• শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
বান্দরবানে ছাত্রশিবির এর ৪৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত, রুমায় সাচিংপ্রু জেরী ও জাবেদ রেজা’কে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল মহালছড়ি থানা পুলিশের বিশেষ অভিযান, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ১ কর্মী আটক আওয়ামীলীগের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে মহালছড়ি ও মাইসছড়ি বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল মহালছড়িতে সামাজিক সংস্কার আন্দোলনের ব্যানারে শীতার্তদের কম্বল বিতরণ রংপুরে ২য় বারের মতো আয়োজিত হয়ে গেলো ” কিরন পেজেন্টস এন,ইউ,এস,ডি,এফ দক্ষতা উন্নয়ন সম্মেলন ২০২৫ বান্দরবানে নানান আয়োজন চলছে জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা ফের স্থলমাইন বিস্ফোরণে নাইক্ষংছড়িতে এক কিশোরের পা উড়ে গেল শেষ হলো বান্দরবান-র  জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট মহালছড়িতে সরস্বতী পূজামণ্ডপ পরিদর্শন ও আর্থিক উপহার প্রদান উপজেলা বিএনপির লামায় নবাগত ইউএনওর সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় নানা আয়োজনে রাজস্থলীতে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত

ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ, হাসপাতালে শয্যা সংকট

মাসুদ রানা, স্টাফ রিপোর্টার / ১৪১ জন পড়েছেন
প্রকাশিত : শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন শত শত ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের প্রচণ্ড চাপ বাড়ছে। এতে শয্যা সংকটে অনেকেই চিকিৎসা নিতে এসে ফেরত যাচ্ছেন। এ ছাড়া চিকিৎসায় অবহেলারও অভিযোগ উঠছে। সব মিলিয়ে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৪৪৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সরকারিভাবে এই সময়ের মধ্যে মৃত্যুর কোনো তথ্য না থাকলেও জানা গেছে, এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তাশফিন আহনাফ নামে ছয় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাশফিন আরটিভি অনলাইনের শিফট ইনচার্জ আবুল হাসানের ছেলে। তার অভিযোগ, সময়মতো আইসিইউ পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ছাড়া চিকিৎসাও অনেক দেরি করে শুরু করা হয়েছে।

এবার পূর্বের তুলনায় শিশুদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের নিচতলার ২ নম্বর ওয়ার্ড ডেঙ্গুরোগীদের জন্য ডেডিকেটেড থাকলেও রোগীর চাপে অন্য ওয়ার্ডেও ডেঙ্গুরোগী ভর্তি করা হচ্ছে।

সরেজমিনে শিশু হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে বেড আছে ৪২টি। সব বেডেই এখন রোগী ভর্তি। এখন নতুন ডেঙ্গুরোগীদের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হচ্ছে। এরপরও রোগীর চাপ থাকায় যেখানেই বেড খালি হচ্ছে সেখানেই ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে। শুক্রবার দুপুরে রাজধানী শ্যামলীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সামনে রোগীর অভিভাবকরা শিশুদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে উৎকণ্ঠায় সময় পার করছিলেন। ২ মাস ১৭ দিন বয়সী শিশু আলিফের মুখে অক্সিজেন মাস্ক। নানীর কোলে ছটফট করছিল শিশুটি।

মুমূর্ষু শিশুটির বাবা মো. রাসেল বলেন, ছেলের নিউমোনিয়া হওয়ায় ১০ দিন আগে চাঁদপুর থেকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। চিকিৎসকরা জানান, আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন। সেদিন শয্যা না থাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি। খরচ মেটাতে না পারায় ফের এখানে আসছি। কিন্তু আজও আইসিইউ ফাঁকা নেই বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এই হাসপাতালে শুধু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র নয়, সাধারণ শয্যাও খালি নেই। এখন কোথায় যাব সেটিও বুঝতে পারছি না।

শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু রোগীর চাপে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। ভর্তি হতে না পেরে অনেকেই ফিরে যাচ্ছে। শিশুদের আইসিইউ সাপোর্ট পিআইসিইউ ও এইচডিইউতেও শয্যা খালি নেই। বাধ্য হয়েই অন্য হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অন্য হাসপাতালে মেঝেতে আসন পেতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হলেও শিশু হাসপাতালে তা সম্ভব নয়। ফলে যত বেড আছে তার বেশি রোগী ভর্তি করা সম্ভব হয় না। এখন প্রতিদিন রোগীর চাপ বাড়ছে। কিন্তু আসন সংকটে তাদের ভর্তি করানো যাচ্ছে না। আমরা ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড ডেঙ্গু রোগীদের জন্য স্ট্যান্ডবাই রেখেছি। প্রতিনিয়ত রোগী বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে এসব ওয়ার্ড ডেঙ্গুরোগীদের জন্য ডেডিকেট করা হবে।

এদিকে শিশু হাসপাতালের মতো একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও। শয্যা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা।

হাসপাতালটির ৩১৩ নম্বর শিশু ওয়ার্ডের ২৩ নম্বর বিছানায় ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি আছে আট বছর বয়সী দুই শিশু নাহিম ও সাজিদ। শয্যা না পাওয়ায় বেড ভাগাভাগি করে থাকতে হচ্ছে তাদের। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসায় চিকিৎসকদের বেশ উদাসীনতা রয়েছে বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেন শিশু নাহিমের বোন।

শুক্রবার ৩১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তির জন্য পাঁচজন রোগীকে অপেক্ষা করতে দেখা দেখা যায়। তাদের মধ্যে পাঁচ দিনের নবজাতক ও এক বছর তিন মাস বয়সী মুমূর্ষু শিশু ছিল। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, শুরুর দিকে রোগী কম থাকলেও এখন শিশুদের দুটি ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু আক্রান্তদের ভর্তি করা হচ্ছে। বড়দের জন্য ষষ্ঠতলায় দুটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড করা হয়েছে। শয্যা সংকটে শিশুদের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যেভাবে রোগী বাড়ছে এমনটা চলতে থাকলে আরও বিছানা লাগবে। চিকিৎসক অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, দুপুরে শিফট পরিবর্তন হওয়ায় এমনটি হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ জ্বরসহ নানা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন। কিন্তু ডেঙ্গুর ভিড়ে অন্য রোগীদের সহজে ঠাঁই মিলছে না। আবার হাসপাতালের অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা। এমন প্রেক্ষাপটে রোগীদের মানসম্মত সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ বাড়বে। তাই ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য নির্দেশনা দিলেই হবে না। সেটি কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেটিও দেখতে হবে। একইসঙ্গে এডিস মশা নিধনে সব দপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

ডেঙ্গুর উপসর্গ :
ডেঙ্গুর প্রধান উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। তবে আগে যেমন ডেঙ্গু হলে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর ওঠে যেত এবং তিন দিন থাকত। এখন দেখা যাচ্ছে— একদিনেই জ্বর হালকা মাথাব্যথা অথবা ডায়রিয়া দিয়ে শুরু হচ্ছে ডেঙ্গু। এ ছাড়া ডেঙ্গুতে ব্যথা বেশি হয়। অনেকের এত বেশি হয় যে এটাকে হাড় ভাঙার ব্যথার (ব্রেকিং বোন ডিজিস) সঙ্গে তুলনা করে। ডেঙ্গুতে চোখের পেছনে (রেট্রাঅরবিটাল পেইন) হয়। মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, পেটের সমস্যা, পেটব্যথা— এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়ে নেবেন।

ডেঙ্গুর চিকিৎসা :
অন্যান্য জ্বরের মতো প্যারাসিটামল দিয়ে জ্বর নামিয়ে রাখতে হবে। জ্বর নামিয়ে ১০০ রাখলেই চলবে। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার। যেমন ডাবের পানি, বার্লি, ওরস্যালাইন, বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করতে হবে। কয়েকদিন তিন লিটার করে পানি পান করলে ভালো হয়। প্যারাসিটামল ও পানিই ডেঙ্গুর আসল চিকিৎসা। জ্বরের সময় ক্ষুধামন্দা হয়, বমিবমিভাব লাগে। এসময় ফলের রস খেলে অল্পতে বেশি ক্যালরি পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবারও খেতে হবে। ডেঙ্গু পজেটিভ হলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো বাসায় বিশ্রাম নেবেন। যদি মনে করেন কোনো খাবার খেতে পারছেন না অথবা পেটে তীব্র ব্যথা বা ডায়রিয়া হচ্ছে তা হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হবেন।

সতর্কতা :
ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে বাসাবাড়ি বা অফিসের আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কোনো বিকল্প নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে। বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেখানে পানি জমে থাকতে পারে, যেমন ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। মশা নিধনের স্প্রে, কয়েল, ম্যাট ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করে ঘুমাতে হবে।

পার্বত্যকন্ঠ নিউজ/এমএস 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ