মোঃ মাসুদ রানা, রামগড়(খাগড়াছড়ি)
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মঙ্গলবার বহুল প্রত্যাশিত খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরের আন্তর্জাতিক প্যাসেন্জার টার্মিনালের উদ্বোধন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এ ইমিগ্রেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। রামগড় স্থলবন্দরের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. সারওয়ার আলম জানান, প্রধানমন্ত্রীর রামগড় ইমিগ্রেশনটি উদ্বোধন উপলক্ষে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাষ্টমস থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সীমান্ত জটিলতার যে সমস্যা ছিল, ইতোমধ্যে সেটি সমাধান হয়ে গেছে। স্থলবন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজের জন্য প্রায় ২০০ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে।
রামগড় স্থলবন্দরের স্থায়ী কাঠামো তৈরি নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত কর্তৃপক্ষের জটিলতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। জটিলতা নিরসন হলে বন্দর দিয়ে পণ্যবাহী গাড়িসহ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে। মূলত ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের আগে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শুরু করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করায় প্রথমে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু করছে বাংলাদেশ বন্দর কর্তৃপক্ষ।
রামগড় স্থলবন্দরটি পুরোপুরি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ১১২ কিলোমিটার দূরত্বের এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে মাত্র তিন ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য যেতে পারবে ভারতে। দেশটির সেভেন সিস্টার্সখ্যাত উত্তর- পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে এই বন্দর দিয়েই। একই সঙ্গে রামগড় স্থলবন্দর ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে পণ্য পরিবহন করতে পারবেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এতে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ পর্যটনে ব্যাপক পরিবর্তন ও উন্নতি হবে।
স্থলবন্দর চালুর লক্ষ্যে রামগড়ে মহামুনি এলাকায় ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৪.৮০ মিটার প্রস্থের বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে একটি আন্তর্জাতিকমানের সেতু নির্মাণ করেছে ভারত। ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুটি ২০২১ সালের ৯ মার্চ দুদেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন এবং ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রামগড় ইমিগ্রেশন কার্যক্রমের ইমিগ্রেশন ভবন ও চেক স্টেশনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কিছু লোকবলও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রামগড় ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ আফতাব উদ্দিন জানান, ইমিগ্রেশন উদ্বোধনের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। আমাদের দিক থেকে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিন পরে হলেও ইমিগ্রেশন সেন্টারটির উদ্বোধনের খবরে সীমান্তবর্তী দুদেশের মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে উৎসব ও আনন্দ। প্রতীক্ষার প্রহর যেন মানুষের সইচেনা। অধির আগ্রহে পারাপারের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে কয়েকহাজার মানুষ। দুদেশের পর্যটন স্পটগুলিতে ঘুরে বেড়ানোতে আগ্রহ সবার।