা জানান, নিয়োগ পরীক্ষায় সরেজমিনে তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
এদিকে নিয়োগ পরীক্ষায় সুপার পদে আবেদন করেছিলেন দীঘিনালা উপজেলার রশিকনগর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা মো: আনিছুর রহমান। তিনি জানান, মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কাশেম নিয়োগ পাবে তা আগেই জানতাম। আবুল কাশেমের পরামর্শেই নামে মাত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। আনিছুর রহমান আরো জানান, হাটহাজারী ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মুঈনীয়া কামিল মাদ্রাসায় গিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। সুপারিনটেনডেন্ট পদে আবেদনকারী ও পানছড়ি আলিম মাদ্রাসার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট মো: আবুল কাশেমের ভাড়া করা মাইক্রোতে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিলে এক মাইক্রোতে চড়ে সেখানে গিয়েছেন। আনিছুর রহমানের আবেদন সাথে সংযুক্ত ব্যাংক ড্রাফটও মো: আবুল কাশেমের দেয়া বলে তিনি জানান। তাছাড়া দ্বীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে মাওলানা আবুল কাশেম দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাকে কৌশলে নিয়োগ দিতে মাদ্রাসার সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক মো: জামাল উদ্দিন মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব নিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহা-পরিচালক বরাবর আবেদন করেন। পানছড়ির মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অরুপ চাকমা নিয়োগ পরীক্ষায়া উপস্থিত ছিলেন না বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সাবেক অধ্যক্ষ জাকির হোসাইনের মৃত্যুর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির বেহাল দশা। নিজ কেন্দ্রে বসে পরীক্ষায় অংশ নিলেও ফলাফলে অবস্থান উপজেলার সর্বনিম্নে। রাতের অন্ধকারে ঘনিষ্ঠজন দিয়ে গঠন হয়ে যায় পরিচালনা কমিটি। তাই দীর্ঘ দশ বছরের অধিক সময় ধরে নেই কোন অডিট। অফিস সহকারীকে দিয়ে করানো হয় ছয়টি ক্লাশ। সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলে গনিতের।
অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসার ল্যাপটপ চুরি হলেও অদৃশ্য কারণে থানায় জিডি না করা, প্রণোদনার টাকা বিতরনে ব্যাপক অনিয়মেরও অভিযোগ উঠেছে। এবারের দাখিল পরীক্ষা চলাকালীন অসুদপায় অবলম্বনের দায়ে তৎকালীন মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা মো: আবুল কাশেম ও শিক্ষক মো: জামাল উদ্দিন সহকারী ভূমি কমিশনারের কার্যালয়ে মুচলেকা দিয়ে কোন রকম জান বাঁচায়।
মানববন্ধনে মাদ্রাসার প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবুল কালাম বলেন, অবৈধ পন্থায় নিয়োগ পাওয়া সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা মো: আবুল কাশেম ইতিমধ্যেই উঠে-পড়ে লেগেছে এম.পিও আনার জন্য। তাই এমপিও বন্ধ পূর্বক পানছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্টের অবৈধ নিয়োগ বাতিল করে মরহুম মাওলানা মোহাম্মদ জাকির হোসাইনের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
মাদ্রাসার জমিদাতা শফি আহমেদের ছোট সন্তান ও ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবুল বাশার বলেন, আমার বাবা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জায়গা দান করেছে কিন্তু মাদ্রাসার কতিপয় ব্যক্তির দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটি আজ ধ্বংসের পর্যায় চলে গেছে।
উল্টাছড়ি ইউনিয়নের মেম্বার ও সাবেক শিক্ষার্থী মো: ফজলু মিয়া বলেন, ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি প্রতিষ্ঠানিকে নিজেদের সম্পতি বানিয়ে ফেলেছে জামাল কাশেম গংরা। শিক্ষার মান তলানিতে ঠেকেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। দ্রুত অবৈধ নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
সদ্য নিয়োগ পাওয়া সুপারিন্টেন্ডেন্ট মাওলানা আবুল কাশেম সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি নিয়ম মেনে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন বলেও জানান।
মানববন্ধনে পানছড়ির ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আসিফ করিম, ৫নং দমদম ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুল জব্বার মেম্বার, ৪ নং মোহাম্মদপুর ওয়ার্ডের মেম্বার মো ইউসুফ আলী ও উল্টাছড়ি ইউনিয়নের মেম্বার ও সাবেক শিক্ষার্থী মো: ফজলু মিয়া উপস্থিত ছিলেন।##