খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বেগুন চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন কৃষক আব্দুল হাই। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে কীটনাশকমুক্ত বেগুন চাষ করছেন তিনি।
সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১৫০ ফুট পাহাড়ের উপরে দেশি সবুজ গোল বেগুন গাছ লাগিয়ে সফলতার মুখ দেখছেন মাটিরাঙ্গার বেলছড়ি ইউনিয়ন এর খেদাছড়া এলাকার সফল কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুল হাই। কিশোর বয়স থেকে কৃষিকে ভালবাসে পেশা ও নেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম আর পরিকল্পিত সবজি চাষে সফল হয়েছেন তিনি। চার সন্তান নিয়ে বেশ ভালোই চলছে আব্দুল হাইর সংসার। বড় ছেলে নৌ-বাহিনীতে চাকরি করেন। ছোট ছেলে ৯ম শ্রেণিতে আর একে একে দুই মেয়েকে পাত্রস্থ করেছেন তিনি অনেক আগেই।
কৃষক আব্দুল হাই বলেন, আমি বেগুন ক্ষেত সব সময় পরিষ্কার রাখি। এ কারণে পোকার আক্রমণ কম হয়। এতে একদিকে বিষমুক্ত বেগুন বিক্রির পাশাপাশি কীটনাশক ক্রয়ের খরচ থেকেও মুক্তি পাচ্ছি। তবে, গত বছরের ন্যায় এ বছর ফলন কম হলেও দাম বেশি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে অনেকটা কীটনাশকমুক্ত চাষপদ্ধতি ব্যবহার পূর্বক মাটিরাঙ্গা-তানাক্কাপাড়া সড়কের অদূরে পাহাড়ের উপরে ২ একর জমিতে ৩ হাজার বেগুনের চারা রোপণ করেন তিনি। এ জমিতে তিনি পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার মোড়ানো পদ্ধতি ব্যবহার করেন, এতে করে মাটির প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ঠিক থাকার পাশাপাশি আগাছা দমন, সারের সঠিক প্রয়োগ এবং পোকামাড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায় সেই সাথে সেচ খরছ লাগে কম। জমি পাহাড়ের উপরে বিধায় পাহাড়ের নিচ থেকে পর্যাপ্ত পানির সেচের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
মধ্য এপ্রিল থেকে চারা রোপণ করে দুই মাসের মধ্যে হারভেস্ট শুরু করেন, চলবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত । এ পর্যন্ত সাড়ে চার লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ছয় লাখে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। একই সাথে এ জমিতে স্থায়ী আলোক ফাঁদ তৈরি করে পোকা দমন করা হয়।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: আমজাদ হোসেন বলেন, আব্দুল হাই একজন দক্ষ ও সফল কৃষক। তার নিজস্ব জমিতে বার বার বেগুন চাষ করে সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই বেগুন চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করলে একদিকে অর্থনৈতিক সফলতা অপরদিকে কৃষিতে নীরব বিপ্লব ঘটবে বলে তিনি জানান।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: সবুজ আলী বলেন, কৃষক আব্দুল হাই বেগুন চাষ করে লাভবান হয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে সার-বীজসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসাথে কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করে বিষমুক্ত স্বাস্থ্যবান্ধব সবজি চাষে উদ্ধুদ্ধ করতে উপজেলা কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছে।