গণ অধিকার পরিষদের নেতা এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন- এমন খবর বাংলাদেশি গণমাধ্যমে বাপকভাবে চাউর হলেও বরাবরই তা অস্বীকার করেছেন তিনি।
এ নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে ক্ষোভ ঝেড়েছেন এক সময়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুর। তবে এবার মেন্দি এন সাফাদি সরাসরি বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দিলেন বিস্ফোরক তথ্য।
ওই টিভি চ্যানেলের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে সাফাদি জানিয়েছেন, গত ডিসেম্বরে দুবাইয়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা হয় নুরের। সাক্ষাতে জাতীয় নির্বাচনে জিততে আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্য নুর সাহায্য চান সাফাদির কাছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী মানুষকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে, ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক জোরদারের প্রতিশ্রুতিও দেন নুর।
নুরের সঙ্গে কোথায়, কতবার বৈঠক হয়েছে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন সাফাদি। বলেন, ‘গত ২৮ ডিসেম্বর বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত দুবাইয়ের সিটি সেন্টারের স্টারবাকস কফি শপে ৩ ঘণ্টা ধরে নুরের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়। নুর আমার কাছে নিজেকে বাংলাদেশের জনপ্রিয় নেতা হিসেবে উপস্থাপন করেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জিততে আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্যও সাহায্য চান।’
বৈঠকে কী বিষয়ে কথা হয়েছে জানতে চাইলে সাফাদি আরও বলেন, ‘তিনি (নুর) নিজের বিষয়ে নানা কথা বলেছেন। নিজের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে বলেছেন যে, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে; তিনি আগামী নির্বাচনে জয় পেতে পারেন। কিন্তু এজন্য তার আরও সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ প্রয়োজন।’
সাফাদি জানান, ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক জোরদারের প্রতিশ্রুতিও দেন নুর। তার মতে, বাংলাদেশের মানুষ ফিলিস্তিনের প্রচারণায় বিশ্বাস করে। সেখানে নুর ইসরাইলের কথা শুনতে আগ্রহী। সে কারণেই নূরের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক হন তিনি।
বৈঠকে, ইসরায়েলের মানুষের প্রতি নুর সহানুভুতিশীল বলে তুলে ধরেন। এ ছাড়া ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলোকে তিনি সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করেন বলে জানান ইসরাইলের সাবেক এই গোয়েন্দা।
সাফাদি বলেন, ‘বৈঠকের পর আমরা আবার দেখা করতে সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু তিনি (নুর) যা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা তিনি করেননি। তাই আমরা থেমে যাই।’
নুরের সঙ্গে দেখা করার কারণ জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের অনেক মানুষের সঙ্গেই দেখা করেছি। গত কয়েক বছরে আমি হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে দেখা করেছি, তারা সবাই আমার সহযোগিতা চেয়েছে। আমার বন্ধু শিপন কুমার বসু আমাকে ফোন করে তার (নুর) সঙ্গে দেখা করতে বলেন।
তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, নুর বাংলাদেশের একজন নতুন রাজনীতিবিদ এবং তার আদর্শও আমার কাছাকাছি। সে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বাঁচাবে, তরুণদের আশা দেবে। শিপন কুমার বসু আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় আমি নুরের সঙ্গে দেখা করতে এবং তার কথা শুনতে রাজি হই।’
‘আমি তার দৃষ্টিভঙ্গি পছন্দ করেছিলাম, কারণ তিনি ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন। নুর ইসরাইল ও বাংলাদেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু আমাদের বৈঠকের পর মিডিয়ায় (বাংলাদেশের) যা ঘটেছিল এবং সেই পরিস্থিতিতে নুর যে ভূমিকা নিয়েছেন; এরপর আমি আর তাকে বিশ্বাস করি না,’ যোগ করেন সাফাদি।
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি যদি আমার সঙ্গে দেখা করেন এবং পরে সেই বৈঠক নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেন, তাহলে আমি আর আপনার সঙ্গে দেখা করব না। তাই নুর চাইলেও আমি তার সঙ্গে আর দেখা করব না, কারণ সে অবিশ্বস্ত।’
‘তিনি (নুর) যখন আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তিনি অনেক কিছু বলেছিলেন। তিনি যা বলেছিলেন তা থেকে আমি ভেবেছিলাম, তিনি এমন একজন নেতা হতে পারেন যিনি বাংলাদেশকে ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে পারেন। তার সঙ্গে দেখা করে আমি ভেবেছিলাম, এই যুবক ধাপে ধাপে অনেক দূর যেতে পারে এবং ভবিষ্যতে কিছু হতে পারে; যিনি আমাদের (বাংলাদেশ ও ইসরাইল) মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারেন। কিন্তু মিডিয়ায় তার বক্তব্য শোনার পর আমি নিশ্চিত নই যে, তিনি শক্তিশালী মতাদর্শের কোনো নেতা হতে পারবেন কিনা,’ বলেন সাফাদি।
রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার এই এজেন্ট বলেন, ‘আপনারা যদি ভালো রাজনীতিবিদ হতে চান, আপনার দেশ ও জনগণের কাছে মিথ্যা বলবেন না।’
তিনি আরও বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণকে ভালোবাসি এবং চাই তারা ইসরাইল ও বিশ্বের সঙ্গে শান্তিতে থাকুক।
যা বলেছেন নুর
ইসরাইলি কোনো নাগরিক ও মোসাদ এজেন্টের সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়নি বলে দাবি করেছেন নুরুল হক নুর।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
এ সময় নুর বলেন, ‘আমার সঙ্গে মেন্দি এন সাফাদির বৈঠকের অভিযোগ যারা তুলছে, তারা পারলে একটি ভিডিও দেখাও। আমি স্পষ্ট বলেছি, মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে আমার কোনো বৈঠক হয়নি। সাফাদির সঙ্গে সরকারের নেতাকর্মীরা বৈঠক করেছেন। আমি দেশের বাইরে গেছি। আমার সঙ্গে অসংখ্য মানুষ ছবি তুলেছে। কে কোথা থেকে কোন ছবি তুলেছে, তা আমি জানি না। এখন তারা ছবি নিয়ে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন, সেটা এডিটেড ছবি বলে আমার মনে হয়েছে।’
এছাড়াও গণমাধ্যমে মেন্দির সঙ্গে সাক্ষাতের খবরের বিষয়ে নুর বলেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। এই অভিযোগ ছয় মাস আগে করা হয়েছিল। তখনো কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলে ভাঙন ধরাতে, দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমার ধারণা, কেউ টাকা-পয়সা দিয়ে লবিং-তদবির করে একটা মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেয়াতে পারেন। আমি যতদূর জানি, তিনি (সাফাদি) নিজেও একটি লবিস্ট ফার্ম পরিচালনা করেন।’
পার্বত্যকনঠ নিউজ/এমএস