আব্দুল মান্নান, স্টাফ রিপোর্টার (খাগড়াছড়ি)
ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি, ক্যালসিয়াম, ক্যালরি, ফসফরাস ও চর্বিযুক্ত লেবু জাতীয় ফল মিষ্টান্ন মাল্টা চাষ ও ফলন পাহাড়ে ভালো হলেও বাজারের হলুদ রংয়ের মাল্টার প্রতি ক্রেতার আকর্ষণে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার মাল্টা চাষিরা হতাশ! ফলে এই প্রথম সুখী এগ্রো ফার্মে সবুজ মাল্টায় ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে হলুদ রংয়ে মাল্টা বাজারজাত শুরু করেছে বাগান মালিকেরা।
উপজেলায় চলতি মৌসুম পর্যন্ত ৬০ হেক্টর টিলায় মাল্টা চাষ হলেও ফলন হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৭ মে.টন। বর্তমানে সবুজ মাল্টার বাজারমূল্য ২০০০ টাকা মণ। আর সবুজ ফলে আধুনিক ও নিজস্ব প্রযুক্তি ফ্রুট ব্যাগিংয়ে হলুদ রং ধারণ করায় কেজি ২০০ টাকায় বিক্রির ধুম পড়েছে বাগানে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছর পর্যন্ত উপজেলার অর্ধশত প্রান্তিক চাষি মোট ৬০ হেক্টর জমিতে লেবু জাতীয় এই মিষ্টান্ন মাল্টা-বারি-১ সৃজন করেছে। এর মধ্যে এই মৌসুমে ফল ধরেছে ১৫ হেক্টর বাগানে। এতে কৃষিবিদেরা উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা স্থির করেছে ১১২.৫০ মেট্রিক টন। সম্প্রতি কুমারী, বড়টিলা কাটাবন, তিনটহরী ও বড়ইতলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ের ঢালু ও সমতলে লেবু জাতীয় বারি-১ মাল্টা গাছের সবুজ পাতার আড়াঁলে থোকায় থোকায় মাল্টার বাহার শোভা পাচ্ছে । বর্তমানে বাজারে সবুজ মাল্টার চাহিদা কম হওয়ায় চাষিরা হতাশ! কুমারী বড়টিলার লনি মিয়ার জানান, ৮০ শতক টিলায় সৃজিত বারি-১ মাল্টার ২০০ গাছে এবার প্রচুর মাল্টা ধরেছে। উপজেলার বড় ও পাইকারী বাজার তিনটহরীতে মণ ২০০০ টাকার বেশি বিক্রি করা যাচ্ছে না! এত কম দামে ফল বিক্রি করলে আশা নিরাশায় রুপ নিবে! দর বৃদ্ধি না পেলে কষ্ট স্বার্থক হবে না। মণ ২০০০-২২০০ টাকা বিক্রি করলে লাভবান হওয়া সম্ভব। বড়ইতলীর আরেক সফল চাষি মো. আবুল কালাম জানান, পাহাড়ের মাটির গুনাগুনে ফল খুব মিষ্টান্ন হয়। কিন্তু এখানকার ভোক্তারা(ক্রেতা) সবুজ মাল্টায় আকৃষ্ট না হয়ে বাজারের হলদে মাল্টা ৩২০ টাকা কেজি কিনে খেতে লাইন ধরে! অথচ বাজারের এসব মাল্টায় ক্ষতিকর ওষধ মিশানো। তিনি আরও বলেন, এ যেন ‘দুধ বেচে মদ খাওয়ার অবস্থা’!
কুমারী বড়টিলা কাটাবন এলাকার সৌখিন বাগান মালিক মো. এনামুল হক তাঁর বাগানের ৫০০০ সবুজ মাল্টায় নতুন প্রযুক্তি ফ্রুট ব্যাগিংয়ে সবুজ ফল হলুদ রংয়ে রাঙ্গিয়ে তুলেছেন! এতে মাল্টার প্রতি ক্রেতার আগ্রহ বাড়ছে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, পাহাড়ে উৎপাদিত মিষ্টান্ন মাল্টা স্বাদে অতুলনীয় হলেও ক্রেতারা সবুজ মাল্টা না খেয়ে বাজারের বিষাক্ত হলুদ মাল্টা খেতে পছন্দ করে! তাই এই প্রথমবারের মতো আমি মাল্টা উত্তোলনের দুই মাস আগে ফল পরিপক্ব হওয়ায় ৫০০০ ফলে ফ্রুট ব্যাগিং করার মাধ্যমে এই সফলতা পেয়েছি। এই পদ্ধতিতে মাল্টা ব্যাগিং করার কারণে বিদেশি মাল্টার মত সাত ও রং আসায় বাগান থেকে গ্রাহকেরা ২০০ টাকা কেজি কিনে নিচ্ছে। এই পদ্ধতির ফলে মাল্টা প্যাকেটে থাকার কারণে কোন ধরনের কেমিক্যাল বা স্প্রে ব্যবহার করা হয় না বিধায় এই মালটা 100% অর্গানিক এবং নিরাপদ।
ইতোমধ্যে এই ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষি বিভাগ অবহিত হয়ে আমাকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। ওই এলাকার দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার নাথ বলেন, পাহাড়ের টিলার মাটি লেবু জাতীয় ফল চাষ উপযোগি। এখানকার বারি-১ মাল্টা খুব মিষ্টান্ন ও রসালো। দিন দিন মাল্টা চাষ বাড়লেও বাজারে সবুজ মাল্টার প্রতি ক্রেতার আকর্ষণ কম হওয়ায় চাষিরা হতাশ! বাজারের কেমিক্যাল মিশ্রিত হলুদ মাল্টার চাহিদার ফলে সুখী এগ্রো ফার্মের মালিক তাঁর নিজস্ব উদ্ভাবন হিসেবে ফ্রুট ব্যাগিংয়ের মাধ্যমে সবুজ মাল্টায় হলুদ কালার আনতে সক্ষম হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, পাহাড়ে যেহেতু লেবু জাতীয় ফল -ফলাদি চাষাবাদ ও ফলন ভালো হয়। সুতরাং এখানকার মাল্টা স্বাদে গুণে অতুলনীয়। আমরা লেবু জাতীয় এসব ফল চাষে সব সময় প্রান্তিক কৃষকদের প্রণোদনাসহ চাষাবাদে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এখানকার সবুজ ও নির্ভেজাল মাল্টা স্বাস্থ্যসন্মত। এছাড়া সুখী এগ্রোর ফার্মের মালিক তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরিপক্ব সবুজ মাল্টায় ফ্রুট ব্যাগিংয়ের ফলে সবুজ মাল্টা এখন হলুদ বর্ণে বাজারজাত করার চমকপ্রদ সফলতা দেখিয়েছেন।
যা অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে নতুন পদ্ধতিতে সবাই লাভবান হওয়া সুযোগ হয়েছে।