সাইফুর রহমান পারভেজ, গোয়ালন্দ(রাজবাড়ী)
সম্প্রতি নানা অভিযোগ তুলে ধরে সমকাল,কালের কন্ঠ, আমাদের সময়, জাগো নিউজ, রাজবাড়ী কন্ঠ সহ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা দিতে রোববার দুপুরে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র মো. নজরুল ইসলাম মন্ডল সংবাদ সম্মেলন করেন।
প্রয়োজনীয় তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে তিনি অভিযোগের ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। তিনি প্রকাশিত সংবাদ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবী করেন। এর মাধ্যমে তার মানহানি এবং পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
রোববার (৯ জুলাই) দুপুর ১২টায় গোয়ালন্দ পৌরসভা মিলনায়তনে পৌরসভার আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম মন্ডল, পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) মো. রুহুল আমিন, নির্বাহী প্রকৌশলী ফেরদৌস আলম খান, প্যানেল মেয়র নাসির উদ্দিন রনি, দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলামসহ পৌর পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
চার পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য তুলে ধরে মেয়র নজরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কথিত সভাপতি মো. শহিদ শেখ সম্প্রতি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকসহ দুদক কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ করেন। কিন্তু তিনি আদৌ যুবলীগের কোথাও কোন পদে নেই।
তার করা অভিযোগগুলো হলো গোয়ালন্দ বাজার প্রধান সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ না করেই বিল উত্তোলন, কাঁচা বাজারের ১০ লাখ টাকার দরপত্র ওঠলেও ৩ লাখ টাকায় কমানো, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সোলারষ্টীক লাইট স্থাপন করে অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর শাহাদৎ বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মাত্র ৫ কেজি জিলাপি দিয়ে ৬৫ হাজার টাকা বিল উত্তোলন প্রভৃতি।
কিন্তু উল্লেখিত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন,মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত।
মেয়র জানান, সম্প্রতি পৌর জামতলায় উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলামের সাড়ে ৮ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে শহিদ শেখ সেখানে ঘর তোলার কাজ শুরু করেন।
হাফিজুল ইসলাম পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ করলে পৌরবিধি অনুযায়ী নোটিশ দিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়। কিন্তু নোটিশ অমান্য করে কাজ করায় স্থানীয় কাউন্সিলরসহ আ.লীগ নেতৃবৃন্দকে সাথে করে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর থেকে সে আমার বিরুদ্ধে সংক্ষুদ্ধ হয়ে একের পর এক অভিযোগ করতে থাকেন।
মেয়র বলেন, গোয়ালন্দ বাজার প্রধান সড়কের কার্পেটিং কাজ শেষ হলেও অর্থ সঙ্কটে ঠিকাদারকে একটি টাকাও দেওয়া হয়নি। তাহলে টাকা তুলে আত্মসাৎ করলাম কিভাবে? কাঁচা বাজারের টেন্ডার ১০ লাখ টাকা উঠলে ওই ব্যক্তিকেই হাটটি দেয়া হয় । ৭ লাখ টাকায় পছন্দের লোককে দেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন । কবরস্থান ও শশ্মানে প্রকল্পের মাধ্যমে সোলার লাইট স্থাপন করে যথাযথভাবে বিল প্রদান করা হয়।
দীর্ঘদিনের জড়াজীর্ণ পৌরসভার মেয়রের কক্ষ, অন্যান্য কর্মকর্তাদের কক্ষ, সভাকক্ষসহ মিলনায়তন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আধুনিক ডেকোরেশনের কাজ করা হয়েছে। এখানে যে টাকা খরচ হয়েছে তার থেকে আরো কম টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদৎ বার্ষিকীতে কুরআনখানি, দোয়া মাহফিল শেষে সকলের মাঝে খিচুরি বিরতন করা হয়। এতে প্রায় ২৬ হাজার টাকা ব্যায় হয়। মাত্র ৫ কেজি জিলাপি দিয়ে ৬৫ হাজার টাকা উত্তোলনের কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। জিলাপি দিয়ে তিনি এ পর্যন্ত কোন অনুষ্ঠান করেন নি।
মেয়র আরো জানান, অভিযোগকারী শহীদ থ্রি ষ্টার প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি। তার বিরুদ্ধে ওই সংস্হার অসহায় প্রায় ৫’শ প্রতিবন্ধী সদস্যের সঞ্চিত সাড়ে ৪লাখ টাকা আত্মসাৎ ও এক নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে তার বিচার দাবিতে গত বছর ক্ষুদ্ধ সদস্যরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অনেক প্রতিবন্ধীকে সরকারী ঘর পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা গ্রহন ও আত্মসাতের অভিযোগ আছে। এছাড়া তিনি এসএসসি’র ভুয়া সনদ দিয়ে আনছার বাহিনীতে চাকরি নেন। পরবর্তিতে ধরা পড়ার পর সে চাকরিচ্যুত হয়।
এ সকল ক্ষেত্রে প্রতারিত সদস্যরা উপজেলা প্রশাসন, গোয়ালন্দঘাট থানা এবং পৌরসভায় অভিযোগ করেন।
মূলত আমি তার জমি দখল কাজে বাঁধা দিলে একটি কুচক্রী মহলের সহযোগিতায় সে আমার বিরুদ্ধে দুদকসহ বিভিন্ন স্থানে মনগড়া সব অভিযোগ দেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সে সব অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করেই কয়েকটি পত্রিকা ও অনলাইনে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মেয়র জানান।
অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে মো. শহিদ শেখ দাবী করেন, প্রতিটি অভিযোগের প্রমানাদি তার কাছে আছে। তবে দেখাতে বললে তিনি দেখাতে পারেননি। প্রতিবন্ধীদের টাকা আত্মসাৎ প্রসঙ্গে আদালত থেকে তার পক্ষে রায় হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
পার্বত্যকন্ঠ নিউজ/এমএস