• বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম
গোয়ালন্দে প্রাথমিক শিক্ষকদের নবীন বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দীঘিনালা উপজেলায় কর্মী ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত মানবতার সেবায় এগিয়ে এপেক্স ক্লাব অব বান্দরবান দু:স্থ অসহায় পাহাড়ি-বাঙালিদের মাঝে বিজিবি’র আর্থিক অনুদান রাজস্থলী স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি ছাড়া লক্ষ টাকার গাছ কাটার অভিযোগ নতুন ধান তোলা নিয়ে পাহাড়ে উৎসবের আমেজ পাহাড় জুড়ে সুবাস, কৃষকের মুখে হাসি অজপাড়াগাঁয়ের মেয়ে -খ্যাই উ প্রু মারমা পেলেন জননী  জয়িতা পুরস্কার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে চবি শিবিরের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত খাগড়াছড়ি রিজিয়ন এর আয়োজনে সম্প্রীতির কনসার্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা  আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে রামগড়ে ছাত্রদলের মানববন্ধন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে দীঘিনালা উপজেলা ছাত্রদল ও কলেজ ছাত্রদলের মানববন্ধন মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কাপ্তাইয়ে উন্মুক্ত নক আউট ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন

লাশ যখন মর্গের প্যাকেজের কাছে অসহায় !

মাসুদ রানা, স্টাফ রিপোর্টার / ৩০২ জন পড়েছেন
প্রকাশিত : রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩

লাশের বাক্সক্রয় বাবদ ১২শত টাকা,
ছোট সেলাই ৪ শত টাকা,
বড় সেলাই ৩ শত টাকা,
কাফনের কাপড়১২শত টাকা,
লাশের গোসল বাবদ ১২ শত টাকা,
ঢাকাজেলার মধ্যে এসিঅ্যাম্বুলেন্স ৯হাজার,
লাশে ফরমালিন দেয়া বাবদ ৭ শত টাকা,
——————————————————-
সব মিলিয়ে মর্গের প্যাকেজ ১৪ হাজার টাকা।

আশুলিয়া-জামগড়া সড়কে ২২ আগস্ট সন্ধ্যায় বাসের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন সাহেরা বানু (৫৮)। তার লাশ রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় আশুলিয়া থানা পুলিশ। বুধবার সকালে মায়ের লাশ বুঝে নিতে সপরিবারে হাসপাতাল মর্গে আসেন ছেলে আশুলিয়ার উত্তর গাজীরচট এলাকার মামুনুর রশিদ। সরকারিভাবে ময়নাতদন্তের জন্য লাশের স্বজনের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়ার নিয়ম না থাকলেও লাশের গোসল, কাপড় , বাক্স কেনা,সেলাই করা,লাশে ফরমালিন দেয়া এবং গাড়ি ভাড়ার কথা বলে মর্গের সহকারীরা মামুনের কাছে দাবি করেন ১৪ হাজার টাকা। মামুন বলেন, মর্গের ইনচার্জ আরও বেশি টাকা চাইলেও দরকষাকষি করে তা কমানো হয়েছে। এরপর বিকাল ৩টা নাগাদ নগদ ১২ হাজার টাকা পরিশোধের পরে মায়ের লাশ বুঝে পান মামুন। লাশের স্বজনদের কাছ থেকে নেয়া এই টাকার কোনো রশিদও দেননি মর্গের ইনচার্জ। এ সময় ইনচার্জের দরকষাকষি ও হাসপাতালসংলগ্ন চায়ের দোকানে বসে টাকা নেয়ার একাধিক ভিডিও এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও লাশের স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করেন হাসপাতালটির মর্গের ইনচার্জ ডোম যতন কুমার। তিনি দাবি করেন, একটি লাশ কেটে সেলাই করে প্যাকেটসহ বাক্সবন্দি করে দেন তারা। এ জন্য স্বজনরা ‘খুশি’ হয়ে যে টাকা দেন, তাই তারা নেন। কেউ না দিলে চেয়ে নেন না, জোরাজুরিও করেন না। কিন্তু টাকা নেয়ার ভিডিও থাকার কথা জানালে ওই চায়ের দোকান থেকে কৌশলে সরে পড়েন তিনি। এরপর একাধিকবার তার মোবাইলে ফোন করলেও রিসিভ করেননি।

সরজমিন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে গত কয়েক দিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রায় অভিন্ন চিত্র। মর্গে চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে বাইরে থেকে এসে যারা কাজ করেন, লাশের স্বজনের আবেগকে জিম্মি করে বিভিন্ন খাতের নামে তারা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ জন্য মর্গটিতে রীতিমতো একটি দালাল সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। মর্গের সহকারী ছাড়াও এ চক্রে রয়েছে লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার ও আশপাশের দোকান ব্যবসায়ীরাও।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, বাক্স আর কাপড় কিনতে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার বেশি লাগার কথা নয়। এমনকি লাশের ময়নাতদন্তে মর্গে এক টাকাও খরচ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সরকারি নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিহতের স্বজনের কাছ থেকে ৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখা হচ্ছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার বিধিটা পিআরবিআর সরকারি নির্দেশনাতেই আটকে আছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কোনো ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনই নির্ধারিত সময়ে দেয়া হয় না। মাসের পর মাস ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আটকে থাকার আড়ালেও মর্গ অফিসে টাকার খেলার তথ্য পাওয়া গেছে। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভিন্ন কর্মী সংশ্লিষ্ট মামলায় পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এ টাকা নেন।

সূত্রমতে, নিহতের পরিবার এই টাকার উৎস হলেও অজ্ঞাতপরিচয় লাশের স্বজন না থাকায় আটকে থাকে সে সব ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। কোনো কোনো ঘটনায় মামলার চার্জশিট জমা নিয়ে সময়ের বাধ্যবাধকতা থাকায় পুলিশের সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার পকেটের টাকা খরচ করেই নিতে হয় এ প্রতিবেদন।

হাসপাতালের সূত্রগুলো বলছে, সাধারণত আলোচিত হত্যাকাণ্ড বা হত্যাকাণ্ড বোঝা যায়, এমন ঘটনার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত পাওয়া গেলেও আত্মহত্যা বা অজ্ঞাতপরিচয়ে উদ্ধার লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন মাস থেকে বছর পার হলেও তা আর তৈরি হয় না। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মর্গে বিনা টাকায় ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা। কিন্তু চাহিদামতো টাকা ছাড়া লাশ বা প্রতিবেদন কোনোটাই এখানে পাওয়া যায় না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরির বিলম্বের কারণে বদলে ফেলা হতে পারে মৃত্যুর আসল কারণ। ময়নাতদন্ত থেকে প্রতিবেদন দেয়ার দীর্ঘ সময়ের ফাঁকে প্রভাবিত হতে পারেন চিকিৎসক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও। বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগীরা টাকার বিনিময়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বদলে দেয়ার অভিযোগ তুলে এলেও এসব বিষয়ে ভ্রূক্ষেপহীন মর্গের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, পিবিআর বিধি অনুযায়ী ময়নাতদন্ত শেষে লাশের সঙ্গে পুলিশ সদস্য বা কনস্টেবলের কাছে হস্তান্তর করা কার্বন কপিটিই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট। কিন্তু বিস্তারিত রিপোর্ট দেয়ার কথা বলে তাতে বিলম্ব করা হয়। এই বিলম্বের মধ্যেই ঘটতে পারে অঘটন। বিধি অনুযায়ী পোস্টমর্টেম রিপোর্ট একটিই। বিস্তারিত রিপোর্ট বলে আইনে বা বিধিতে কিছু নেই। ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন থানার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, অজ্ঞাতপরিচয়ের লাশের পুলিশ ছাড়া আর কোনো স্বজন থাকে না। এজন্য প্রতিবেদন পেতে কারও তদবিরও থাকে না। কাউকে ‘খুশি’ করাতেও কেউ যায় না। এতে ময়নাতদন্ত হওয়ার পর বছর পার হলেও প্রতিবেদনটা আর তৈরি হয় না। মামলার তদন্তও এগোয় না। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন ও টকসিকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সেলিম রেজা বলেন, টাকার জন্য ময়নাতদন্ত আটকে রাখার অভিযোগটা তাদের সব সময়েই শুনতে হয়। কারণ একটা হত্যাকাণ্ডে বাদী এবং আসামি দুটি পক্ষ থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন কিন্তু একজনের পক্ষে যায়। সে ক্ষেত্রে অপর পক্ষ নানা অভিযোগ করতেই পারে। এর পরও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ