ছোটন বিশ্বাস, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি॥ মেঘের রাজ্য সাজেকে আটকে পড়া ৫শতাধিক পর্যটকরা নিরাপদে খাগড়াছড়ি ফিরেছে। টানা দুইদিন ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের দীঘিনালার কবাখালি, বাঘাইহাট ও মাচালং এলাকায় পানি উঠে যাওয়ায় সাজেকের সঙ্গে সারাদেশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সাজেক রুইলুই পর্যটন কেন্দ্রে প্রায় পাঁচ শতাধীক আটকে পড়ে।
সোমবার ৩ জুলাই প্লাবিত এলাকায় পানি কমতে শুরু করলে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ফিরতে শুরু করে আটকে যাওয়া পর্যটকরা।
খাগড়াছড়ি বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ত্রিপুরা জানান, সোমবার সকালে সাজেক রুইলুই থেকে একসঙ্গে প্রায় শতাধীক চাঁদের গাড়ি (জীপ) ও পিকআপ গাড়ি পর্যটকদের নিয়ে বাঘাইহাট ও মাচালং এলাকায় এসে সড়কের পানি কমে যাওয়ার অপেক্ষা করছি। তবে অনেক পর্যটক এখান থেকে নৌকা দিয়ে পানি পাড় হয়ে আগেভাগেই খাগড়াছড়ি চলে গেছে। পানি কমতে শুরু করেছে একটু পড়েই সকল গাড়ি গুলোকে সাথে নিয়ে আমরা খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করবো।
বগুরা থেকে সাজেকে ঘুরতে আসা পর্যটক হোসেন শাহরিয়ার বলেন, ১ জুলাই ঢাকা থেকে আমরা চারজন সাজেক রুইলুই পর্যটন কেন্দ্র দেখতে আসছি। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাজেকে আটকে পড়ি। এখানে আতংকিত হওয়ার মতো কিছু হয়নি। আমাদের কোনোরকমের সমস্যা হয়নি। খুবই নিরাপদে ছিলাম আজ সকালে রওনা দিয়েছি। এখন বাঘাইহাট ও মাচালং এলাকায় সড়কের পানি কমার অপেক্ষা করছি, আমাদের সাথে প্রায় শতাধীক গাড়ি লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। এতে কমপক্ষে চারশতাধীক পর্যটক রয়েছে। কিছুক্ষণ পড়েই হয়তো খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে সকল গাড়ি গুলো রওনা দিবে। আমরা খাগড়াছড়ি হতে রাঙ্গামাটি হয়ে বানন্দরবান এখান থেকে কক্সবাজার ঘুরে ঢাকা ফিরবো আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
এদিকে, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়া এলাকার পানি কমে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদররে ৩নং গোলাবাড়ি ইউনিয়নের গঞ্জপাড়াসহ পৌর শহরের শান্তিনগর, শব্দমিয়াপাড়া, মুসলিমপাড়া, ফুটবিল, বটতলী, কলেজপাড়া ও ইসলামপুরসহ বিভিন্ন এলাকার পানিবন্দী মানুষ। বন্যা কবলিত এলাকা ও আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে মঙ্গলবার রাত থেকে সরজমিন পরিদর্শন করে শুকনো খাবার ও খিঁচুড়ি বিতরণ করেছে, জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দিদারুল আলম ও পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী।
টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে চেঙ্গী নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে খাগড়াছড়ির বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল এলাকা। এসময় পানিবন্দী হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। হাঁটুপানিতে ঘরের মেঝেতে চুলোয় জ্বলেনি আগুন! দুর্বিসহ জনজীবন।
এমনসময় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। জরুরী ভিত্তিতে ১০ হাজার মানুষের জন্য খাবার রান্না করে করা হয়েছে বিতরণ। বিভিন্ন এলাকায় দুপুর থেকে রাত অবধি চলেছে বিরামহীন খিঁচুড়ি বিতরণ। মানবিক এ উদ্যোগে যোগ দিয়ে খাবার বিতরণে অংশ নেন, পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু। এসময় পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল হক, জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চৌধুরী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্যানেল মেয়র পরিমল দেবনাথসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।