ছোটন বিশ্বাস, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।।
খাগড়াছড়ি মানিকছড়ি উপজেলার ডাইনছড়ি খালের ওপর তিন বছর আগে নির্মাণ করা হয় একটি সেতু। সেতুটির কাজ প্রায় শেষ হলেও সংযোগ সড়ক (এপ্রোজ) এর কাজ শেষ না হওয়ায়, কাজে আসছে না সেতুটি। সেতুটির দুই পাশের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায়, শুকনা মৌসুমে মোটরসাইকেল ও কিছু ছোট ছোট যান চলাচল করতে পারলেও বর্ষার সময় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারেনা। এলাকাবাসীদের দাবী সেতুটির সংযোগ সড়ক ও ব্লকের কাজটা যেন দ্রুত করে দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখে।
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা একটি কৃষি নির্ভর এলাকা। মানিকছড়ির ডাইনছড়ি আমতলী এলাকার লোকজন সেতুর এপ্রোজ ঠিক না থাকায় তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারে নিয়ে যেতে অনেক দূর পথ পারি দিয়ে হয়। সময় মত বাজারে পৌঁছাতে না পাড়লে পণ্য বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে পড়ে। এতে ভোগান্তির পেতে হয় কৃষকদের।
এলাকাবাসীদের চলাচল ও পন্য আনা-নেয়ার সুবিধার্থে মানিকছড়ি-ডাইনছড়ি-আমতলী সড়কের ডাইনছড়ি খালের ওপর ১ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের মানিকছড়ি উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয় আওতায় ২৪ মিটার একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও দীর্ঘ দুই বছরেও শেষ হয়নি সেতুটির দুই পাশে ব্লক ও সংযোগ সড়ক (এপ্রোজ) এর কাজ। যার কারনে সেতুটি কোন কাজে আসছে না এলাকাবাসীদের।
এলাকাবাসী মোঃ আবদুর রহিম জানান, সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। কিন্তু সেতুটির দুই পাশের সংযোগ সড়ক ও খালের পাড় ভাঙ্গন রোধের জন্য ব্লকের কাজ না হওয়া তাদের কোন কাজে আসছে না সেতুটি। শুকনা মৌসুমে মোটরসাইকেল ও কিছু ছোট যান চলাচল করতে পারলেও বর্ষার সময় তারা এই সেতু পাড় হয়ে কিছুই নিয়ে যেতে পারে না। এই সেতুর সংযোগ সড়ক না হওয়ার ফলে বিশেষ করে এই সময়ে তাদের বাগানের আম, কাঠাল ও বিভিন্ন উৎপাদিত কৃষিজ পন্য মানিকছড়িসহ বিভিন্ন বাজারে নিতে হলে ৫-৬ কিলোমিটার পথ ঘুরে পণ্য বাজারে নিয়ে যেতে হয়। এতে তাদের প্রায় ৫/৬শত টাকার বেশি খরচ ঘুনতে হয়। এই সেতুর সংযোগ সড়কটি হলে তাদের ৫/৬ শত টাকা বেঁচে যেত। তাছড়া সেতুর দুই পাশে খাল যে ভাবে ভাঙ্গতেছে ব্লকের কাজটা না হলে সেতুটির আরো ক্ষতি গ্রস্থ হবে। তাই তাদের দাবী দ্রুত যেন এই সেতুটি সংযোগ সড়ক ও খালে ব্লকের কাজটি করে দেয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ মামুন মিঞা জানান, সেতুটির কাজ শেষ হয়েছে প্রায় দুই বছর। কিন্তু সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় আমরা কষ্টে আছি। ব্রিজের এপারে প্রায় ১০/১৫হাজার লোকের বসবাস। বেশির ভাগ মামুষ কৃষক। মূলক এলাকাটি একটি কৃষি নির্ভর এলাকা। বছরের অন্যান্য দিনগুলো যেমন তেমন। কিন্তু বর্ষা আসলেই আমাদের কাঁচা মাল অর্থাৎ কৃষিজ পণ্য নষ্ট হয়ে যায় ব্রিজ পাড় হতে না পারার ফলে। তাছাড়া এই ব্রিজের দিকে কোনো গাড়ি আসতে চাই না। ব্রিজের সামনের দু‘পাশের অংশে বড় বড় গর্ত আর ব্রিজে উঠার সংযোগ ঠিক না থাকার ফলে আমাদের এতো ভোগান্তি । যদি ব্রিজের অসম্পূর্ণ কাজটি ঠিক করে ব্লক বসিয়ে দিতো তা হলে আমাদের বহু দিনের কষ্টের অবসান হতো।
সেতুটির সংযোগ সড়ক ও ব্লকের বিষয়ে টিকাদার এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিরাজমান সমস্যা কারনে কাজটি করতে দেরী হয়েছে তবে ইতিমধ্যে স্ট্রাকচারের কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কটি কার্পেটিং করতে হবে। বৃষ্টির কারণে কাজ একটু দেরি হচ্ছে। আর নরম কাদা মাটিতে ব্লক বসালে কাজ টেকশই হবে না। মাটি বসে গেলে ব্লক বসানো ও সংযোগ সড়কের কার্পেটিং এর কাজ করা হবে। তবে কাজের প্রায় ১০০ ভাগ কাজ শেষ বলে দাবী টিকাদারের।
২নং বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রহিম বলেন, সেতুটির দুই পাশের সংযোগ সড়ক না হওয়ার কারণে এখানকার কৃষককেরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য গুলো প্রায় ৫/৬ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে মানিকছড়ি বা অন্যকোন বাজারে নিতে হয়। এতে তাদের বাড়তি টাকা গুণতে হয়। তিনি বিষয়টি নিয়ে বারবার উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীকে বললেও কোন কাজ হয়নি। মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
মানিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, সেতুটি যেখানে অসর্ম্পূণ আছে, সেখানে অনেক কৃষক আছে আর কৃষি পণ্য উৎপাদন হয়। আর এই ব্রিজের কাজটি বিলম্ব হওয়ার কারণে উপজেলা প্রকৌশলীকে বারবার তাগিদ দিয়েছেন। ব্রিজটি দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়া দরকার বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে মানিকছড়ি উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মহব্বত আলী জানান, ডিডিআর আর প্রকল্পের অধীনে বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদ হতে হাতিমূড়া রাস্তার ডাইনছড়ি ব্রীজটি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কাজ শুরু হয়ে ২০২৩ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। এখন কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯০ ভাগ, শুধু মাত্র সেতুর দুই পাশের এপ্রোজ ও এইচবিপি বাকী আছে। বাকি কাজ আমরা যত দ্রুত সম্ভব করার শেষ্ঠা করছি।
মানিকছড়ির ডাইনছড়ি আমতলী এলাকায় প্রায় ১৫ হাজার লোকের বসবাস। এবং এলাকাটি একটি কৃষি নির্ভর এলাকা। স্থানীয়দের দাবী, তারা যেন তাদের উৎপাদিত কৃষি পন্য আনা নেয়া সহজ ও পণ্য বাজার জাত করনে এবং যান চলাচলের জন্য বর্ষা শুরু হওয়ার পূর্বে সেতটির বাকী কাজ শেষ করে।