প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-২ হাফিজুর রহমান লিকুর ছদ্মবেশ ধারণ ও মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে প্রতারণার দায়ে বাবা-ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা সরকারি চাকরিজীবীদের পদোন্নতি, বদলি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল।
তারা হলো জাহিদুর রহমান খন্দকার (৪১) ও তার বাবা মজিবুর রহমান খন্দকার (৭৩)। এর মধ্যে ছেলে জাহিদুর রহমান সব প্রতারণার মূলহোতা।
রবিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ। এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোড থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি জানায়, ইতোমধ্যে গ্রেপ্তাররা পদোন্নতির জন্য বেশ কিছু ফাইল তৈরি করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব পদে পদোন্নতি, অতিরিক্ত মহাপরিচালক থেকে মহাপরিচালক পদে পদোন্নতি (বাংলাদেশ রেলওয়ে), সিনিয়র সহকারী পরিচালক থেকে উপপরিচালক পদে পদোন্নতি (পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন), পুলিশ ইন্সপেক্টরকে থানায় ওসি হিসেবে পদায়ন ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে নিয়োগ।
গ্রেপ্তার জাহিদুর রহমানের বহুরূপী ছদ্মবেশ:
জাহিদুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-২ হাফিজুর রহমান লিকুর ছদ্মবেশসহ বেশ কয়েকটি ছদ্মবেশ ধারণ করত। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় শ্রমিক লিগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানার বিএম ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি। তার কাছ থেকে অস্ট্রেলিয়ার ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ভুয়া এনআইডিসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ভুয়া পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে ভুয়া নিয়োগপত্র, মাদক গ্রহণের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম ও চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
জাহিদুর রহমান খন্দকার ইংরেজি মাধ্যমে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ও-লেভেল পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। একসময় পড়ালেখা বাদ দিয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তার পর থেকে বিভিন্ন রকম প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে থাকেন। তার বাবা মজিবুর রহমান বিভিন্ন ছদ্মনামে প্রতারণা করে থাকেন।
তিনি নিজেকে বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর বলে পরিচয় দেন। এ ছাড়া তিনি ব্যবসায়ী, হোমিওপ্যাথি ডাক্তার, পিএইচডি ডিগ্রিধারী বলে পরিচয় দেন।
যেভাবে প্রতারণা করেন তারা:
দুই মাস আগে থেকে গ্রেপ্তার জাহিদুর রহমান খন্দকার প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-২ হাফিজুর রহমান লিকুর ছদ্মবেশ ধারণ করে তার নিজের বাবার সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেন। তার বাবা মজিবুর রহমান খন্দকারকে বিশ্বাস করান প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-২ হাফিজুর রহমান লিকুর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং এপিএস-২-এর সঙ্গে তার বাবা মজিবুরকে পরিচয় করিয়ে দেবেন। তারপর একটি ভুয়া নম্বর থেকে সে নিজেই তার বাবার সঙ্গে এপিএস-২-এর পরিচয় দিয়ে পরিচিত হন এবং তার বাবাকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করার আশ্বাস প্রদান করেন। এতে মজিবুর প্ররোচিত হয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে এপিএস-২-এর তদবিরের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে চাকরিতে নিয়োগ, বদলির আশ্বাস, পদোন্নতি ইত্যাদির লোভ দেখিয়ে প্রতারণা শুরু করেন এবং তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন এবং আত্মসাৎ করেন।
তাদের বিরুদ্ধে বিস্তারিত জানতে তদন্ত চলছে। সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা হয়েছে বলে জানায় ডিবি।
পার্বত্যকন্ঠ নিউজ/এমএস